1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা দিল্লিতে সর্বোচ্চ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

২০১৬ সালে ভারতে খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে৷ দুঃখের বিষয়, এই সব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই অল্পবয়সি৷ দেশের জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরো এসিআরবি জানায়, এ তালিকায় সবার ওপরে আছে দিল্লি৷

প্রতীকী ছবিছবি: Reuters/A. Abidi

দেশের ১৯টি মহানগরীর মধ্যে কম বয়সি অপরাধীদের সংখ্যা রাজধানী দিল্লিতেই সবচেয়ে বেশি৷ এরপর দ্বিতীয়স্থানে আছে মুম্বই৷ ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত অল্পবয়সিদের সার্বিক হার বেড়েছে ২০ শতাংশ৷ ২০১৬ সালে দিল্লি ও তার আশেপাশের এলাকায় ২৩৬৮টি অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত মোট ৪৬৭৯ জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দিল্লিতে এরা ১৪৩টি ধর্ষণ, ৩৫টি অস্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া এবং যৌন হেনস্থা, মেয়েদের পিছু নেওয়া ইত্যাদির মতো ১৩৮টি যৌন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ৷ এছাড়া ৫১টি খুন, ৮১টি খুনের চেষ্টা করার অভিযোগেও মামলা দায়ের করা হয় কিশোরদের বিরুদ্ধে৷ প্রতি বছরই এই হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে দিল্লি পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহলের চোখে দুশ্চিন্তার ছায়া৷ এইসব অপরাধমূলক কাজকর্মের পেছনে এক বড় ভূমিকা আছে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার, এমনটাই মনে করেন পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তারা৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও মারফত তুলে ধরা হয় ভোগবিলাসী জীবনযাপনের ছবি৷ সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে৷ অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়াতে সহজেই আকৃষ্ট হয় কিশোররা৷ আর সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগানোর পেছনে সক্রিয় থাকে কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের দল৷ এ সমস্ত গ্যাংস্টার ধরা পড়েও জামিন পেয়ে যায়৷ এরা প্রচুর টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে এবং মাদক খাইয়ে অল্পবয়সিদের অপরাধমূলক কাজে লাগায়৷ জালে জড়িয়ে পড়ার পর কিশোররা চায় পাড়ার মস্তান হয়ে উঠতে৷ তারা হাত পাকায় খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ ইত্যাদির মতো অপরাধে৷

দিল্লি এয়ারপোর্টে নিযুক্ত নারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় বেনিওয়াল বলেন, কিশোর অপরাধীদের বেশিরভাগ উঠে এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি থেকে৷ এইসব কিশোরদের একটা বড় অংশ স্কুল ছুট (স্কুল ড্রপ-আউট) এবং মাদকাসক্ত৷ তাই সহজে টাকা রোজগারই এর আসল কারণ৷ জাতীয় ক্রাইম ব্যুরো রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে ধরা পড়া ৪৬৭৯ জন কিশোরের মধ্যে ৩৫৩৬ জন স্কুল ড্রপ-আউট এবং ২৯৭৭ জন কিশোর তাঁদের পরিবারের সঙ্গেই থাকে৷ তিনি মনে করেন, পুলিশি ব্যবস্থাই এই ভয়ংকর সামাজিক অপরাধের একমাত্র প্রতিষেধক নয়৷ সমানভবে এগিয়ে আসতে হবে গোটা সমাজকে৷ কিশোর মন ভঙ্গুর৷ সহজ শিকার৷ তাই দরকার পারিবারিক এবং পারিপাশ্বিক সুস্থ পরিবেশ৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে বাবা-মা কিংবা অভিভাবকরা বাচ্চাদের চরিত্র গঠনের দিকে তেমন নজর দেন না৷ মা-বাবা দু'জনকেই রোজগারের ধান্দায় কাজে বেরিয়ে যান৷ এদের মধ্যে আছে দিন মজুর৷

‘অল্প বয়সিদের অপরাধ প্রবণতার মূল কারণ ভোগ্যপণ্যভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা’

This browser does not support the audio element.

গত অক্টোবরের ঘটনা৷ দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানায় দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া একজন ভালো ছাত্রকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ছাত্রটির বাবা জানান, একদিন কোচিং পড়তে গিয়ে ছেলে তাঁর বাড়িতে ফেরেনি৷ পুলিশের কাছে সে নাকি স্বীকার করে যে এলাকার এক কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের পাল্লায় পড়ে সে৷ তারা ওর মগজ ধোলাই করার পর ওকে দিয়ে একজনকে খুন করায় এটা প্রমাণ করতে যে, ঐ এলাকার মস্তান হয়ে ওঠার যোগ্যতা ওর আছে৷ দ্বিতীয়ত, পুলিশের মতে গুণ্ডাচক্র কম বয়সিদের বেছে বেছে দলে ঢোকায়৷ কারণ কিশোররা নাকি অপরাধমূলক কাজটা করতে পারে দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে এবং তাদের বিচারের সন্মুখীন হতে হয় না নাবালক বলে৷ বড়জোর তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংশোধনাগারে৷ যেমন ২০১২ সালের ৬ই ডিসেম্বর দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত একজন কম বয়সি ছেলের কোনো সাজা হয়নি৷ যেহেতু ঐ সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছরের ছয় মাস কম৷ আজও সে সংশোধনাগারে আছে৷ হালে হরিয়ানার একটি নাম-করা স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্র ঐ স্কুলেরই দ্বিতীয় শ্রেণির একটি বাচ্চাকে স্কুলের বাথরুমে গলা কেটে খুন করে৷ ছাত্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয় এখন বিচার চলছে৷ এর প্রেক্ষিতে, অতি সম্প্রতি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড রায় দেন নির্ভয়া কাণ্ডের মতো জঘন্য অপরাধে নাবালকদের অর্থাত ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি অপরাধীদেরও বিচার হবে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো৷

কিশোর বা নব্য যুবকরা কেন অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়ায় তার মনস্তাত্ত্বিক কারণ ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখ্যা করলেন বিশিষ্ট মনোরোগী চিকিত্সক ডা. আশিষ আচার্য৷ কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে এ কথাটা উনি মানতে পারলেন না৷ বললেন, আগেও হতো৷ কিন্তু মিডিয়া রিপোর্ট করতে পারতো না বলে হয়ত চাপা থাকতো৷ এখন মিডিয়া সব ঘটনা তুলে ধরছে৷ তাই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে সংখ্যাটা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ তবে অল্পবয়সিদের অপরাধ প্রবণতা মূল কারণ ভোগ্যপণ্য-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা৷ এখনকার নব্য যুব সমাজ বা কিশোর সমাজ যে কোনো জিনিস এখুনি পেতে চায়৷ অপেক্ষা করতে চায় না৷ আগেকার দিনে কাঙ্খিত বস্তু পেতে আমরা উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতাম৷ দ্বিতীয়ত, সংসারে বাবা-মা রোল মডেল – এই সিস্টেমটার বর্তমানে বড় অভাব৷ এক তো পরমাণু পরিবার৷ বাবা-মায়ের মধ্যে মিল নেই৷ পরিবারে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ কম৷ মদ্যপান বা পারিবারিক হিংসা ইত্যাদি চোখের সামনে ঘটছে৷ শৈশব ও কৈশোর যদি মসৃণভাবে না হয়, যেমন শিক্ষা-দীক্ষা-সঙ্গ ঠিকমতো না পায়, তবে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে৷

কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক ত্রুটির কারণে সমাজ বিরোধী হয়ে ওঠার একটা প্রবণতা থেকে যায়, যেটাকে বলে কনডাক্ট ডিসঅর্ডার৷ যেমন হিংস্রভাবে কাউকে মারা৷ দ্বিতীয়ত, যৌন বাসনা চরিতার্থ করার সুযোগ না পাওয়া৷ অথচ ওরা চোখের সামনে দেখছে ওরই বয়সি অন্যরা পার্টি করছে, মেয়েবন্ধুদের সঙ্গ পাচ্ছে, মেলামেশা করছে৷ একটা বঞ্চিতভাব থেকেই ঐ সব কিশোর বয়সিরা ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদির মতো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে৷

কিশোরদের অপরাধপ্রবণতার কারণ কী? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ