ছাত্র রাজনীতিকে অপ্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা যত বাড়ছে, ভারতে ছাত্র রাজনীতি তত দম পাচ্ছে৷ অতীতেও তেমনই ঘটেছিল৷
বিজ্ঞাপন
বছর দেড়েক আগের কথা৷ অগ্রজ সহকর্মী গৌতম হোড়ের সঙ্গে স্টোরি করতে গিয়েছি দিল্লির সিংঘু সীমানায় তখন অবস্থান শুরু করেছেন কৃষকরা৷ সম্প্রতি যাদের কাছে নতি স্বীকার করে কৃষি আইন বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
আন্দোলন তখন সবেমাত্র শুরু হয়েছে৷ দুপুর রোদে অবস্থানরত কৃষকদের ক্যাম্পে পৌঁছে আলাপ হলো ঝকঝকে পাঁচ-ছয় তরুণীর সঙ্গে৷ তারা সকলেই ওই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত৷ ক্যাম্প করে তারাও বসে আছেন৷ কথায় কথায় জানতে পারলাম সকলেই দিল্লির বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী৷ একজনই কেবল সদ্য কলেজ পাশ করে একটি কর্পোরেট সংস্থায় ইন্টার্নশিপ শুরু করেছে৷ ক্যামেরার সামনেই তিনি জানিয়ে দিলেন, অফিসে বলে এসেছেন, আন্দোলন চালিয়ে যাবেন৷ তার জন্য চাকরি চলে গেলেও তিনি কিছু মনে করবেন না৷
বামমনস্ক এমন হাজার হাজার ছাত্র দেখেছিলাম কৃষক আন্দোলনের মাসছয়েক আগে শেষ হওয়া সিএএ আন্দোলনে৷ গোটা দেশ থেকে আন্দোলনরত নারীদের পাশে দিন-রাত বসে ছিলেন তারা৷ মিছিল করেছেন৷ অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন৷ গ্রেপ্তারও হয়েছেন৷ কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে যাননি৷
বিশ্বে শিক্ষার্থীদের ১২টি আলোচিত আন্দোলন
সারা বিশ্বেই দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ কোনোটি সফল হয়, কোনোটি হয় না৷ তবে সফল না হলেও কিছুটা প্রভাব রেখে যায়৷ ছবিঘরে বাংলাদেশের বাইরের আন্দোলনগুলোর কথা থাকছে৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
হিটলারের সমালোচনা
১৯৪২ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘হোয়াইট রোজ সোসাইটি’ নামে এক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল৷ তারা হিটলারের শাসন ও ইহুদিদের উপর অত্যাচারের সমালোচনা করে বেনামে লিফলেট বিলি করেছিল৷ হিটলারের পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো অধিকাংশ মূল আন্দোলনকারীকে আটক করেছিল৷ পরে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ছবিতে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা সোফি শল (ডানে) ও তার ভাই হান্সকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ত থাকা এবং নির্মিতব্য জিমনেশিয়ামে বর্ণবাদী পরিকল্পনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা৷ বিক্ষোভকারীদের সরাতে সহিংস উপায় বেছে নেয় পুলিশ৷ বিক্ষোভে জড়িত থাকায় কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল৷ তবে দুটি দাবিই মানা হয়েছিল৷
ছবি: Dave Pickoff/AP Photo/picture alliance
মিয়ানমারে বিক্ষোভ
১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার শক্ত হাতে বিক্ষোভ দমন করায় একশ’র বেশি বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছিল৷ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ চার মাস পর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছিল৷ ১৯৮৮ সালে আবারও আন্দোলন (ছবি) শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ সেটি দমানো হলেও নে উইন পদত্যাগ করেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিসের এথেন্সে বিক্ষোভ
গ্রিসে তখন ছয় বছর ধরে সামরিক শাসন চলছিল৷ এর প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে এথেন্স পলিটেকনিকের একদল বামপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন৷ দ্রুত তাদের সঙ্গে আরো শিক্ষার্থী যোগ দেন৷ বিক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাংক ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন মারা যান৷ শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আরেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা আরেকটি অভ্যুত্থান করে বসেন৷ এর কয়েকমাস পর সামরিক সরকারের পতন ঘটে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন
সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বড় বিক্ষোভটি করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে৷ পড়ালেখার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি আফ্রিকান ভাষা যুক্ত করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়৷ আফ্রিকান ভাষাটি বর্ণবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রতিবাদ হয়৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ গুলি চালালে সরকারি হিসেবে ১৭৬ জন (মতান্তরে প্রায় ৭০০ জন) প্রাণ হারান৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
১৯৯৮ সালের ১২ মে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিল ত্রিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ তাদের দমাতে পুলিশ গুলি চালালে চারজন মারা যায়৷ এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হলে সুহার্তো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সুহার্তো৷
ছবি: Robertus Pudyanto/ZUMAPRESS.com/picture alliance
তিয়েনআনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভ
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছিলেন হু ইয়াওবাং৷ তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন৷ সে কারণে একসময় তিনি দলের পদ হারান৷ ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পর গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীরা বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ শুরু করে৷ পরে সেটা বড় হলে তাদের দমাতে সামরিক আইন জারি করা হয়৷ ট্যাংক দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়৷ এতে মতান্তরে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
ইরানের ‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ার’
১৯৯৯ সালে সংস্কারবাদী পত্রিকা ‘সালাম’ বন্ধের প্রতিবাদে তেহরানের রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এরপর পুলিশ হলে ঢুকে বিছানা পুড়িয়ে দেয়, জানালার কাচ ভেঙে ফেলে৷ ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের সময় কয়েক হাজার জনকে আটক করা হয়৷ প্রায় ৭০ জন নিখোঁজ হন৷ বিক্ষোভের পর সরকার উলটো বাকস্বাধীনতা আইন আরও কঠোর করেছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
লন্ডনে বিক্ষোভ
শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের প্রতিবাদে ২০১০ সালে লন্ডনে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ কোনো কোনো বিক্ষোভে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়৷ এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দলের ক্যাম্পেন হেডকোয়ার্টারে ঢুকে পড়েছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করেছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
হংকংয়ের ‘ছাতা বিপ্লব’
২০১৪ সালে চীনের কংগ্রেস হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব করে৷ সেটি বাস্তবায়িত হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে বলে হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে৷ বিক্ষোভকারীদের মারধরও করা হয়৷ এসব থেকে বাঁচতে ছাতার ব্যবহার শুরু করেছিল তারা৷ তাই এটি ‘আমব্রেলা রেভুলিউশন’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল৷ ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল এই আন্দোলন৷
ছবি: AFP/Getty Images/D. de la Rey
পৃথিবী বাঁচানোর আন্দোলন
২০১৮ সালে প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সংসদের কাছে এই পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতেন সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ সেখানে লেখা আছে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’৷ টুনব্যার্গের এই আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: picture-alliance/DPR/H. Franzen
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনে৷ ঘটনার তদন্তের দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোনেনি৷ তাই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেছিল৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে৷ উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এমন আচরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে৷ আন্দোলন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন উপাচার্য৷
ছবি: ZUMA Press/imago images
12 ছবি1 | 12
কলকাতার মানুষ হিসেবে এই দৃশ্য অধমের কাছে খুব অস্বাভাবিক নয়৷ সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য দেখেই বড় হয়েছি৷ অগ্রজদের কাছে শুনেছি খাদ্য আন্দোলন থেকে নকশাল আমল, ট্রামভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ থেকে সিলেবাস মুভমেন্ট-- মাইলস্টোন আন্দোলনের সামনে সবসময়েই থেকেছেন ছাত্ররা৷ আন্দোলন করতে গিয়ে মৃত্যুও হয়েছে তাদের৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিজের চোখে দেখা৷ কীভাবে সে সময় ছাত্ররা কৃষকদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, আজ তা ইতিহাস৷
ঠিক যেমন ইতিহাস হয়ে যাবে সাম্প্রতিককালে করোনা এবং লকডাউন আবহে বাম ছাত্র-ছাত্রীদের রেড ভলান্টিয়ার্স৷ নিঃস্বার্থে এখনো তারা মানুষের সেবা করে যাচ্ছে৷ এ-ও কম বড় আন্দোলন নয়৷ নয় কম বড় বিপ্লব৷ হয়ত সে কথা মাথায় রেখেই ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে একাধিক ছাত্রনেতাকে সামনে নিয়ে এসেছে সিপিএম এবং বামপন্থি দলগুলি৷ জেএনইউ-র ছাত্র নেতা ঐশী ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ এসএফআই-এর সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যরা গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে এবার ভোটে লড়াই করেছেন৷ হেরেছেন৷ কিন্তু তা-ই বলে হারিয়ে যাননি৷ আগামীর মূলস্রোতের রাজনীতিতে তারা থেকে যাবেন৷ জমিও তৈরি করবেন নিশ্চয়৷
স্বাধীনোত্তর ভারতের সাত দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্ররা বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছেন৷ বাম, অতি বাম, মধ্য বাম এবং দক্ষিণপন্থি রাজনীতিতে অসংখ্য ছাত্র নেতা তৈরি হয়েছেন, পরবর্তীকালে যারা মূলস্রোতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছেন৷ রেখাপাত করেছেন৷ প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি থেকে শুরু করে দক্ষিণপন্থি অরুণ জেটলি, নির্মলা সীতারমন, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অতি বামপন্থি অসীম চট্টোপাধ্যায়-- সকলেই ছাত্র আন্দোলনের ফসল৷ পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান যুবনেত্রী হিসেবে হলেও তার বীজ রয়ে গেছে আইন কলেজের ছাত্র আন্দোলনে৷ ফলে অদ্যাবধি ভারতের মূলস্রোতের রাজনীতিতে ছাত্র আন্দোলন যে বিপুল প্রভাব ফেলেছে, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই৷ প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতেও থাকবে কি?
প্রশ্ন কঠিন এবং একাধারে জটিল৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্র আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে গেছে, এ কথা বলা যায় না৷ সাম্প্রতিক উদাহরণগুলি সে কারণেই একেবারে গোড়ায় লিখে রেখেছি৷ মূলস্রোতের রাজনীতিতে এখনো তেমন কিছু করে উঠতে না পারলেও জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে নিয়ে এখন মূলস্রোতে যথেষ্ট আলোচনা হয়৷ বাম সংগঠনে যখন ছিলেন তখন হতো, কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরেও হয়৷ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তরুণ বাম মুখদের যতই তাচ্ছিল্যের চোখে দেখুক, তারা যে জমি কামড়ে পড়ে আছেন, রাজ্যের গ্রাম মফঃস্বলে গেলে তার আভাস পাওয়া যায়৷ ফলে ছাত্র রাজনীতির ধার কমে গেছে, এ কথা বলা যায় না৷ ছাত্র রাজনীতি মূলস্রোতে ঢুকতে পারে না-- এমন মন্তব্যও করা যায় না৷
তবে এ-ও ঠিক যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তো বটেই, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ছাত্ররাজনীতির টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা চলছে৷ কলেজে কলেজে ভোট বন্ধ রেখে সেই প্রক্রিয়াকে আরো গতি দেওয়া হয়েছে৷ বাম আমলেও সে চেষ্টা হয়েছিল৷ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটের নামে প্রহসন তখনো হয়েছে৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শয়ে শয়ে কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন তৈরি করেছে বাম ছাত্র সংগঠন৷ কিন্তু তাই বলে কি বিরোধী কণ্ঠ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন প্রমাণ করে দেয় কণ্ঠ বন্ধ তো হয়ইনি বরং আরো জোরদার হয়েছিল৷ প্রাথমিকভাবে দুইটি আন্দোলনেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল একাধিক অতি বামপন্থি সংগঠনের ছাত্ররা৷ পরে সেখানে তৃণমূল সংগঠন নিয়ে ঢুকে পড়ে৷ বস্তুত, সে সময় বাম শাসকদের ছত্রছায়ায় থাকা ছাত্র সংগঠনগুলির নেতৃত্বে যারা ছিল, মূলস্রোতের রাজনীতিতে তারা দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেভাবে উঠে আসতে পারেনি৷
বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজগুলি যখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে, ভোট কার্যত বন্ধ, তখনও একই ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে৷ মূলস্রোতের রাজনীতিতে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নেতা সেভাবে উঠে আসছে না৷ দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে৷ কিন্তু উঠে আসছে বিরোধী বামেদের ছাত্রমুখ৷ কারণ, তারা এখন মার খাচ্ছে৷
এটাই বোধহয় ইতিহাসের নিয়ম৷ ভারতের প্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তো বটেই৷ ফলে আপাত চোখে ছাত্র আন্দোলনের আগুন কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেছে মনে হলেও ছাইয়ের নীচে আগুন এখনো জ্বলছে৷ সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলন তা প্রমাণ করে দিয়েছে৷ বাকি কথা ভবিষ্যৎ বলবে৷