করোনাকালে ভারতের একাধিক রাজ্যে কোরবানি ঈদ পালন করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত, ঘরে বসে নামাজ পড়তে হবে ও অনলাইনে পশু কিনতে হবে। উত্তরপ্রদেশে বাজারই বসছে না।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ঈদ নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করেছে মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে সরকার। নির্দেশে বলা হয়েছে, করোনার সময়ে কোরবানি ঈদ পালন করতে হবে ঘরে থেকেই। মসজিদে গিয়ে নয়, বাড়িতেই নামাজ পড়তে হবে। পশুর বাজারও বসবে না। অনলাইনে পশু কিনতে হবে। নির্দেশে বলা হয়েছে, করোনার কারণে এ বার প্রতীকী ঈদ পালন করতে হবে।
করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে ভারতের এক নম্বরে আছে মহারাষ্ট্র। তাই সেখানে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কিন্তু সরকারের এই নির্দেশ কংগ্রেস মানতে পারেনি। কংগ্রেসও এই সরকারের শরিক। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতা নাসিম খান মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন। কংগ্রেস নেতার আর্জি, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করে ঠাকরে এ ব্যাপরে সিদ্ধান্ত নিন। কোরবানি ঈদ প্রতীকীভাবে পালন করা সম্ভব নয়। আর সাধারণ মনুষের পক্ষে অনলাইনে পশু কেনা সম্ভব নয়।
মুম্বইয়ে দেওনারে সব চেয়ে বড় পশু বাজার বসে। কিন্তু এ বার করোনার কারণে সব বাজার বন্ধ। ফলে সেখানে পশু পাওয়া যাবে না। অন্য বাজারও বসছে না। রাজস্থান থেকে কিছু পশু বিক্রেতা পশু নিয়ে মুম্বই গিয়েছেন। তাঁরা গুদাম ভাড়া করে পশু রাখছেন। ফলে যে ছাগল ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, তা ৩০ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
কাল্পনিক সাহেবের কোরবানি ভাবনা
কাল্পনিক সাহেব ঢাকায় থাকেন৷ মধ্যবিত্ত মানুষটি ইতিমধ্যে করোনায় কাহিল হয়ে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় সামনে আসছে কোরবানির ঈদ৷ তবে কষ্টের মধ্যেও সুখ খোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি৷ কারণ, এটাই তার জীবনদর্শন৷
ছবি: digitalhaat.net
করোনায় কাহিল
অন্য অনেক মধ্যবিত্তের মতোই কাল্পনিক সাহেবের অবস্থাও করোনায় সঙ্গিন হয়ে উঠেছে৷ পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকলেও সবাইকে তা বুঝতে দিতে চান না৷ তিনি যে বাঙালি মধ্যবিত্তদের একজন! লোকে কী বলবে, সেটাই তার কাছে বড়৷
ছবি: bdnews24
আসছে কোরবানি
গতবছর অংশীদারদের সঙ্গে গরু কিনতে হাটে গিয়েছিলেন৷ লোকজনকে যেন বলতে পারেন সেজন্য গরুর ভাগা কিনতে সাধ্যের একটু বেশিই খরচ করেছিলেন৷ তাই গরু কিনে ফেরার পথে বুক ফুলিয়ে পথচারীদের গরুর দাম জানাতে জানাতে বাসায় ফিরেছিলেন৷ কিন্তু এবার কী হবে? ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: bdnews24.com
কোরবানি দেবো, নাকি দেবো না
কাল্পনিক সাহেবের আর্থিক অবস্থা এখন এমন যে, কোরবানি না দিতে হলেই ভালো হতো৷ কিন্তু ঐ যে মধ্যবিত্ত মন! লোকজন কী বলবে, সেটা ভেবেই ঠিক করেছেন যে, যেমন করেই হোক কোরবানি দেবেন৷ তবে এবার বেশি টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই৷
ছবি: bdnews24.com
আরেক চিন্তা
করোনার কারণে এবার ঢাকায় গাবতলী ও সারুলিয়ার দুটি স্থায়ী হাটসহ মাত্র ১২টি স্থানে হাট বসতে দেয়া হবে৷ তাই হাটে গিয়ে গরু-ছাগল কেনার চিন্তা বোধ হয় বাদ দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে অনলাইনে পশু কিনতে হবে৷ কিন্তু এর আগে কখনো অনলাইনে গরু কেনেননি কাল্পনিক সাহেব৷ তাই তিনি চিন্তিত৷ কারণ, তার মনে প্রশ্ন: অনলাইনে কেনা একটি পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেয়া সম্ভব হলেও গরুর ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন হবে?
ছবি: AP
সরকারি, বেসরকারি ওয়েবসাইট
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পশু কেনাবেচার জন্য ডিজিটাল হাট (https://foodfornation.gov.bd/qurbani2020/) চালু হয়েছে৷ এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও একটি ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net) চালু করেছে৷ বেসরকারি অনেক অনলাইন পোর্টালেও পশু কেনাবেচা হচ্ছে৷
ছবি: foodfornation.gov.bd/qurbani2020
দাম কি বেশি?
অনলাইনে গরু-ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কী বলছেন, সেদিকে খেয়াল রাখছেন কাল্পনিক সাহেব৷ এখন পর্যন্ত গরু-ছাগলের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা৷ তবে করোনার সময়ে হাটে যেতে হবে না ভেবে স্বস্তিও পাচ্ছেন অনেকে৷ তাই একটু বেশি টাকা খরচ করতেও সমস্যা নেই তাদের৷ কিন্তু কাল্পনিক সাহেবের তো আর বেশি খরচ করার সামর্থ্য নেই৷ তার কী হবে?
ছবি: digitalhaat.net
মন্ত্রীদের খবর পড়ে স্বস্তি!
একদিন তিন মন্ত্রীর অনলাইনে গরু কেনার খবর পড়ে মনে যেন কিছুটা স্বস্তি (!) পেয়েছিলেন কাল্পনিক সাহেব৷ কারণ, মন্ত্রী হয়েও একজন মাত্র এক লাখ ২৮ হাজার টাকা, বাকি দুজন মাত্র এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন৷ এর মধ্যে একজন নিজের জন্য মাত্র ২০ শতাংশ মাংস রাখতে চেয়েছেন, আর আরেকজন পুরোটাই দান করতে চেয়েছেন৷ করোনার সময়ে নিজ দেশের মন্ত্রীদের এমন বদান্যতার খবরে স্বস্তি না পেয়ে উপায় আছে! আরও জানতে ‘+’-এ ক্লিক করুন৷
ছবি: www.digitalhaat.net/faq
কেনার সময় সতর্কতা
কাল্পনিক সাহেব যেহেতু অনলাইনে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তা জানতে চান তিনি৷ ঢাকা উত্তর সিটির ‘ডিজিটাল হাট’-এর সঙ্গে সহযোগিতায় আছে ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’৷ এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলছেন, এই হাটের মাধ্যমে পশু কিনলে তার দায়িত্ব ই-ক্যাব নেবে৷ এছাড়া বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে গরু-ছাগল কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: www.deshigorubd.com
ভিন্ন অভিজ্ঞতা
করোনা সবার জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে৷ কাল্পনিক সাহেবও এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে গরু কিনতে চলেছেন৷ অভিজ্ঞতাটা যদি সুখের হয় তাহলে কে জানে ভবিষ্যতে হয়ত এটাই তার জন্য ‘নিউ নরমাল’ হয়ে উঠবে৷ সেক্ষেত্রে দাম বলে বুক ফোলানোর বিষয়টি রাস্তা থেকে ফেসবুকে চলে আসবে, এই আর কী৷ অবশ্য সেটা ভালোই হবে৷ কারণ রাস্তায় আর কয়জনকে দাম বলা যেত, ফেসবুকেতো তার চেয়ে বেশি মানুষকে জানানো যাবে!
ছবি: goruhaat.sobjibazaar.com
9 ছবি1 | 9
মহারাষ্ট্রের মতো কোরবানি ঈদ পালন নিয়ে কোনো নির্দেশিকা জারি করেনি উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু করোনার জন্য উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ শহরেই কোনো বাজার বসছে না। লখনউতে সপ্তাহান্তে লকডাউন থাকছে। লকডাউনের মধ্যে সবকিছু বন্ধ থাকছে। অন্য দিনে বাজারের দোকান থেকে কেবল বাড়িতে জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই সেখানে পশু পাওয়াই মুশকিল। যোগী সরকার আগেই নির্দেশিকা দিয়েছিল, রাস্তার ধারে কেউ কোনো পশু কাটতে পারবে না বা পশুর ছাল ফেলতে পারবে না।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমি লখনউ ও এলাহাবাদে খোঁজ নিয়েছি। লখনউ পুরো বন্ধ। এলাহাবাদে মুরগি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মটন পাওয়া দুষ্কর। সেখানেও পশুর হাট বসছে না। তাই কোরবানি ঈদ পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা যদি নাও থাকে, তা হলেও পশু পাওয়া খুবই মুশকিল।''
আসামে প্রবল বন্যা হয়েছে। ৪৫ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত। অধিকাংশ জায়গা জলের তলায়। ফলে অনেক মানুষই ত্রাণশিবিরে। অসমীয়া প্রতিদিনের প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এমনিতে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় এখন যাতায়াত করা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ঈদের কথা মাথায় রেখে ৩০ ও ৩১ তারিখ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ওই দুই দিন লোকে যাতায়াত করতে পারবেন। কিন্তু বন্যার যা অবস্থা সেখানে লোকের জীবন ও সম্পত্তি বাঁচানোটা বড় কথা। আর এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত বন্ধ বলে পশুর বাজারও বসছে না। শেষ দিন দুয়েক বসবে কি না বলা যাচ্ছে না।''
পশ্চিমবঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন এখন লকডাউন চলছে। তখন সবকিছু বন্ধ থাকে। বাকি দিনগুলিতে সব কিছু খোলা থাকে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে কোরবানি ঈদ পালনে সমস্যা হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকার এ নিয়ে এখনও কিছু বলেনি।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে কোরবানি ঈদ পালনে কোনো সমস্যা হবে না। মহীশূরে কোরবানি ঈদ পালনের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। সেখানে কংগ্রেস বিধায়ক ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কোরবানি ঈদ আগের মতোই পালন করতে পারবেন মুসলিমরা। কোনো সমস্যা হবে না।