যশোর রোড চওড়া করতে ৪০০০ গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷
ছবি: Shantanu Haldar
বিজ্ঞাপন
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি, সংক্ষেপে এপিডিআর প্রথম মামলাটি করেছিল সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে৷ যশোর রোড, অর্থাৎ ১২ এবং ১১২ নং জাতীয় সড়ক চওড়া করতে প্রায় ৪০০০ গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য পূর্ত দপ্তর৷ এই গাছগুলির কোনও কোনওটার বয়স ২০০ বছরেরও বেশি৷ কোনও কোনও গাছের গুঁড়ি এত প্রকাণ্ড যে, আধ ডজন মানুষ মিলেও তা বেড়ে পাবে না৷ যশোর রোডের মাথার ওপর প্রাকৃতিক ছাতা হয়ে বছরের পর বছর টিকে থেকেছে যে গাছ, তাদের খুনের চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগণার মানুষও৷ দ্বিতীয় আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছিল তাঁদের তরফ থেকেও৷
‘মামলার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মুখে’
This browser does not support the audio element.
হাইকোর্ট গাছ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে'র এজলাসে এই দুটি মামলার একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়৷ শুনানি পর্ব শেষও হয়ে গিয়েছিল৷ হাইকোর্ট নিযুক্ত এক কমিটি পরিদর্শনের পর রিপোর্ট দিয়েছিল, গাছ না কেটে যশোর রোড চওড়া করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু মামলার রায় দানের সময় যখন এগিয়ে এসেছে, তখনই প্রধান বিচারপতি পদে নিশীথা মাত্রের মেয়াদ শেষ হয়৷ তাঁর পরিবর্তে যিনি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন, তিনি বিষয়টি দ্বিতীয়বার খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেই প্রক্রিয়াও এবার শেষ হওয়ার মুখে৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন সীমান্ত শহর বনগাঁর বাসিন্দা, কবি এবং এই গাছ বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকে যুক্ত বিভাস রায়চৌধুরি৷
‘আরও বেশি মানুষ ও সংগঠনকে আন্দোলনে সামিল করাই মূল লক্ষ্য’
This browser does not support the audio element.
তবে আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গাছ বাঁচাও আন্দোলনকেও জোরদার করে চলেছেন পরিবেশ কর্মী রাহুল বিশ্বাস৷ এর আগে তিনি যশোর রোডের ওপর দিয়েই একেবারে বনগাঁ সীমান্ত পর্যন্ত পদযাত্রা করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানাচ্ছেন, যশোর রোডের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয় মানুষদের বোঝানো, সচেতন করার কাজও জারি আছে৷ পাশাপাশি, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এক পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছেন তাঁরা, যা শুরু হবে দার্জিলিংয়ে, শেষ হবে সাগরদ্বীপে৷ রাহুল জানাচ্ছেন, আরও বেশি মানুষ এবং সংগঠনকে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনে সামিল করাই তাঁদের মূল লক্ষ্য৷
কেবল যশোর রোডের গাছ বাঁচানোই না, রাজ্যের অন্য এলাকার পরিবেশ সমস্যার বিষয়গুলিকেও একই সূত্রে গাঁথতে চান তাঁরা৷ ওদিকে আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, খুব শিগগিরই যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর প্রশ্নে সওয়াল-জবাব শেষ করে নিজের রায় জানাবে আদালত৷
অ্যামাজনের জঙ্গলে বেআইনি গাছ কাটার বিরুদ্ধে সংগ্রাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অ্যামাজন নদীর অববাহিকার বৃষ্টিপ্রধান গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য প্রায় দুশ’ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়৷ ব্রাজিলের পরিবেশ দপ্তরের কর্মীরা পৃথিবীর এই সবুজ ফুসফুসকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
সবুজ ফুসফুস
অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যের আয়তন ভারতের প্রায় দ্বিগুণ৷ সেই অরণ্যের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ব্রাজিলে৷ কিন্তু পৃথিবীর এই সবুজ ফুসফুস বেআইনি গাছ কাটা আর খনিজ সম্পদের জন্য খোঁড়াখুড়ির ফলে বিপন্ন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
হাতে-নাতে ধরা
মিলিটারি পুলিশ সাথে নিয়ে ‘ইবামা’-র এজেন্টরা বেআইনি গাছ-কাটিয়েদের পিছনে ধাওয়া করছেন৷ ‘ইবামা’ বলতে বোঝায় ব্রাজিলের পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিষ্ঠান৷ ইবামার এজেন্টরা চোরা কাঠুরিয়াদের হাতে-নাতে ধরার চেষ্টা করেন৷ ছবিতে ইবামার এক এজেন্ট কাঠ বওয়ার ট্রাকের দিকে তাক করছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
দেরি করা নেই...
ইবামা বেআইনি কাঠ-কাটিয়েদের প্রতি খুব সদয় নয়৷ ইবামার এজেন্টদের হাতে ধরা পড়লে আর নিস্তার নেই৷ পারা রাজ্যের নোভো প্রোগ্রেসো শহরের কাছে কাঠ সুদ্ধু ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি ইবামার কর্মকর্তারা৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
বিপজ্জনক
ইবামার কাজে ঝুঁকিও কম নয়৷ কিছু কিছু চোরা কাঠুরের কাছে গুলিবন্দুক থাকে৷ গত জুন মাসে এক পুলিশকর্মী অভিযান চালানোর সময় অপরাধীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
সাফল্যের চেয়ে অসাফল্যই বেশি
এক্ষেত্রে ইবামার কর্মকর্তারা সফল হয়েছেন বটে, কিন্তু এ ধরনের সাফল্য কমে আসছে৷ পরিবেশ বিভাগের উপরেও অর্থনৈতিক সংকটের ছাপ পড়েছে৷ বিগত কয়েক বছরে তাদের বাজেট কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
ঢাল নেই, তলোযার নেই
‘‘কাঠ চোরাদের কাছে আমাদের চেয়ে ভালো সাজসরঞ্জাম থাকে’’, বললেন পারা রাজ্যে ইবামার প্রতিনিধি উইরাতান বারোসো৷ ‘‘যতদিন আমরা মার্কা-না-মারা গাড়ি আর ভালো রেডিও সেট না পাচ্ছি, ততদিন আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব না৷’’
ছবি: Reuters/U. Marcelino
পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে
ইবামার উদ্যোগের ফলে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অ্যামাজনের অববাহিকা অঞ্চলে গাছ কাটা কমেছে প্রায় আশি ভাগ৷ কিন্তু তার পরের চার বছরে গাছ কাটা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ৷ ২০১৫ সালে অ্যামাজন জঙ্গলের যে অংশটা কেটে ফেলা হয়, তার আয়তন হবে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের চারগুণ৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
জার্মানি আর নরওয়ের সাহায্য
ব্রাজিল সরকার স্বীকার করেন যে, ইবামা যাতে ঠিকমতো তার দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত অর্থসংস্থান করা হয়নি৷ এখন ফুন্ডো আমাজোনিয়া বা অ্যামাজন নিধি থেকে আরো ১৫ লাখ ইউরো পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷ অ্যামাজন নিধির পুঁজি আসে প্রধানত জার্মানি ও নরওয়ে থেকে৷