ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু
১৭ নভেম্বর ২০১৩হাতি ঘাতকের বদনাম যেন ভারতীয় রেল বিভাগের পিছু ছাড়ছে না৷ এই সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের ‘এলিফ্যান্ট করিডর' যেন হাতির পালের বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে৷ ডুয়ার্স এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া রেললাইনে চলতি সপ্তাহে ডিব্রুগড়গামী কবিগুরু এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে অন্তত ৬টি হাতি৷ জখম হয়েছে আরো ১০-১২টি৷ এই ধরণের ঘটনা হয়ে থাকে সন্ধ্যার অন্ধকারের সময়৷
উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি এবং আলিপুর দুয়ারের মধ্যকার ১৬৮ কিলোমিটার রেললাইনে ২০০৪ সাল থেকে মারা গেছে ৫২টি হাতি৷ তারমধ্যে এবছরেই ১৬টি৷ অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে অন্তত ৫টি হাতির মৃত্যু হয়ে থাকে ট্রেনের ধাক্কায়৷
ট্র্যাজিডির পর বন ও পরিবেশ বিভাগ আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড় করায় রেল বিভাগকে৷ অভিযোগ – হাতির মৃত্যু ঠেকাতে যে নির্দেশিকা দেয়া আছে ট্রেন চালক তা মানেন না৷ যেমন রেললাইনের যেসব জায়গা হাতির পালের পারাপারের জন্য চিহ্নিত সেসব এলাকায় ট্রেনের গতি কমিয়ে ২০ কিলোমিটারের বেশি না করার কথা বলা হয়েছে৷ পরিতাপের বিষয় ট্রেন চালক তথা রেল কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেয় না৷ তার পরিণামে হাতির মৃত্যু সংখ্যা বছর বছর বেড়েই চলেছে৷
রেল কর্তৃপক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ – চিহ্নিত ‘এলিফেন্ট করিডর' এলাকায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়ে থাকে৷ তবে সদ্য দুর্ঘটনাস্থলটি সম্ভবত ‘এলিফেন্ট করিডর' বলে চিহ্নিত ছিল না৷ এছাড়া হাতির পালের গতিবিধি সম্পর্কে বন বিভাগ থেকে রেল বিভাগকে আগাম খবর দেয়া হয় না৷
এর প্রতিকারের উপায় কী ? গ্রীন সক্রিয়বাদীদের মতে, দ্রুতগামী সব ট্রেন বনভূমি থেকে সরিয়ে অন্য লাইন দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া উচিত৷ ভারতে ৮৮টি চিহ্নিত ‘এলিফেন্ট করিডর' আছে৷ তারমধ্যে ৪০টি জাতীয় মহাসড়কে, ২১টি রেল লাইনে এবং ১৮টি রেল-কাম-সড়কে৷ অন্যত্র শত শত কিলোমিটার রেললাইন এবং সড়ক চলে গেছে বন্যপ্রাণীর আবাসভূমির মধ্য দিয়ে৷ ভারতের বিশাল রেল নেটওয়ার্কে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হলে গতি কম করাটা কোনো কাজের কথা নয়৷ রেলের আর্থিক দিকের সঙ্গে তাহলে আপোষ করতে হয়৷ সেটা কী মেনে নেয়া যায়? দুর্ঘটনা শুধু গতির জন্য হয় না৷ অন্যান্য কারণও থাকে৷
সমাধান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেললাইন ও সড়কগুলির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে যেন বন্য প্রাণীকুলের আবাসভূমিকে যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে চলা যায়৷ যেমন আলিপুর দুয়ার ও শিলিগুড়ির মধ্যে ৮০ কি:মি: পথ ফালাকাটা দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ এক কথায় সড়ক ও রেলপথের নক্সা পালটাতে হবে৷ ভারতের শীর্ষ আদালত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রেল ও সড়কের ওপর বা নীচে দিয়ে হাতি পারাপারের আলাদা রুট করা হলে হাতিরা সেটা দিয়ে যাবে কিনা৷ উত্তরে ইনস্টিটিউটের কর্তা ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেটা হাতিরাই বলতে পারে''!
কেনিয়ার জাতীয় উদ্যানে কিন্তু হাতি পারাপারের জন্য এই ধরণের ব্যবস্থা আছে৷ হাতির পালকে সেই পথেই যেতে বাধ্য করা হয়৷ আসামের মানস জাতীয় বন্যপ্রাণী পার্কেও আছে এই ধরণের ব্যবস্থা৷ মোট কথা, উন্নয়নের হাত ধরে বেড়ে চলেছে রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক৷ শোনা যাচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ ভারতীয় ট্রেনের গতিবেগ দাঁড়াতে পারে ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩৫০ কি:মি:৷ তার অনেকটা পড়বে অরণ্যভূমিতে৷ এখন পরিকল্পনাকারীদের ঠিক করতে হবে কে অগ্রাধিকার পাবে? উন্নয়ন, নাকি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ৷