1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কর্মসংস্থানের চাল-চরিত্র-চেহারা বদলে যাচ্ছে

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
১ মার্চ ২০২৪

কর্মসংস্থানের বাজারের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি এমন বদলে যাচ্ছে যে বলার নয়৷ এমন সব নতুন নতুন ক্ষেত্রে চাকরির আকাশছোঁয়া চাহিদা হচ্ছে যা, আমরা আগে কখনো ভাবতে পারিনি৷

ভারতে পরিষেবা ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ কাজ করেনছবি: Thomas Imo/photothek/picture alliance

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের কর্মসংস্থানের বাজারে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে ও হচ্ছে। নতুন নতুন ক্ষেত্রর দরজা খুলে যাচ্ছে। যেমন ধরুন, ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স(কৃত্রিম মেধা) ইঞ্জিনিয়ারদের। তারা কত বেতন পায় জানেন? মাসে তিন থেকে ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, ঢুকেই তিন লাখ টাকা বেতন পেয়ে যাচ্ছে তারা।

যেমন ধরুন ইনফ্লুয়েন্সার। বছর কয়েক আগেও ইনফ্লুয়েন্সারদের সম্পর্কে বিশেষ কেউ কিছু জানতেন না। এখন তাদের চাহিদাও কম নয়। ইনফ্লুয়েন্সার মানে সামাজিক মাধ্যমে যাদের ১০ থেকে ৫০ হাজার ফলোয়ার আছে। তারা একটা পোস্ট করেই প্রায় ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পান। আর তাদের দিয়ে কিছু পোস্ট করালে কম করে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে সেই পোস্ট মাত্র ২৪ ঘণ্টা তাদের সামাজিক মাধ্যমে থাকবে। বেশি সময় রাখতে গেলে টাকা আরো বেশি দিতে হবে।

ইউটিউবাররাও তো পিছিয়ে নেই। ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে তারা দিব্যি কামাচ্ছেন। ২০২৩ সালের হিসাব, ভারতে ২৯ লাখ ইউটিউবার আছেন, যাদের ফলোয়ারের সংখ্যা ১০ হাজার বা তার বেশি। তারা মাসে ১০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। আর এক লাখ ফলোয়ার হলে তো ৭৫ হাজার থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মাসে আয় করা যায়। ২০২৩ সালে এক লাখ বা তার বেশি ফলোয়র আছে এমন ইউটিউবারের সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ। এই সংখ্যাটা বছরে ২২ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে ২০২৪ সালে তা প্রায় পাঁচ লাখের কাছে চলে যাবে।

তাই বলছিলাম, চাকরির বাজারের চাল-চরিত্র-চেহারা বদলে গেছে। ভারতে ২০২৩ সালে স্টার্ট আপ কোম্পানির সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার। সংখ্যার হিসাবে ভারত বিশ্বের তিন নম্বরে। অ্যামেরিকা ও চীনের পরে। ২০২৩ সালে ভারতে ১১১টি স্টার্ট আপ কোম্পানির প্রতিটির মূল্য ছিল একশ কোটি ডলারের বেশি। ভারতের স্টার্ট আপ সংস্থায় ১২ লাখ ভারতীয় কাজ করছে। এই যে দিল্লির কলেজগুলিতে স্নাতক হওয়ার পরই পড়ুয়ারা টপাটপ চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, তার পিছনে স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলির অবদান কম নয়।

ক্রিকেট খেলে রোজগারের বিষয়টা দেখুন।  রঞ্জি ট্রফিতে খেললে প্রতিদিন ৩৫ হাজার টাকা করে পাওয়া যায়। প্রথম ১৬ জন থাকলে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া যায়। আর যদি ৪০টি রঞ্জি ম্যাচ খেলে নেয়া যায়, তাহলে প্রতিদিন ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ২১ থেকে ৪০টি খেললে ৫০ হাজার টাকা দিনে।  শুধু মুম্বইতেই ক্রিকেট খেলে তিন হাজার মানুষ মাসে অন্তত ২৫ হাজার টাকা রোজগার করে। যত ভালো খেলবে, তত রোজগার। কলকাতার প্রথম ডিভিশন ক্লাবে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে রোজগার করা যুবকদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।

সরকারি হিসাব বলছে, ভারতে পরিষেবা ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ কাজ করেন। পরিষেবা ক্ষেত্র বলতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিপিও, আর্থিক সংস্থা, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট, পর্যটন, মিডিয়া, ই কমার্স ইত্যাদি। ভারতে এক লাখ ৮৭ হাজার এনজিও আছে। প্রতিটি এনজিওতে ন্যূনতম সাতজন কর্মী থাকতেই হবে। ফলে সেখানেও প্রচুর মানুষ কাজ করেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জনপ্রিয় কোর্সের নাম সোস্যাল সার্ভিস। এই কোর্স করে কর্মসংস্থান পেতে অসুবিধা হয় না। তাই এর চাহিদাও প্রচুর।

তাই বলছিলাম, চিরাচরিত ধারণা নিয়ে কর্মসংস্থানের বিষয়টি বোঝা যাবে না। যত নতুন প্রযুক্তি আসছে, ততই কাজের, চাকরির চরিত্র বদল হচ্ছে। কনটেন্ট রাইটারের কাজ করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করা যায়, তা কে ভেবেছিল? দিল্লির প্রায় প্রতিটি কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্লেসমেন্ট সেল রয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের চাকরি। যে কলেজের প্লেসমেন্ট সেল যত ভালো, তার কদর তত বেশি। কলেজে পড়তে পড়তেই একাধিক ইন্টার্নশিপ করে ফেলছে পড়ুয়ারা। এখানেও দিল্লির কলেজগুলি সবচেয়ে আগে আছে।

আমাদের ছেলেবেলায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যেরকম অনীহা দেখেছি, এখন তার সম্পূর্ণ বদল হয়েছে। প্রচুর মানুষ ব্যবসা করছেন। দিল্লিতে তো জমি, বাড়ি ভাড়া ও কেনাবেচার দালালি করে বেশ কয়েক হাজার মানুষ বেঁচেবর্তে আছেন।

সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশন(এনএসএসও) জানাচ্ছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে বেকারত্বের হার ছয় দশমিক আট শতাংশ। এটাও আগামী মাসগুলিতে কমে যেতে পারে। কারণ বলা হয়েছে, এবার ভালো বৃষ্টি হয়েছে। ফসলের উৎপাদন বেশি হবে। সেক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা বাড়বে। এর পাশাপাশি উজ্জ্বল দিক হলো, মুদ্রা যোজনায় ঋণ নিয়ে ছোট ব্যবসা করার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। স্টার্ট আপ কোম্পানির সংখ্যা সমানে বাড়ছে। স্বনিযুক্ত মানুষের সংখ্যা  এক বছরে দেড় শতাংশ বেড়ে গেছে।

ছেলেবেলায় দেখেছি, পাড়ার মোড়ে মোড়ে বেকার যুবকরা সারাদিন আড্ডা মারছে। কলকাতার সেই বিখ্য়াত রকের আড্ডা প্রায় ইতিহাস হয়ে গেছে। ছোট-বড় কাজের সংখ্যা ও সুয়োগ দুইই অনেক বেড়েছে। বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ ভারতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিপুল বদল হয়েছে। 

ইউটিউব থেকে লাখ টাকা কামাবেন যেভাবে

03:32

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ