1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে তিন তালাকের সাজা তিন বছর জেল

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিন তালাক প্রথা রদ হয়৷ তারই ভিত্তিতে মুসলিম বিবাহে নারী অধিকার সুরক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন তালাক প্রথায় বিবাহ বিচ্ছেদ করলে তা জামিনের অযোগ্য অপরাধ এবং এতে জরিমানাসহ তিন বছরের জেল হতে পারে৷

ভারতে মুসিলম বিবাহ
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Kakade

মুসলিম সমাজে একইসঙ্গে তিনবার ‘তালাক' উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রাচীন প্রথা, যাকে বলা হয় ‘তালাক-ই-বিদ্দাত' তা অবৈধ এবং তাতে মুসলিম বিবাহিতা মহিলাদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার লংঘিত হয়– গত ২২শে অগাস্ট এই মর্মে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ তা রদ করার রায় দেন৷ পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের তিনজন বিচারক বলেন এই প্রথা অনৈসলামিক এবং একতরফা৷ অন্য দু'জন বিচারক মনে করেন, ধর্মীয় প্রথা সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত এবং বিচারবিভাগের এক্তিয়ারের বাইরে৷ তালাক-ই-বিদ্দাত ইস্যুর জন্য উপযুক্ত আইন তৈরি করতে হবে৷ জানা গেছে, ২৪৪টি তিন তালাকের মধ্যে ১৭৭টি শীর্ষ আদালতের রায়ের আগে এবং ৬৭টি রায়ের পরে৷ সবথেকে বেশি হয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার রাজ্যে৷

LEELA_GANGULI_WC_CHIEF - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে মুসলিম মহিলাদের বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে৷ এই খসড়া আইনে তিন তালাক জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গন্য হবে এবং অপরাধীর তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে৷ স্ত্রী তাঁর নিজের এবং নাবালক পুত্র-কন্যাদের খোরপোষ এবং তাঁদের অভিভাবকত্বের দাবি নিয়ে আদালতে আর্জি জানাতে পারেন৷ প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়, কোনো মুসলিম স্বামী যদি মুখে বা লিখিতভাবে কিংবা ইলেকট্রনিক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন অথবা মুসলিম পুরুষ তালাক-ই-বিদ্দাত দিলে তা হবে অবৈধ৷ এই আইনের খসড়ার বিভিন্ন সংস্থান নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ কমিটিতে ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ৷

সরকারি সূত্রে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক প্রথা রদ করা সত্বেও তা বন্ধ হয়নি৷ মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ড শীর্ষ আদালতে আশ্বাস দেওয়া সত্বেও এই ইস্যুতে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেয়নি৷ পুলিশ প্রশাসনও অসহায় মুসলিম মহিলাদের স্বামীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে ইতঃস্তত করছে৷ কেন্দ্র বিলের খসড়া জরুরি ভিত্তিতে ১০ই ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুমোদনের জন্য রাজ্যগুলির কাছে পাঠিয়েছে যাতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তা পেশ করা যায়৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ১৫ই ডিসেম্বর থেকে৷ উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার প্রথম রাজ্য যে এই বিল ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছেন৷ রাজ্যের গত বিধানসভা ভোটে তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে মুসলিম মহিলাদের ভোটপেয়েছিল৷ প্রস্তাবিত আইন অবশ্য ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে বলবত হবে না৷

ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের ‘এহসান' প্রথার পক্ষপাতি যেখানে সালিশি প্রক্রিয়া চলবে কমপক্ষে ৯০ দিন এবং সেটা শুরু হবে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে থেকে এবং তা হবে বাধ্যতামূলক৷ তা নাহলে স্রেফ সাজা দিয়েই তা শেষ হবে৷ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই৷ শুধু তাই এই বিলে মুসলিম মহিলা এনজিও এক বিবৃতিতে এই বিলে হালালা এবং বহুবিবাহ অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে৷ এই এনজিওর সদস্য সংখ্যা হবে প্রায় ৭০ হাজারের মতো৷ ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বিবহ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় রায় দেন যে, যে-কোনো ধর্মেই বিবাহ মানে একজন মহিলার আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান স্বামীর কাছে বা সেই ধর্ম সম্প্রদায়ের বন্ধক রাখা নয়৷

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রধান লীনা গঙ্গোপাধ্যায় তিন তালাক সংক্রান্ত খসড়া বিল সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বললেন, তিন তালাক প্রথা মুসলিম পুরুষদের চরম স্বেচ্ছারিতা৷ তিনবার তালাক উচ্চারণ করে মুহূর্তের মধ্যেই এক মহিলার সঙ্গে সব সম্পর্ক অস্বীকার করা অনৈতিক, অমানবিক৷ এটা কখনোই মানা যায় না৷ সেক্ষেত্রে তিন বছরের জেল জরিমানা কোনো ফ্যাক্টরই নয়৷ এভাবে একজন পুরুষ কোনো মহিলাকে অসম্মান করতে পারে না৷ আর ধর্মের ক্ষেত্রে কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলছেন? তাই বা কি করে হয়? ধর্ম কি কোর্টের উর্ধে? ধর্ম মানুষের তৈরি, কোর্টও মানুষের তৈরি, মানুষের প্রয়োজনে. কোনোটাই তার উর্ধে নয়৷ মানুষই শেষ কথা৷ মানুষের মৌলিক অধিকার এবং আত্মসম্মান যেখানে পদদলিত হয়, সেখানেই প্রতিবাদ করার প্রয়োজন হয়৷ যেখানে মৌলিক অধিকার লাঞ্ছিত হয়, সেখানেই প্রতিবাদ করার ভাষা থাকে৷ শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায় এবং সরকারি আইনের বিল সেদিক থেকে একটা বিরাট পদক্ষেপ৷ অনেক বঞ্চনা, অনেক জমা কান্না আর অসম্মানের উত্তর৷ অনেক আগেই এটা করা উচিত ছিল৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ