1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ‘অনার কিলিং’

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৭ জুলাই ২০১৩

ভারতের সমাজজীবন জাতপাতের বৃত্তে আবর্তিত হয়ে আসছে সুদূর অতীত থেকে৷ মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নির্ণীত হয় জাত বিচার করে, যা জন্মসূত্রে পাওয়া৷ তথাকথিত উঁচু ও নীচুজাতের মধ্যে বিয়ে, ভালোবাসাও কার্যত নিষিদ্ধ৷

ছবি: Fotolia/axentevlad

এর সাম্প্রতিকতম করুণ ও নিষ্ঠুর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুতে৷ এক উঁচুজাতের তরুণী মা-বাবার অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেছে এক দলিত যুবককে৷ তরুণীটি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে – এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই মেয়েটির বাবা তথাকথিত অপমানে আত্মহত্যা করেন৷ শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শেষে কারফিউ৷ মেয়ের বাড়ির লোকেরা মেয়েটিকে জোর করে নিয়ে যান ছেলেটির বাড়ি থেকে৷ বাড়তে থাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ৷ মামলা ওঠে আদালতে৷

বাড়ির লোকদের দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আদালতে এই বিয়ে ভেঙে দেবার আর্জি জানায়৷ এর আগে মেয়েটি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিল, প্রচণ্ড চাপের মুখে জাতপাতের এই সমাজের কাছে সে তাঁর ভালোবাসাকে বলি দিতে রাজি৷ মনে করা হচ্ছে, এই রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা ছিল পিএমকে দলের৷

ভারতে ২০১২ সালে ৩৩৩টি ‘অনার কিলিং'-এর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল

দু'দিন পরে দলিত ছেলেটির লাশ পাওয়া যায়৷ এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা মহলে ওঠে নানা থিওরি৷ কেউ বলে আত্মহত্যা, কেউ বলে হত্যা৷ তবে তাঁকে খুন করে রেললাইনের ধারে ফেলে দেয়া হয়, এমনটাই সন্দেহ পুলিশের৷ সমাজে এই ধরণের হৃদয়হীন, পাশবিক মানসিকতার ঘটনা অহরহ ঘটে চলছে৷ তবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে কিছু নারী সংগঠন৷ এ বছরের জানুয়ারি মাসে নিখিল ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠন দাঁড়িয়ে থেকে ডজন খানেক ভিন্ন ভিন্ন জাতের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়৷

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে জাতপাতের এই দাঙ্গা, রক্তপাত, হত্যা, বিচ্ছেদ, সামাজিক বয়কট ইত্যাদির মতো ‘অনার কিলিং'-এর মোকাবিলায় দরকার বিশেষ আইন, যার একটা খসড়া তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছে মহিলা সংগঠনগুলি৷ খসড়ার সুপারিশগুলির সঙ্গে মিল আছে ২৪২তম আইন কমিশনের রিপোর্ট এবং হালে প্রকাশিত ভার্মা কমিশনের রিপোর্টের৷ সেখানে এই ধরণের অপরাধে খাপ পঞ্চায়েত, তামিলনাড়ুর খাট্টা পঞ্চায়েতের ভূমিকা তুলে ধরা হয়৷ উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ৩৩৩টি ‘অনার কিলিং'-এর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল৷

এই ধরণের অপরাধ রোধে সংবিধান সংশোধনের কথা উঠলে সরকারের তরফে বলা হয় যে, তার কোনো প্রয়োজন নেই৷ অথচ আইন কমিশনের নির্দেশে বলা আছে, উঁচু জাতি, নীচু জাতি, সমগোত্র বা ভিন্ন ধর্মের তরুণ-তরণীদের ওপর অন্য কারোর ইচ্ছা-অনিচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দেয়া যাবে না৷

এমন কী, এই ঘৃণ্য প্রথার মূলোচ্ছেদ করার দৃঢ়সংকল্প দেখা যাচ্ছে না কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এবং কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলিতে৷ হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত একটি রাজনৈতিক প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী, যারা নিয়ন্ত্রণ করে ভোট ব্যাংক৷ রাজনীতি এবং জাতপাতের বৈষম্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল৷ তাতেই আবর্তিত হচ্ছে ভারতীয় রাজনীতি৷ আর তারই মাঝে গত ছয় মাসেই চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে কয়েক ডজন ভারতীয় তরুণ-তরণীর দ্বৈত জীবনের, ভালোবাসার স্বপ্ন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ