1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে চিকিৎসা করাতে এসে আটকে বাংলাদেশিরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৬ এপ্রিল ২০২০

ভারতে চিকিৎসা করাতে এসে আটকে পড়েছেন বাংলাদেশের বহু নাগরিক৷ অধিকাংশের হাতে ফুরিয়ে আসছে টাকাপয়সা৷ কেউ পড়েছেন মর্মান্তিক ব্যক্তিগত বিপর্যয়ে৷

ফাইল ফটোছবি: DW/P. Tiwari

২৪ মার্চ থেকে ভারতে শুরু হয়েছে লকডাউন৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বাড়তে থাকায় ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে৷ ফলে গভীর সংকটে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশের মানুষ৷ প্রতি বছর চিকিৎসা করাতে ভারতের বিভিন্ন শহরে আসেন প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরা৷ কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই-এর সঙ্গে অনেকের গন্তব্য তামিলনাড়ুর শহর ভেলোর৷ সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি এখানে আসেন৷ ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে (সিএমসি) অপেক্ষাকৃত কম খরচে চিকিৎসা হয়৷ সেখানে আটকে পড়া মানুষদের সমস্যা মোটামুটি একইরকম — হাতে টাকাপয়সা শেষ হয়ে গিয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে৷ অনেককেই বাসস্থানের ভাড়া মেটাতে হচ্ছে৷ কোনওরকমে খাবারটুকু জোগাড় করতে পারছেন তাঁরা৷ বহু চেষ্টা করেও দেশে ফিরতে পারেননি৷ 

‘অনেক চেষ্টা করেছি বাড়ি ফেরার’

This browser does not support the audio element.

এই সবকিছুর সঙ্গে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় পড়েছেন, বাংলাদেশের এমন এক নাগরিককে খুঁজে পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ তিনি কুষ্টিয়ার হরিণগাছি গ্রামের নাজমুল হক৷ ঢাকার পোশাক শিল্পের মার্চেন্ডাইজারের কাজে যুক্ত ৩৫ বছরের নাজমুল কিডনির চিকিৎসা করাতে ভারতে এসেছিলেন মার্চে৷ ২৪ মার্চ মধ্যরাতে লকডাউন কার্যকর হওয়ায় তাঁর মাথায় হাত পড়ে৷ কিন্তু, রাত পোহালেই যে আরো বড় সংকট তাঁর জীবনে আসবে, এটা কল্পনা করতে পারেননি নাজমুল৷ মায়ের সঙ্গে ভেলোরে এসেছেন তিনি৷ আপাতত রয়েছেন সারথীনগরের রবি ম্যানসনে৷ ২৫ মার্চ খবর আসে, তাঁর স্ত্রী উম্মে জুবেইদা জাহান পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন৷ ঢাকারই বাসিন্দা ৩৩ বছরের জুবেইদা গাজিপুর ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষিকা ছিলেন৷ নাজমুল বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি বাড়ি ফেরার৷ স্ত্রীকে শেষ দেখার ইচ্ছে ছিল৷ এখানকার কালেক্টর অফিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস, সব জায়গায় যোগাযোগ করেছি৷ কিন্তু, কোনো লাভ হয়নি৷ দেশে ফিরতে পারেনি৷''

নাজমুল যদি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন, সেই আশায় কয়েকদিন মর্গে শায়িত ছিল তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ৷ শেষমেশ পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন, দাফন করা হবে জুবেইদাকে৷ এতে সম্মতি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না নাজমুলের কাছে৷ কবে দেশে ফিরবেন, তারই যে ঠিক নেই৷

এখানেই ট্র্যাজেডির শেষ নয়৷ এই দম্পতির একটি পুত্রসন্তান রয়েছে৷ দু‘বছরের তাসফিন সাহারান আয়ান এখন মাকে হারিয়ে, বাবার থেকে দূরে কার্যত অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে৷ নাজমুলের মাসি দেখভাল করছেন আয়ানের৷ হরিণগাছির বাড়িতে নাজমুলের বৃদ্ধ বাবা, ছোট ভাই৷ 

বাংলাদেশে লকডাউন চলায় পরিজনরা সংকটের সময় পাশে দাঁড়াতে পারছেন না৷ ২০ এপ্রিল আয়ানের জন্মদিন, তাই বুক ফেটে যাচ্ছে নাজমুলের৷ বলেন, এক একটা দিন এক বছর বলে মনে হচ্ছে৷ সময় কাটছে না৷ সন্তানকে কোলে নিয়ে একটু শান্তি পেতে চাই৷' শারমিন গ্রুপের কর্মী নাজমুলের কাজে যোগ দেওয়ার কথা ২৫ এপ্রিল৷ যদি না পারেন চাকরি কি থাকবে, এই আশঙ্কা তাড়া করছে শোকগ্রস্ত যুবককে৷ 

ভারতে দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলবে ৩ মে পর্যন্ত৷ ততদিন বন্দি থাকা ছাড়া উপায় নেই দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এর একটি বিভাগের প্রধান জাবেদ আলির৷ পেশায় প্রকৌশলী জাবেদের বাড়ি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলায়৷ ২০১৪ সালে কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছিল তাঁর৷ পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে ভেলোর হাসপাতাল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে লজে বাস করছেন তিনি৷ সরকারি নির্দেশিকা সত্ত্বেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাঁদের৷ জাবেদ বলেন, ‘‘তামিলনাড়ু সরকার নোটিস জারি করেছিল, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত আটকে পড়া মানুষদের থেকে ভাড়া নেওয়া যাবে৷ কিন্তু, আমার লজ মালিক নানা আপত্তি করেছেন৷ ফলে আমাকে পুরো ভাড়াই দিতে হয়েছে৷''

সিএমসি-র কাছাকাছি অবস্থিত লজের মালিকরা অবশ্য সরকারি নির্দেশিকা মেনেছেন৷ তা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ভেলোরের মাইসোর গেস্ট হাউসে থাকা সইফুলদের৷ এর পাশেই বোম্বে গেস্ট হাউস৷ হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে ভারতে আসা মাদারিপুরের সইফুল পরিবারের পাঁচ জনকে নিয়ে লজে আছেন৷ বলেন, ‘১৪ তারিখ পর্যন্ত ভাড়া নেয়নি৷ এরপর কী হবে জানি না৷ এখনও অনেক দিন চালাতে হবে৷ সকালে বাজার করে কোনও রকমে রান্নাটা করছি৷ টাকা ফুরিয়ে আসছে৷' এই দু‘টি লজে আছেন একশোর বেশি বাংলাদেশি৷ চট্টগ্রাম থেকে আসা আব্দুল মোহেমেন মোল্লা চারজনকে নিয়ে আটকে৷ এর মধ্যে দু‘জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ ওষুধ হাতে আছে বটে, কিন্তু খাওয়ার টাকা ফুরিয়ে আসছে৷ বাংলা নতুন বছর এঁদের কাছে দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে৷ বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ সরকারের দিকে তাকিয়ে নাজমুল, জাবেদরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ