প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে গোটা বিশ্বে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ ভারতে জঞ্জাল সাফাইয়ের এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
আবর্জনা পরিষ্কারের অভিনব কায়দা
05:19
ভারতের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠছে৷ সেই সঙ্গে জঞ্জালের পরিমাণও বাড়ছে৷ জার্মান শিল্পপতি ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার দিল্লি গেছেন৷ সেখানে শহরের মাঝেই প্রায় ৩০ বছর ধরে আবর্জনার পাহাড় তৈরি হচ্ছে এবং তা আকার-আয়তনে বেড়েই চলেছে৷ শহরে এখনো জঞ্জাল সাফাইয়ের কোনো কার্যকর প্রণালী নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে সমুদ্রই হলো সুখের জায়গা৷ সেখানেই আমি থাকতে সবচেয়ে ভালবাসি, সব ভুলে শুধু প্রকৃতি উপভোগ করতে পারি৷ তাই এমন সমুদ্রতটে আসতে খারাপ লাগে, যেখানে প্রকৃতির আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই৷ সেখানে সর্বত্র দূষণের ছাপ এবং বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে৷''
তার বদলে ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেআইনিভাবে জঞ্জালের স্তূপ ঘেঁটে মূল্যবান উপকরণ বেছে নেয়৷ ‘আই গট গার্বেজ' সংগঠনের শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘দিনে এক বা দুই ডলার উপার্জনের আশায় তারা জঞ্জাল ঘাঁটে৷ হাতে কী লাগছে, তা কখনো জানতে পারে না৷ তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য কোনো সরঞ্জাম পরে না৷ অর্থাৎ জীবনে সবকিছু হারালে, কোনো আশা অবশিষ্ট না থাকলেই ময়লা-কুড়ানি হওয়া যায়৷''
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য কেন ব্যবহার করবেন?
প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য – এই শিরোনামে জার্মানির কোলনে হয়ে গেলো একটি কর্মশালা৷ বাংলাদেশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব পাটের পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতে এই আয়োজন করে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা বাসুগ৷
ছবি: DW/N. Sattar
উদ্যোক্তা বাসুগ (বিএএসইউজি)
জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে পরিবেশের ইউরোপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাসুগ (বিএএসইউজি) ও জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের একটি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গত ২৩ জুন কোলনে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়৷ এতে অংশ নেন জার্মান ও অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল নাগরিকদের উচিত সরকারকে সহায়তা করা৷পাটের ব্যবহার পরিবেশ রক্ষায় রাতারাতি কোনো সমাধান না-ও আনতে পারে৷ তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সহায়তা করবে৷ শুধুমাত্র নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ আশা করতে পারি৷ এখন থেকে পাটের তৈরি পণ্য বেছে নিন এবং পরিবেশ পরিবর্তনের অংশ হোন৷’’
ছবি: DW/N. Sattar
প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক
নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের সংসদ সদস্য বেরিভান আয়মাজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ধ্বংস করছে৷ প্লাস্টিকের বিষাক্ত উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক৷ তাছাড়া সমস্যাটি এখন রাজনীতিতে এসেছে৷ আমরা আশা করছি, এ দেশের জনগণকে প্লাস্টিক বর্জ্যের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে বাসুগের মাধ্যমে পরিচালিত প্রচারাভিযান সফল হবে৷’’
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
বিশেষ অতিথি হিসেবে কোলনের মেয়র ড.রাল্ফ হাইনেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাথে জার্মানির ব্যবসায়িক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন,‘‘ জার্মানির অনেক পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে পোশাক৷ আমাদের বিশ্বাস, জার্মানির সাথে ফেয়ার ট্রেড বাংলাদেশে ইতিবাচক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করতে পারে৷’’
ছবি: DW/S. Burman
প্লাস্টিক, নাকি পাটের ব্যবহার?
কর্মশালায় জার্মানির সাধারণ জনগণের প্লাস্টিক ব্যবহার এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর৷ কারণ, ব্যবহৃত প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত নদী, সাগর ও কৃষি জমিতে স্থান পায় এবং সেসব গলতে বা টুকরো হতে বহু বছর সময় লেগে যায়৷ এর ফলে মাটি ও পানির দূষণ অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: picture alliance/PIXSELL/G. Jelavic
সোনালি আঁশের তৈরি ব্যাগ কেন ব্যবহার করবেন?
ব্যাগ এবং প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হতে পারে পাটের মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য দিয়ে৷ পাট যেমন স্বাস্থ্যকর সবজি, তেমনি পাট থেকে তৈরি হয় মজবুত সুতা৷ তাছাড়া পাট প্রাকৃতিক আঁশ এবং দামেও সস্তা৷ ব্যবহারের দিক থেকে তূলার পরেই পাটের স্থান৷ তাছাড়া পাট মজবুত ও টেকসই হলেও তা রিসাইকেল করাও সম্ভব৷
ছবি: DW/N. Sattar
চটের ব্যাগ
পাটের তৈরি ব্যাগ দেখতে সুন্দর, আধুনিক ও মজবুত ৷ এই ব্যাগ ব্যবহারে যেমন পকেটের পয়সা বাঁচবে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষা হবে৷
ছবি: DW/N. Sattar
পাটের তৈরি নানা পণ্য
কর্মশালায় ছিল বাংলাদেশের পাটের তৈরি আকর্ষণীয় নানা পণ্যের সমাহার৷
ছবি: DW/N. Sattar
প্রামাণ্যচিত্র
কর্মশালায় দেখানো হয় বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাট বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাসুগ
কর্মশালায় অংশ নেন অভিবাসী গবেষক, পরিবেশ কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ৷‘প্লাস্টিকের বিকল্প পাটের পণ্য’ শিরোনামে কর্মশালাটির আয়োজনে ছিলেন বাসুগ সংস্থার সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী এএইচএম আবদুল হাই৷
ছবি: DW/N. Sattar
11 ছবি1 | 11
এই স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভারতের আবর্জনার সংকট সমাধান করতে চায়৷ ময়লা কুড়ানিরা সেই কাজে সাহায্য করছে৷ পথের বদলে আধুনিক রিসাইক্লিং কারখানায় তারা বিভিন্ন ধরনের জঞ্জাল আলাদা করছে৷ শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন কোটি কিলো জঞ্জাল আমাদের প্রণালীর মাধ্যমে পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে৷ প্রায় ৮,০০০ ময়লা কুড়ানি সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ আমরা তাঁদের যতটা সম্ভব এক মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা দেবার চেষ্টা করছি৷ তাঁদের নির্দিষ্ট মাসিক বেতন রয়েছে৷ কাজের সময় স্থির করা হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে৷ এমনকি তাঁদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে৷''
জঞ্জালের পুনর্ব্যবহার আরও কার্যকর করে তুলতে এই কোম্পানি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে৷ রিসাইক্লিং কারখানা, ময়লা কুড়ানি, জঞ্জালের উৎস – সবকিছু এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ সেই তথ্য সবসময়ে ইন্টারনেটে পাওয়া যায়৷ ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, প্রযুক্তি এমন কী সম্ভব করেছে, যা আগে হতো না? উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘প্রথমত, সহজে চারিদিকে জঞ্জাল দেখা যেত না৷ জঞ্জাল বরাবর অদৃশ্য থাকতো৷ এমনকি আপনি কত জঞ্জাল সৃষ্টি করতেন, তা জানতেই পারতেন না৷ আপনি বলছেন, আবর্জনার জন্য আমি কেন পয়সা দেব? আমি তো বেশি জঞ্জাল সৃষ্টি করি না! এখন প্রতিদিন তার পরিমাণ মাপা যায়৷ মাসের শেষে দেখতে পারেন, আপনি ৫, ১০ বা ১৫ টন জঞ্জাল সৃষ্টি করেছেন৷ তখন বাস্তব মেনে নিতে হয়৷''
ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার মনে করেন, ‘‘অর্থাৎ সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ যেমনটা ফিটনেস ট্র্যাকার প্রতিদিন আমাদের পদক্ষেপ, হৃদস্পন্দনের মতো তথ্যের পরিমাপ করে৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে নিজের আচরণ বদলানো সম্ভব৷''
ভারতের আবর্জনা সংকটের মূলে রয়েছে প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার৷ প্লাস্টিক ছাড়া দৈনন্দিন জীবন ভাবাই যায় না৷ সস্তায় উৎপাদন ও সহজে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, প্রায় অনন্তকাল ধরে টিকে থাকে৷ কিন্তু সেটাই তো সমস্যা৷ ফ্রিটইয়ফ ডেৎসনার বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার করে মোড়ক উৎপাদন করলে তা মাত্র একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়৷ প্লাস্টিকের এই বৈশিষ্ট্য তাই অত্যন্ত খারাপ, কারণ তা কখনো নষ্ট হয় না৷''
এনভিগ্রিন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অশ্বথ হেগড়ে বলেন, ‘‘দুঃখের বিষয় হলো, মানুষ তাদের অভ্যাস বদলাতে প্রস্তুত নয়৷ তাদের নেশা হয়ে গেছে৷ তারা শুধু ইউজ অ্যান্ড থ্রো ব্যাগ ব্যবহার করতে চায়৷ আমরা কিছু বিকল্প চালু করেছি৷ প্লাস্টিকের বদলে আপনি সেটা ব্যবহার করতে পারেন, প্লাস্টিকের দাম বাঁচাতে পারেন৷''
সাধারণ প্লাস্টিক একশো বছর পরেও নষ্ট হয় না৷ এনভিগ্রিন কোম্পানির থলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়৷ উদ্ভিদজাত তেল ও শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সেগুলি তৈরি হয়৷ অশ্বথ হেগড়ে বলেন, ‘‘২০১৮ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি দেশে পৌঁছনোই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা পুরোপুরি ভারতে তৈরি পণ্য পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানি করবো৷ একইসঙ্গে আমরা ইউরোপ বা পশ্চিমা দেশগুলির নতুন শিল্পপতিদের উৎসাহ দিচ্ছি৷ আমরাই তাদের কাঁচামাল সরবরাহ করবো, যা দিয়ে ইউরোপেই ব্যাগ তৈরি করা যাবে৷''
আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিণতি এখনো স্পষ্ট নয়৷ এই সমস্যা উপেক্ষা করা যায়, অথবা এই প্রবণতা রুখতে কিছু করা যায়৷
অজান্তেই পেটে যাচ্ছে প্লাস্টিক
প্লাস্টিকের ছোট ছোট অংশ প্রতিদিন আমাদের পেটে ঢুকছে৷ জানতেও পারছি না আমরা৷ গায়ে মাখার ক্রিম থেকে খাবার, প্লাস্টিক সর্বত্র৷ তেমনই কিছু খাবারের সন্ধান দেওয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/JOKER/A. Stein
মুখভর্তি প্লাস্টিক
৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিকের অংশকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ ছোট ছোট এই প্লাস্টিকের অংশ গিয়ে মিশছে সমুদ্রে৷ ঢুকে পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রীতে৷ শুধু তাই নয়, বাতাসেও ছড়িয়ে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ টুথপেস্ট থেকে ক্রিম, মাছ থেকে জল সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
প্লাস্টিক দিয়ে মুখ ধোয়া
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোনো কোনো কসমেটিকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়৷ কখনো কখনো যার পরিমাণ প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি৷ কিন্তু আপাত চোখে কসমেটিকে প্লাস্টিক দেখা যায় না৷ তা লুকিয়ে থাকে ক্রিম বা টুথপেস্টের মধ্যে৷ ব্যবহার করলে কিছু অংশ ঢুকে যায় দেহের ভিতর৷ বাকি অংশ চলে যায় ড্রেনে৷
ছবি: picture-alliance/empics/Y. Mok
পানিতেও প্লাস্টিক
ড্রেনের জলে মিশে যাওয়া প্লাস্টিক পৌঁছে যায় সমুদ্রে৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সমুদ্রে গিয়ে মেশা প্লাস্টিক ঢুকে যায় জলজ উদ্ভিদে৷ মাছ সেই উদ্ভিদ খায়৷ ফলে তাদের শরীরেও পৌঁছে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ ২০১৭ সালের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বাজারের ২৫ শতাংশ মাছের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অংশ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Anka Agency International
এমনকি লবণেও...
২০১৭ সালে ইউরোপ, অ্যামেরিকা এবং চিনে একটি যৌথ গবেষণা হয়েছিল৷ তার রিপোর্টে বলা হয়, শুধু মাছ নয়, সমুদ্র উপকূল থেকে সংগৃহীত নুনের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে৷ তার কারণও আছে৷ প্রতি বছর প্রায় ১২ মিলিয়ন প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে মেশে৷ ফলে উপকূলবর্তী নুনেও তার অংশবিশেষ মিশে যায়৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Tetra
নিরাপদ নয় মধু
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জানিয়েছে, মধুতে প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে৷ এ কারণে মধু নিষিদ্ধ করারও একটি পরিকল্পনা হয়েছে৷ কিন্তু মধুতে কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশছে, সে বিষয়ে এখনো পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি৷
ছবি: Colourbox
জামা নয়, প্লাস্টিক
সুতি নয়, কিন্তু সিন্থেটিক জামায় প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে৷ কাপড় ধোয়ার সময় সেই প্লাস্টিক জামা থেকে বেরিয়ে ড্রেনের পানিতে গিয়ে মেশে৷ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৬ কিলোগ্রাম সিন্থেটিক জামা কাচলে তার থেকে ৭ লক্ষ প্লাস্টিক ফাইবার নির্গত হয়৷ ড্রেনের জলের মাধ্যমে তা গিয়ে পৌঁছায় সমুদ্রে৷ বস্তুত, সমুদ্রের জলে প্লাস্টিকের মোট পরিমাণের এক তৃতীয়াংশই জামা কাপড়ের মাইক্রোপ্লাস্টিক৷
ছবি: Imago/Mint Images
চাকায় প্লাস্টিক
গাড়ির চাকা থেকেও প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে গিয়ে মেশে৷ রবারের সঙ্গে সিন্থেটিক পলিমার মিশিয়ে তৈরি হয় গাড়ির টায়ার৷ রাস্তার সঙ্গে টায়ারের ঘর্ষণে সেই সিন্থেটিক পলিমার থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক রাস্তায় গিয়ে মেশে৷ কখনো বা বাতাসেও মিশে যায়৷ নরওয়ে এবং সুইডেনের বিভিন্ন পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, সমুদ্র থেকে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের একটা বড় অংশ গাড়ির চাকার পলিমার৷
ছবি: Colourbox/Akhararat
কল খুললেও প্লাস্টিক
কলের পানিতেও মিশে থাকছে প্লাস্টিক৷ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ থেকে কলের জল সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্তত ৮০ শতাংশ নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কলের পানিতেই প্লাস্টিক থাকলে যে কোনো খাবারেই তা সহজে মিশে যেতে পারে৷
ছবি: Imago/Westend61
বিয়ারেও ভয়
কলের পানিতেই যদি প্লাস্টিক থাকে, বিয়ারেও যে থাকবে, তা তো স্বাভাবিক! ২০১৪ সালের একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২৪টি জার্মান বিয়ারে প্লাস্টিক মিশে আছে৷ যদিও জার্মানির পরিবেশ সংক্রান্ত দফতর জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে৷