ভোট আসছে, বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। কিন্তু ভোটের সঙ্গে জিনিসের দাম বাড়ার সম্পর্ক কী?
বিজ্ঞাপন
আম্বানি, আদানি থেকে শুরু করে টাটা, ভারতের পরিচিত এবং আলোচিত অধিকাংশ সংস্থাই এখন সরাসরি রিটেল ব্যবসায় নেমে পড়েছে। অর্থাৎ, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের ব্যবসায় তারা যুক্ত হয়েছে। চাল-ডাল-আলু থেকে নুন-মরিচ সমস্ত ব্যবসাতেই দেখা যাচ্ছে এই সংস্থাগুলিকে। প্রায় প্রতিটি সংস্থারই আছে রিটেল চেন। যার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে, ব্র্যান্ডের লোগো বসিয়ে বাজারে পৌঁছে দিচ্ছে এই সংস্থাগুলি। কোনো কোনো সংস্থা নিজস্ব রিটেল চেনের মাধ্যমে সরাসরি তা বাজারে বিক্রি করছে।
মজা হলো, এই প্রতিটি সংস্থার সঙ্গেই ভোটের সম্পর্ক আছে। শাসক-বিরোধী সব দলকেই কম-বেশি অর্থ সাহায্য করতে হয় এই সংস্থাগুলিকে। কোন বাণিজ্যিক সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ তা-ও এখন গোপন নয়। বছর বছর কোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা সাহায্য করে, তা-ও একরকম স্পষ্ট। শোনা যায়, ভোটের সময় এই অর্থের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যায়। এবং এই অর্থের পুরো অঙ্কটি জানাও যায় না। খাতায় কলমে যেটুকু জানা যায়, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট-- ভোটের বছরে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির উপর অর্থ-সাহায্যের চাপ বেশি থাকে।
রোজায় পাঁচ মুসলিম দেশের খাদ্যমূল্য পরিস্থিতি
বাংলাদেশে রোজার সময় চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের দাম বাড়া নিয়মিত ঘটনা৷ অন্যদেশগুলোর কী অবস্থা?
ছবি: Grandyos Zafna/detikcom
ইন্দোনেশিয়া
ডিডাব্লিউর জাকার্তা প্রতিনিধি ফিকা রামাদানি জানান রোজা, বড়দিন, নববর্ষের সময় চাল, চিনি, রান্নার তেল, ডিম, মুরগির মাংস, মরিচ ইত্যাদির দাম বাড়ে৷ কেউ বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এমন হয়৷ তবে সরকারের দাবি, রোজার সময় প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে৷ তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন, যে কারণে দাম বেড়ে যায়৷ লাল মরিচ, মাংস ও চালের দাম রোজায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: Johannes P. Christo/AA/picture alliance
পাকিস্তান
পাকিস্তানে রোজায় পেঁয়াজ, আলু, বাঁধাকপি, মরিচ, ক্যাপসিকাম, কলা, আপেল এবং তরমুজের মতো ফলমূলের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন৷ অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে বলে পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷
ছবি: I. Syed
সংযুক্ত আরব আমিরাত
রোজার সময় অনুমোদন ছাড়া নয়টি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো যাবে না বলে মেমো প্রকাশ করেছে দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ এগুলো হলো রান্নার তেল, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, চাল, চিনি, মুরগি, লেবু, রুটি এবং গম৷
ছবি: Daniel Täger/PantherMedia/IMAGO
নাইজেরিয়া
আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ নাইজেরিয়ায় রোজার আগে খাদ্যদ্রব্যে মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ৷ প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু গতবছর ক্ষমতায় এসে জ্বালানির ভর্তুকি বাতিল করেন ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেন৷ সে কারণে দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে৷ এই অবস্থায়ও ব্যবসায়ীরা রোজার শুরুতে বেশি লাভের আশায় দাম বাড়িয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে৷
ছবি: DW/S.Olukoya
বাংলাদেশ
রোজা যত ঘনিয়ে আসে খাদ্যসামগ্রীর দাম তত বাড়তে থাকে৷ ডিডাব্লিউর কন্টেন্ট পার্টনার ডেইলি স্টার জানিয়েছে, রোজার প্রথমদিন বেশিরভাগ পণ্যের দামই কিছুটা বাড়তি ছিল৷ অনেক ক্রেতা মনে করেন, দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করেন৷ ব্যবসায়ীরা আবার একে অন্যকে দোষ দেন৷ খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করেন পাইকারদেরকে, আর পাইকাররা দায় দেন আমদানিকারক ও উৎপাদকদের৷ ব্যবসায়ীরা পথেঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগও করেন৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
5 ছবি1 | 5
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, অতিরিক্ত এই খরচ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। যে কারণে, ভোটের আগে আচমকাই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করে। এবছরের নির্বাচনের দিকেই তাকানো যাক। আর এক থেকে দেড়মাসের মধ্যে শুরু হবে নির্বাচন। তার ঠিক আগে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ আগেও আলুর দাম যেখানে প্রতি কেজি ২০ টাকা ছিল, আচমকাই তা এখন ৪০ টাকার আশপাশে পৌঁছে গেছে। পেঁয়াজের দামও এখন ৪০ টাকা প্রতি কেজির আশপাশে। শাক-সবজির দাম গত এক সপ্তাহে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এই দামও তত চড়তে থাকবে। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে না, যা নিয়ে হইচই হতে পারে। জিনিসের দাম সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায় নির্বাচনের ঠিক পরে। উল্লেখ্য, অটলবিহারী বাজপেয়ী যে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় ভোটের ঠিক পরে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছিল। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল।
ভারতের একটি চালু লব্জ-- 'ভোট পুজো'। কারণ, ভোটকে একরকম উৎসবের মতোই গণ্য করা হয় এই দেশে। ফলে ভোটের মতোই বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পুজোর সময় বাজার 'আগুন' হতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজোর মরশুমে জিনিসপত্রের দাম সবচেয়ে চড়া থাকে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, দুর্গাপুজোর সময় ভালো-মন্দ খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। পুজোয় ব্যবহৃত কোনো কোনো জিনিস, যেমন ফল, ফুলের দাম দশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। মুম্বইয়ে এই একই ঘটনা ঘটে গণেশ চতুর্থীর সময়। দিল্লিতে দেওয়ালির বাজারে দাম 'ছেঁকা' মারে। ওড়িশায় ঠিক সেভাবেই বাজার চড়ে জগন্নাথের রথের সময়।
ভারতীয় রিটেল বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ রায়। ইন্দ্রজিৎ মনে করেন, ''ভোটের সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়া একটি খুব ইউনিক বা মজার ঘটনা। পৃথিবীর সব দেশে এমনটা ঘটে না। আরো মজার বিষয় হলো, এ নিয়ে সব তথ্যও পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে কত টাকা দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করে জানাতে চায় না। প্রকাশ্যে যা আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা তাদের দিতে হয়। ভারতের মতো বড় আয়তনের দেশে এই অর্থের মোট অঙ্ক বিপুল। এবং সে কারণেই এর সরাসরি প্রভাব বাজারের উপর এসে পড়ে।''
ভারতে রমজান
ভারতে বহু ধর্মের মানুষ আছেন৷ মুসলমান অধ্যুষিত পুরনো দিল্লিতে রমজান ও ঈদ একটি আন্তঃ-ধর্মীয় উৎসব হয়ে ওঠে৷
ছবি: Reuters/P.Rossignol
ইফতারের আগে জুতো খুলতে ভুলবেন না
জামা মসজিদের পিছনের গলিতে থাকে পাঁচ বছর বয়সের ইসমাইল৷ সে-ও আসে তার বাবার সঙ্গে ইফতার করতে৷
ছবি: DW/C. Gill
মাগরিবের নামাজ
পুরনো দিল্লিতে সূর্যাস্ত সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে৷ মাগরিবের নামাজ পড়েন সকলে৷ তারপর খাওয়া৷ রোজা চলে একমাস৷
ছবি: DW/C. Gill
হিন্দুরাও আছেন
মুকেশ কুমার নিজে হিন্দু, কিন্তু প্রতিবছর তিনি রমজানের সময় হিন্দু-মুসলমানদের এক যৌথ ইফতারের আয়োজন করেন৷ ‘‘ভয়ভীতি দূর করার ওটাই শ্রেষ্ঠ পথ’’, বলেন ৬৩ বছর বয়সি মুকেশ৷
ছবি: DW/C. Gill
জামা মসজিদ সব কিছুর কেন্দ্রে
ভারতের বৃহত্তম মসজিদটির স্রষ্টা আবার তাজ মহলের স্রষ্টাও বটে, মোগল সম্রাট শাহ জাহান৷ সূর্যাস্তের পর বহু পরিবার মসজিদের চত্বরেই ইফতার করেন৷
ছবি: DW/C. Gill
ঈদের সাজ
রোজার মাসের শেষে আসে ঈদ-উল-ফিতর৷ ঈদের আগে সবাই পায় নতুন জামাকাপড়৷ কাজেই সন্ধ্যায় পুরনো দিল্লির কাপড়ের দোকানগুলোতে থাকে ক্রেতাদের ভিড়৷
ছবি: DW/C. Gill
বিক্রিবাটা
রমজানের মাসে বহু মুসলমান ব্যবসায়ীর বিক্রিবাটা খুব ভালো হয়৷ তবে বৃষ্টি নামলে খদ্দেরদের সংখ্যা কমে৷
ছবি: DW/C. Gill
ইফতার
স্কুলের ছাত্রী ১৫ বছরের আনুশা রোজার মাসে প্রতিদিন কোরান শরিফ পড়ে; সেই সঙ্গে দিনে পাঁচবার নামাজ৷ তবে সবচেয়ে মজা স্বভাবতই ইফতারের ভুরিভোজ৷