1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কুসংস্কার

দেবারতি গুহ২২ আগস্ট ২০১৩

ভারতের সমাজ জীবনে কুসংস্কার গভীরভাবে প্রোথিত৷ এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যে খুব কঠিন, সেটা জীবন দিয়ে বুঝিয়ে গেলেন কুসংস্কার-বিরোধী আন্দোলনকারী ডা. নরেন্দ্র দাভোলকর৷ মহারাষ্ট্রের পুনেতে তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন৷

A Hindu devotee prays before taking a dip in the waters of the holy Ganges river ahead of the "Kumbh Mela" (Pitcher Festival) in the northern Indian city of Allahabad January 11, 2013. During the festival, Hindus take part in a religious gathering on the banks of the river Ganges. "Kumbh Mela" will return to Allahabad in 12 years. REUTERS/Ahmad Masood (INDIA - Tags: RELIGION TPX IMAGES OF THE DAY)
ছবি: Reuters

কোনটা সংস্কার কোনটা কুসংস্কার বা কোনটা বিশ্বাস আর কোনটা অন্ধবিশ্বাস – এটা চিহ্নিত করা খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতো৷ সেটা খোঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে এক বিতর্ক জালে জড়িয়ে প্রাণ দিতে হলো ৬৫ বছর বয়সি ডা. নরেন্দ্র দাভোলকরকে৷ ইনি চিকিৎসকের পেশা ছেড়ে গত ১২ বছর ধরে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন৷ লাগাতার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান অন্ধবিশ্বাস-বিরোধী বিল মহারাষ্ট্র বিধানসভায় পাশ করানোর৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি৷

ডা. দাভোলকরের বক্তব্য ছিল, তিনি ধর্মবিশ্বাস বা ঈশ্বরবিশ্বাসের বিরোধী নন৷ কিন্তু এই বিশ্বাসের কালোবাজারি করে যাঁরা মানুষকে ঠকান, শোষণ করেন, তাঁদের সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করাই তাঁর লক্ষ্য৷ এমন অনেক তথাকথিত সাধুবাবা, তান্ত্রিক আছেন যাঁরা নানা ছলচাতুরি ও কালো ম্যাজিকের ব্যবসা ফেঁদে দিব্যি থাকেন৷

‘হিন্দু নারীরা নানা উপলক্ষ্যে দিনের পর দিন উপবাস পালন করতে গিয়ে রক্তাল্পতার শিকার হন’ছবি: Suhail Waheed

তাঁদের মাথায় করে রাখেন সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, এমন কী মিডিয়া পর্যন্ত৷ চন্দ্রস্বামী থেকে ধীরেন ব্রম্মচারির মতো লোক ‘‘গডম্যান কাল্ট'' দিয়ে ভারতের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিলেন৷ এর সঙ্গে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোনো প্রশ্ন নেই৷ আছে স্রেফ অন্ধবিশ্বাস৷ সারা পৃথিবী জুড়েই এসব জিনিস চলছে৷ সাধারণ অশিক্ষিত, আধাশিক্ষিত গ্রামগঞ্জের মানুষকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাতে তাই ডা. দাভোলকর উপযুক্ত আইন চেয়েছিলেন৷

যুক্তিবাদী হিসেবে ডা. দাভোলকর মনে করতেন, হিন্দু নারীরা নানা উপলক্ষ্যে দিনের পর দিন উপবাস পালন করতে গিয়ে রক্তাল্পতার শিকার হন৷ বিয়ে উপলক্ষ্যে প্রতি বছর টন টন আহার্যের অপচয় হয়৷ সেটা গরিবদুঃখীদের মধ্যে বিলি করা যায়৷ বিলি করলে উপকার হতো৷ দেব-দেবীর মূর্তি, স্ট্যাচু সাধারণত তৈরি হয় ‘প্লাস্টার অফ প্যারিস' দিয়ে৷ সেটা শেষ পর্যন্ত বিসর্জন দেয়া হয় নদী বা পুকুরে৷ তাতে হয় জলদূষণ৷

কোনটা সংস্কার কোনটা কুসংস্কার বা কোনটা বিশ্বাস আর কোনটা অন্ধবিশ্বাস – এটা চিহ্নিত করা খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতোছবি: picture-alliance/dpa

কলকাতার ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ'-এর অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ মনে করেন, প্রত্যেকেই তাঁর নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন, যদি সেটা সমাজের বা অন্য কারোর ক্ষতির কারণ না হয়৷ সেটা যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে৷ সেটা যেন অমানবিক না হয়৷ যেমন, গ্রামাঞ্চলে কোনো নারীকে ডাইনির অপবাদ দিয়ে তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়৷ গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়৷ শিক্ষা ও বিজ্ঞানচেতনার অভাবে এমনি অসংখ্য কুসংস্কার প্রচলিত সমাজে৷ যেমন, ডাইনিবিদ্যা, বান মারা, ঝাঁড়ফুক, হাঁচি, টিকটিকি, তেঁতুল গাছের ভূত, অমবস্যার রাতে ভূত বের হয়, কালো বেড়াল রাস্তা কাটলে অশুভ, যাত্রাকালে ময়ূর দেখলে শুভ ইত্যাদি৷ এটা শুধু হিন্দু সমাজেই আবদ্ধ নয়, মুসলিম সমাজে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস আরো ব্যাপক ও কঠোর বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে৷

এর সঙ্গে ঈশ্বর বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই, ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথোপকথনে একথা বললেন সমাজবিজ্ঞানী বুদ্ধদেব ঘোষ৷ তার মানে এই নয় যে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দরকার নেই৷ আন্দোলন করতে হবে যেমন করেছিলেন রামমোহন রায় সতীদাহের বিরুদ্ধে, বিদ্যাসাগর করেছিলেন বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ