1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কৃষিকাজ ও মৌমাছির কল্যাণের উদ্যোগ

২৫ অক্টোবর ২০২৩

ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও মৌমাছি মানুষের অনেক উপকার করে৷ অথচ কীটনাশক থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন মৌমাছির অস্তিত্ব বিপন্ন করছে৷ পরাগায়ান ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য নিশ্চিত করা অসম্ভব৷

Biene
ছবি: Kim Hong-Ji/REUTERS

নিতীন সিং নিজের মৌমাছি কলোনি পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত৷ তিনি পরিবেশগত জৈবপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ৷ জার্মানি ও ইসরায়েলে মৌমাছির রোগ নিরাময় নিয়ে গবেষণা করে তিনি ২০১৫ সালে নিজের শহর লখনউয়ে ফিরে আসেন৷

সেই অঞ্চলে সত্যি তাঁর প্রয়োজন রয়েছে৷ কয়েক দশক ধরে সেখানে জংলি মৌমাছির সংখ্যা কমে চলেছে৷ এই প্রাণীর পরাগায়নের অভাবে চাষিদের ফসলও আগের তুলনায় কমে গেছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে নীতিন সিং হানি বি ভাড়া দিয়ে চাষিদের পরাগায়ন পরিষেবা দেন৷ সেই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ভুট্টা ও বাজরার খেতে আগে থেকেই তৈরি করা বি কলোনি নিয়ে আমরা নতুন খেতে যাই৷ কোনো চাষির ফসলের উৎপাদন ৮০ কিলো হলে তারা মৌমাছি পালনের মাধ্যমে সেটা বাড়িয়ে ১০০ কিলো করতে পারেন৷’’

নীতিন সিং ‘এপিস মেলিফেরা' প্রজাতির প্রায় এক হাজার কলোনির মালিক৷ মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছি এক বারেই এক হাজার পর্যন্ত ফুলে ঢুঁ মারে৷ দিনে ২০ বার এমনটা করতে পারে৷ সেই প্রক্রিয়ায় মৌমাছি একটি গাছ থেকে অন্য গাছে পরাগ নিয়ে যায়৷ ফলে ফুল, ফল ও শাকসবজির পরাগায়ন তরান্বিত হয়৷

খামারগুলির সহায়তাই এই উদ্যোগের একমাত্র লক্ষ্য৷ এর ফলে জীববৈচিত্রও তরান্বিত হবে, যা জংলি মৌমাছি পারতো না৷ তবে মূলত একটি কারণে সব ধরনের মৌমাছির সংখ্যা কমে চলেছে৷ প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক ও পোকা বিশেষজ্ঞ হিসেবে গীতাঞ্জলি মিশ্র বলেন, ‘‘ক্ষতিকারক পোকামাকড় মারতে আমরা যখন কীটনাশক ব্যবহার করি, একই সঙ্গে আমরা মৌমাছির মতো উপকারী পোকাও মেরে ফেলি৷ কারণ সেগুলি সরাসরি গাছপালা থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করে৷ সরাসরি ফুলে বসে কীটনাশক খেয়ে নেয়৷ এমন উপলব্ধির পর বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ মৌমাছির ক্ষতি করে, এমন কীটনাশক নিষিদ্ধ করে দিয়েছে৷’’

ফসল উৎপাদন বাড়াতে মৌমাছি ভাড়া দেন যে কৃষক

04:22

This browser does not support the video element.

চাষের কাজের এমন ক্ষতিকারক দিকই শুধু মৌমাছির একমাত্র সমস্যা নয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার প্রবণতা বদলে যাচ্ছে৷ ফলে মৌমাছি ও ফুলের মধ্যে মরসুমি সম্পর্কে বিঘ্ন ঘটছে৷ জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফুল ফোটার মরসুম নিয়ে অনিশ্চয়তা মৌমাছির উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে৷ গত ২৫ বছরে ভারতে মৌমাছির সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে৷

এর ফলে রামসহারে নামের এক চাষির টমেটো, মটর ও সর্ষের ফলন কমে গেছে৷ লখনউ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাঁর খেত৷ তাঁর মতে, ‘‘কোনো মৌমাছি না এলে এই ফুল শুকিয়ে যাবে৷ মৌমাছি ফুলের উপর বসলে তবেই সেটি বাড়তি পুষ্টি পাবে৷ আমার ফসল ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে৷ আগের ফসলগুলির তুলনায় এবার সবকিছু ভালো চলছে৷ এই সব ফুলের অবস্থা ভালো৷ মৌমাছির কল্যাণে এই চার মাস বয়সি গাছটি এখনো ভালো আছে৷ আগে দুই-তিন মাস পরেই ফলন বন্ধ হয়ে যেতো৷

সব ধরনের মৌমাছির উপর কীটনাশকের প্রভাবের কথা জানতে পেরে রামসহারে অরগ্যানিক কৃষি পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন৷

কারণ মৌমাছি চাষের ফলে চাষিদের সুবিধা হলেও জংলি মৌমাছি পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এই মৌমাছি গোটা জঙ্গলে পরাগায়ন ঘটায়, অন্য প্রজাতির প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে৷ ফলে এই মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷ বিজ্ঞানীদের মতে, সবাই মৌমাছি বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে৷ গীতাঞ্জলি মিশ্র মনে করেন, ‘‘সংরক্ষণের একটি সহজ উপায় হলো জংলি গাছপালার সংখ্যা বাড়ানো৷ আগাছা উপড়ে ফেলে দেওয়া আমাদের জন্য খুব সহজ কাজ৷ কিন্তু আমরা বুঝি না, যে মূল ফসল না থাকলে সেগুলিই মৌমাছির পরাগের অন্যতম উৎস৷ তাই এমন আগাছাই মৌমাছিকে অসময়ে বাঁচিয়ে রাখে৷ তাই আমাদের এমন সম্পদ আরো বাড়ানো উচিত৷ বেশিরভাগ আগাছাই অত্যন্ত শক্তিশালী হয়, প্রকৃতির রোষের মুখেও টিকে থাকে৷ মৌমাছির মধু ও পরাগের খুব ভালো উৎস হিসেবে আগাছা কাজ করে৷''

পরাগায়নকারীরা বেড়ে চলা জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে৷ আমাদের জন্য দুটোই আবশ্যিক৷ মৌমাছি এমনকি মানবজাতির বেঁচে থাকার চাবিকাঠি হয়ে উঠছে৷ মৌমাছির সুরক্ষা আদতে আমাদের সুরক্ষার পথই প্রশস্ত করছে৷

রিচার্ড কুজুর/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ