২০১৬ সালে ভারতে খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে৷ দুঃখের বিষয়, এই সব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই অল্পবয়সি৷ দেশের জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরো এসিআরবি জানায়, এ তালিকায় সবার ওপরে আছে দিল্লি৷
বিজ্ঞাপন
দেশের ১৯টি মহানগরীর মধ্যে কম বয়সি অপরাধীদের সংখ্যা রাজধানী দিল্লিতেই সবচেয়ে বেশি৷ এরপর দ্বিতীয়স্থানে আছে মুম্বই৷ ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত অল্পবয়সিদের সার্বিক হার বেড়েছে ২০ শতাংশ৷ ২০১৬ সালে দিল্লি ও তার আশেপাশের এলাকায় ২৩৬৮টি অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত মোট ৪৬৭৯ জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দিল্লিতে এরা ১৪৩টি ধর্ষণ, ৩৫টি অস্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া এবং যৌন হেনস্থা, মেয়েদের পিছু নেওয়া ইত্যাদির মতো ১৩৮টি যৌন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ৷ এছাড়া ৫১টি খুন, ৮১টি খুনের চেষ্টা করার অভিযোগেও মামলা দায়ের করা হয় কিশোরদের বিরুদ্ধে৷ প্রতি বছরই এই হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে দিল্লি পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহলের চোখে দুশ্চিন্তার ছায়া৷ এইসব অপরাধমূলক কাজকর্মের পেছনে এক বড় ভূমিকা আছে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার, এমনটাই মনে করেন পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তারা৷
নারীদের চলাফেরার জন্য বিপজ্জনক ৭টি শহর
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করেছে৷ ৬,৫৫০ জন নারীর উপর চালানো ঐ জরিপে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বের সাতটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থা নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
নতুন দিল্লি, ভারত
কোনো নারী যদি একা একা এই শহরটি ঘুরে বেড়াতে চান, তবে তা নাকি সম্ভব নয়৷ এই শহরে আড়াই কোটি মানুষের বাস, মানুষের বাসবাসের দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজধানী এটি৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের এক তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে যে শহরটির গণপরিবহন ব্যবস্থা কতটা অনিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোগোটা, কলম্বিয়া
নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিবহন ব্যবস্থার তালিকায় প্রথম স্থান বোগোটার৷ জরিপ বলছে, বোগোটায় ৯৬ লাখ মানুষের বাস৷ অথচ সেখানকার বাস ও ট্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ৷ বিশেষ করে রাতে কোনো নারী বাস ও ট্রেনে চলাফেরা করলে যৌন হয়রানি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন৷
ছবি: Reuters/John Vizcaino
মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো
২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস মেক্সিকোর রাজধানীতে৷ জরিপ বলছে, এই শহরে যেসব নারী গণপরিবহনে চলাফেরা করেন তাঁরা প্রায়ই মৌখিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/Edgard Garrido
লিমা, পেরু
পেরুর রাজধানী লিমায় ৬২ লাখ মানুষের বাস৷ এই শহরের এক তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে৷ ফলাফল গণপরিবহনে নারীদের চলাচল এখানে ভয়াবহ বিপদজনক৷ ছিনতাই, যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা৷
ছবি: Reuters/Enrique Castro-Mendivil
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভীষণ ত্রুটিপূর্ণ৷ গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সেখানকার সরকার৷ তাই ট্রেনে নারী ও পুরুষের আলাদা বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ অফিস টাইমে ও অফিস ছুটির সময় মিনিবাসে পকেট কাটা খুবই সাধারণ ঘটনা৷
ছবি: Ulet Ifansasti/Getty Images
কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে দুইটি বিষয়ের দিকে নজর রাখা হয়েছে জরিপে৷ প্রথমত ঐ শহরে রাতের বেলায় গণপরিবহনে নারীরা নিরাপদ কিনা এবং দ্বিতীয়ত গণপরিবহনে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন কিনা৷ মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে গণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নারীদের জন্য নিরাপদ নয়৷
ছবি: Manan Vatsyayana/AFP/Getty Images
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান ব্যাংকক৷ কিন্তু সেখানেও গণপরিবহন নারীদের চলাচলের জন্য তেমন নিরাপদ নয়৷ বাস বা ট্রেনে পকেট কাটা ও যৌন হয়রানি এখানে হরহামেশাই হয়ে থাকে৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও মারফত তুলে ধরা হয় ভোগবিলাসী জীবনযাপনের ছবি৷ সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে৷ অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়াতে সহজেই আকৃষ্ট হয় কিশোররা৷ আর সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগানোর পেছনে সক্রিয় থাকে কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের দল৷ এ সমস্ত গ্যাংস্টার ধরা পড়েও জামিন পেয়ে যায়৷ এরা প্রচুর টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে এবং মাদক খাইয়ে অল্পবয়সিদের অপরাধমূলক কাজে লাগায়৷ জালে জড়িয়ে পড়ার পর কিশোররা চায় পাড়ার মস্তান হয়ে উঠতে৷ তারা হাত পাকায় খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ ইত্যাদির মতো অপরাধে৷
দিল্লি এয়ারপোর্টে নিযুক্ত নারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় বেনিওয়াল বলেন, কিশোর অপরাধীদের বেশিরভাগ উঠে এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি থেকে৷ এইসব কিশোরদের একটা বড় অংশ স্কুল ছুট (স্কুল ড্রপ-আউট) এবং মাদকাসক্ত৷ তাই সহজে টাকা রোজগারই এর আসল কারণ৷ জাতীয় ক্রাইম ব্যুরো রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে ধরা পড়া ৪৬৭৯ জন কিশোরের মধ্যে ৩৫৩৬ জন স্কুল ড্রপ-আউট এবং ২৯৭৭ জন কিশোর তাঁদের পরিবারের সঙ্গেই থাকে৷ তিনি মনে করেন, পুলিশি ব্যবস্থাই এই ভয়ংকর সামাজিক অপরাধের একমাত্র প্রতিষেধক নয়৷ সমানভবে এগিয়ে আসতে হবে গোটা সমাজকে৷ কিশোর মন ভঙ্গুর৷ সহজ শিকার৷ তাই দরকার পারিবারিক এবং পারিপাশ্বিক সুস্থ পরিবেশ৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে বাবা-মা কিংবা অভিভাবকরা বাচ্চাদের চরিত্র গঠনের দিকে তেমন নজর দেন না৷ মা-বাবা দু'জনকেই রোজগারের ধান্দায় কাজে বেরিয়ে যান৷ এদের মধ্যে আছে দিন মজুর৷
‘অল্প বয়সিদের অপরাধ প্রবণতার মূল কারণ ভোগ্যপণ্যভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা’
গত অক্টোবরের ঘটনা৷ দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানায় দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া একজন ভালো ছাত্রকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ছাত্রটির বাবা জানান, একদিন কোচিং পড়তে গিয়ে ছেলে তাঁর বাড়িতে ফেরেনি৷ পুলিশের কাছে সে নাকি স্বীকার করে যে এলাকার এক কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের পাল্লায় পড়ে সে৷ তারা ওর মগজ ধোলাই করার পর ওকে দিয়ে একজনকে খুন করায় এটা প্রমাণ করতে যে, ঐ এলাকার মস্তান হয়ে ওঠার যোগ্যতা ওর আছে৷ দ্বিতীয়ত, পুলিশের মতে গুণ্ডাচক্র কম বয়সিদের বেছে বেছে দলে ঢোকায়৷ কারণ কিশোররা নাকি অপরাধমূলক কাজটা করতে পারে দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে এবং তাদের বিচারের সন্মুখীন হতে হয় না নাবালক বলে৷ বড়জোর তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংশোধনাগারে৷ যেমন ২০১২ সালের ৬ই ডিসেম্বর দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত একজন কম বয়সি ছেলের কোনো সাজা হয়নি৷ যেহেতু ঐ সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছরের ছয় মাস কম৷ আজও সে সংশোধনাগারে আছে৷ হালে হরিয়ানার একটি নাম-করা স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্র ঐ স্কুলেরই দ্বিতীয় শ্রেণির একটি বাচ্চাকে স্কুলের বাথরুমে গলা কেটে খুন করে৷ ছাত্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয় এখন বিচার চলছে৷ এর প্রেক্ষিতে, অতি সম্প্রতি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড রায় দেন নির্ভয়া কাণ্ডের মতো জঘন্য অপরাধে নাবালকদের অর্থাত ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি অপরাধীদেরও বিচার হবে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
কিশোর বা নব্য যুবকরা কেন অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়ায় তার মনস্তাত্ত্বিক কারণ ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখ্যা করলেন বিশিষ্ট মনোরোগী চিকিত্সক ডা. আশিষ আচার্য৷ কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে এ কথাটা উনি মানতে পারলেন না৷ বললেন, আগেও হতো৷ কিন্তু মিডিয়া রিপোর্ট করতে পারতো না বলে হয়ত চাপা থাকতো৷ এখন মিডিয়া সব ঘটনা তুলে ধরছে৷ তাই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে সংখ্যাটা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ তবে অল্পবয়সিদের অপরাধ প্রবণতা মূল কারণ ভোগ্যপণ্য-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা৷ এখনকার নব্য যুব সমাজ বা কিশোর সমাজ যে কোনো জিনিস এখুনি পেতে চায়৷ অপেক্ষা করতে চায় না৷ আগেকার দিনে কাঙ্খিত বস্তু পেতে আমরা উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতাম৷ দ্বিতীয়ত, সংসারে বাবা-মা রোল মডেল – এই সিস্টেমটার বর্তমানে বড় অভাব৷ এক তো পরমাণু পরিবার৷ বাবা-মায়ের মধ্যে মিল নেই৷ পরিবারে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ কম৷ মদ্যপান বা পারিবারিক হিংসা ইত্যাদি চোখের সামনে ঘটছে৷ শৈশব ও কৈশোর যদি মসৃণভাবে না হয়, যেমন শিক্ষা-দীক্ষা-সঙ্গ ঠিকমতো না পায়, তবে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে৷
কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক ত্রুটির কারণে সমাজ বিরোধী হয়ে ওঠার একটা প্রবণতা থেকে যায়, যেটাকে বলে কনডাক্ট ডিসঅর্ডার৷ যেমন হিংস্রভাবে কাউকে মারা৷ দ্বিতীয়ত, যৌন বাসনা চরিতার্থ করার সুযোগ না পাওয়া৷ অথচ ওরা চোখের সামনে দেখছে ওরই বয়সি অন্যরা পার্টি করছে, মেয়েবন্ধুদের সঙ্গ পাচ্ছে, মেলামেশা করছে৷ একটা বঞ্চিতভাব থেকেই ঐ সব কিশোর বয়সিরা ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদির মতো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে৷
কিশোরদের অপরাধপ্রবণতার কারণ কী? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷