সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিন তালাক প্রথা রদ হয়৷ তারই ভিত্তিতে মুসলিম বিবাহে নারী অধিকার সুরক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন তালাক প্রথায় বিবাহ বিচ্ছেদ করলে তা জামিনের অযোগ্য অপরাধ এবং এতে জরিমানাসহ তিন বছরের জেল হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
মুসলিম সমাজে একইসঙ্গে তিনবার ‘তালাক' উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রাচীন প্রথা, যাকে বলা হয় ‘তালাক-ই-বিদ্দাত' তা অবৈধ এবং তাতে মুসলিম বিবাহিতা মহিলাদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার লংঘিত হয়– গত ২২শে অগাস্ট এই মর্মে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ তা রদ করার রায় দেন৷ পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের তিনজন বিচারক বলেন এই প্রথা অনৈসলামিক এবং একতরফা৷ অন্য দু'জন বিচারক মনে করেন, ধর্মীয় প্রথা সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত এবং বিচারবিভাগের এক্তিয়ারের বাইরে৷ তালাক-ই-বিদ্দাত ইস্যুর জন্য উপযুক্ত আইন তৈরি করতে হবে৷ জানা গেছে, ২৪৪টি তিন তালাকের মধ্যে ১৭৭টি শীর্ষ আদালতের রায়ের আগে এবং ৬৭টি রায়ের পরে৷ সবথেকে বেশি হয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার রাজ্যে৷
LEELA_GANGULI_WC_CHIEF - MP3-Stereo
মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে মুসলিম মহিলাদের বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে৷ এই খসড়া আইনে তিন তালাক জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গন্য হবে এবং অপরাধীর তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে৷ স্ত্রী তাঁর নিজের এবং নাবালক পুত্র-কন্যাদের খোরপোষ এবং তাঁদের অভিভাবকত্বের দাবি নিয়ে আদালতে আর্জি জানাতে পারেন৷ প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়, কোনো মুসলিম স্বামী যদি মুখে বা লিখিতভাবে কিংবা ইলেকট্রনিক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন অথবা মুসলিম পুরুষ তালাক-ই-বিদ্দাত দিলে তা হবে অবৈধ৷ এই আইনের খসড়ার বিভিন্ন সংস্থান নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ কমিটিতে ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ৷
বিবাহবিচ্ছেদ আইন
বাংলাদেশে দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে৷ বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের নাগরিকরা আইন অনুযায়ী কীভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন, সেই তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: privat
ইসলাম
১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশনকে পাঠাতে হবে৷ মুখে তালাক দিলে সেটি কার্যকর হবে না৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমান নয়
স্বামী কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রীকে তালাক দিতে পারলেও, স্ত্রী সেটা করতে পারেন না৷ এর জন্য আইনে কতগুলো কারণ উল্লেখ আছে৷ শুধুমাত্র সেসব কারণেই স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়েকটি কারণ
স্বামী চার বছর ধরে নিরুদ্দেশ থাকলে, দুই বছর স্ত্রীর ভরণপোষণ না দিলে বা ব্যর্থ হলে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে, সাত বছরের বেশি কারাদণ্ড পেলে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে, দুই বছর ধরে অপ্রকৃতিস্থ থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ বা মারাত্মক যৌনরোগে আক্রান্ত থাকলে৷ বাকি কারণগুলো জানতে উপরে (+) বাটনে চাপ দিন৷
ছবি: LIB
হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ
একটা সময় ছিল যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা আবার বিয়ে করতে চাইলে, স্ত্রীকে আগে হিল্লা বিয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হত৷ এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ের ব্যক্তি (স্বামী) স্ত্রীকে তালাক দিলে বা মারা গেলে স্ত্রী পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করতে পারতেন৷ মধ্যবর্তীকালীন এই বিয়ের নামই হচ্ছে ‘হিল্লা’ বিয়ে৷ তবে বর্তমানে এটি নিষিদ্ধ৷
ছবি: infokosh.gov.bd
হিন্দু ধর্ম
সনাতন হিন্দু আইনে সরাসরি বিবাহবিচ্ছেদের কোনো বিধান নেই৷ তবে ভারতে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে আনা অভিযোগ প্রমাণ হলে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব৷ এছাড়া ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ীও ডিভোর্স সম্ভব৷ তবে বাংলাদেশে এ সব আইন প্রযোজ্য নয়৷ স্ত্রী যদি একান্তই স্বামীর সঙ্গে থাকতে না চান তাহলে তিনি অন্য কোথাও আলাদা থাকতে পারেন৷ এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকারী৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. Singh
খ্রিষ্টান ধর্ম
বাংলাদেশে এক্ষেত্রে ১৮৬৯ সালের ‘ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট’ মানা হয়৷ তবে ক্যাথলিকরা এই আইনের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন না, কারণ ক্যাথলিকরা বিবাহবিচ্ছেদ মানেন না৷ তবে প্রোটেস্ট্যান্টরা এই আইনের আওচায় বিবাহবিচ্ছেদ করে থাকেন৷ এই আইনে অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে স্বামীর মতো সমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: privat
6 ছবি1 | 6
সরকারি সূত্রে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক প্রথা রদ করা সত্বেও তা বন্ধ হয়নি৷ মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ড শীর্ষ আদালতে আশ্বাস দেওয়া সত্বেও এই ইস্যুতে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেয়নি৷ পুলিশ প্রশাসনও অসহায় মুসলিম মহিলাদের স্বামীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে ইতঃস্তত করছে৷ কেন্দ্র বিলের খসড়া জরুরি ভিত্তিতে ১০ই ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুমোদনের জন্য রাজ্যগুলির কাছে পাঠিয়েছে যাতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তা পেশ করা যায়৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ১৫ই ডিসেম্বর থেকে৷ উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার প্রথম রাজ্য যে এই বিল ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছেন৷ রাজ্যের গত বিধানসভা ভোটে তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে মুসলিম মহিলাদের ভোটপেয়েছিল৷ প্রস্তাবিত আইন অবশ্য ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে বলবত হবে না৷
ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের ‘এহসান' প্রথার পক্ষপাতি যেখানে সালিশি প্রক্রিয়া চলবে কমপক্ষে ৯০ দিন এবং সেটা শুরু হবে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে থেকে এবং তা হবে বাধ্যতামূলক৷ তা নাহলে স্রেফ সাজা দিয়েই তা শেষ হবে৷ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই৷ শুধু তাই এই বিলে মুসলিম মহিলা এনজিও এক বিবৃতিতে এই বিলে হালালা এবং বহুবিবাহ অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে৷ এই এনজিওর সদস্য সংখ্যা হবে প্রায় ৭০ হাজারের মতো৷ ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বিবহ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় রায় দেন যে, যে-কোনো ধর্মেই বিবাহ মানে একজন মহিলার আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান স্বামীর কাছে বা সেই ধর্ম সম্প্রদায়ের বন্ধক রাখা নয়৷
পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রধান লীনা গঙ্গোপাধ্যায় তিন তালাক সংক্রান্ত খসড়া বিল সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বললেন, তিন তালাক প্রথা মুসলিম পুরুষদের চরম স্বেচ্ছারিতা৷ তিনবার তালাক উচ্চারণ করে মুহূর্তের মধ্যেই এক মহিলার সঙ্গে সব সম্পর্ক অস্বীকার করা অনৈতিক, অমানবিক৷ এটা কখনোই মানা যায় না৷ সেক্ষেত্রে তিন বছরের জেল জরিমানা কোনো ফ্যাক্টরই নয়৷ এভাবে একজন পুরুষ কোনো মহিলাকে অসম্মান করতে পারে না৷ আর ধর্মের ক্ষেত্রে কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলছেন? তাই বা কি করে হয়? ধর্ম কি কোর্টের উর্ধে? ধর্ম মানুষের তৈরি, কোর্টও মানুষের তৈরি, মানুষের প্রয়োজনে. কোনোটাই তার উর্ধে নয়৷ মানুষই শেষ কথা৷ মানুষের মৌলিক অধিকার এবং আত্মসম্মান যেখানে পদদলিত হয়, সেখানেই প্রতিবাদ করার প্রয়োজন হয়৷ যেখানে মৌলিক অধিকার লাঞ্ছিত হয়, সেখানেই প্রতিবাদ করার ভাষা থাকে৷ শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায় এবং সরকারি আইনের বিল সেদিক থেকে একটা বিরাট পদক্ষেপ৷ অনেক বঞ্চনা, অনেক জমা কান্না আর অসম্মানের উত্তর৷ অনেক আগেই এটা করা উচিত ছিল৷
ডিভোর্স – কেন? বিয়ে টিকিয়ে রাখার উপায়ই বা কী?
অনেকের কাছে ‘বিয়ের’ দিনটি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও স্মরণীয় দিন হলেও ডিভোর্সের হার দিনদিন বেড়ে চলেছে, প্রায় সর্বত্রই৷ কিন্তু কী কারণে? ডিভোর্সের হার কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: Fotolia/Jens Klingebiel
ডিভোর্সের কারণ
সুখে, দুঃখে সারাজীবন একে-অপরের সঙ্গী থাকা – সেকথা ভেবেই তো বিয়ে! কিন্তু বিয়ের পর যতদিন যায়, বেরিয়ে আসে দু’জনের মধ্যকার নানা অমিল৷ এগুলোই এক সময় ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাবুঝির অভাব, পরকীয়া প্রেম, অতৃপ্ত যৌনজীবন, নির্যাতন, অহংকার, সন্তান মানুষ করা নিয়ে মতভেদ, সংসারের কাজে অনীহা ইত্যাদি কারণে তালাক হয় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/Marco Scisetti
কমিউনিকেশন গ্যাপ
২০১৪ সালে জার্মানিতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়েছে৷ ডিভোর্সের কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই রাখা হয়েছে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’, অর্থাৎ বিবাহের বন্ধনকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ করতে যতটা কথাবার্তা ও আবেগ অনুভূতি বা ভালোবাসার প্রকাশ বা আলোচনা দরকার, তা না হওয়াকে৷ এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়, দূরত্ব বাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরকীয়া প্রেম
দাম্পত্যজীবনের প্রথম শর্তই হলো ‘বিশ্বাস’ আর সেটা যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই তা তালাকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ দাম্পত্যজীবনকে ছেলেখেলা ভেবে অনেকেই অন্য নারী বা পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় কিংবা পুরনো প্রেমের সম্পর্ককে আবার জিইয়ে তোলে৷ এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই অপরজনের পক্ষে তা মনে নেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে বিয়েটা ডিভোর্সে গিয়ে শেষ হয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/Armin Weigel
যৌনজীবন অতৃপ্ত হলে
শারীরিক ভালোবাসা বা যৌনসুখের দাম্পত্যজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ এই সুখের কমতি বা ভাটা পড়লে অনেকক্ষেত্রেই দেখা দেয় সমস্যা৷ আমাদের দেশে দম্পতিদের শোবার ঘরের এই সমস্যার কথা নিয়ে বাইরে আলোচনা করা না হলেও, জার্মানি বা পশ্চিমা বিশ্বে সরাসরি তা আলোচনায় আসে৷ অতৃপ্ত যৌনসুখের কারণে অনেক সংসারই ভেঙে যায় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
কাজ ভাগাভাগি না করা
চাকরি বা নিজস্ব একটা পেশা এখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রয়েছে৷ পাশাপাশি বাজার, রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, বাগান করা, আতিথেয়তা, সন্তানদের দেখাশোনা – সংসারের কাজ তো আর কম নয়! এ সব কাজ দু’জনে মিলেমিশে করলে যত সহজে করা সম্ভব, একজনের পক্ষে তা সম্ভব নয়৷ যদি এ সব কাজ শুধুমাত্র একজনকে করতে হয়, তাহলেই দেখা দেয় সমস্যা৷ অর্থাৎ এটাও বিবাহবিচ্ছেদের একটা কারণ৷
ছবি: Konstantin Yuganov - Fotolia.com
আমিই সব
অনেক স্বামী বা স্ত্রী নিজের মতামত বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর হবি, আনন্দ, সুখের জন্য যা যা দরকার সবই করেন৷ কিন্তু উল্টোদিকে তাঁর সঙ্গীর সখ বা ইচ্ছার কোনো মূল্যই দিতে চান না৷ ফলে অন্যজনের পক্ষে এই স্বার্থপরতা বা একগুঁয়েভাব বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ ফলাফল – ডিভোর্স! অর্থাৎ একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধবোধ না থাকলে সম্পর্ক বেশি দিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়!
তালাকের কারণ টাকা
সংসারে প্রয়োজনীয় টাকা অভাবে যেমন তালাক হয়, আবার প্রচুর টাকা থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে৷ দু’টি স্বতন্ত্র মানুষের আলাদা জগত থাকতে পারে, কিন্তু সেই জগত দু’টির একটা মেলবন্ধন জরুরি৷ অতিরিক্ত অর্থ অনেকসময় এটা হতে দেয় না৷ কারণ অতিরিক্ত টাকা-পয়সা কিভাবে সংসার, সন্তান বা অন্য কিছুতে খরচ করা হবে, তা নিয়েও শুরু হতে পারে ঝগড়া৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’
বাড়িতে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন করাকে ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ বলা হয়৷ মানসিক নির্যাতন সেভাবে প্রমাণ করা না গেলেও, শারীরিক নির্যাতন তার প্রমাণ রেখে যায়৷ এই নির্যাতনের স্বীকার হয় সাধারণত নারীরাই৷ এই যন্ত্রণা ও অত্যাচার বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ তাই এ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ডিভোর্সের আবেদন করে থাকেন জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/detailblick
বাংলাদেশে ডিভোর্সের কারণ
২০১৪ সালে শুধুমাত্র ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেই ডিভোর্সের সংখ্যা ছিল ৫,৪১৮টি৷ বাংলাদেশে ডিভোর্সের হার দ্রুতগতিতে বাড়ার অন্যান্য কারণের পাশাপাশি জি বাংলা, স্টার প্লাসের মতো টিভি চ্যানেল, অতি আধুনিকতা, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবকে দায়ী করছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু মোহাম্মদ নূরসহ বেশ কয়েকজন৷
সন্তান না হওয়া, বড় কোনো অসুখ, যৌন সমস্যা, অন্য দেশে থাকতে চাওয়ার মতো বিশেষ কারণ হলে হয়ত বিবাহবিচ্ছেদ রোধ করা সম্ভব নয়৷ তবে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ যদি, ভালোবাসা, আবেগ, ভুল বোঝাবুঝি, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি কারণ হয়, তাহলে দু’জন কিছুটা সচেতন ও আগ্রহী হলে বিবাহবিচ্ছেদ আটকানো যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance / Markus C. Hurek
সংসার টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার যত্ন
একে-অপরকে নিয়ে খানিকটা ভাবুন, কাজের স্বীকৃতি দিন, সমালোচনা না করে মাঝে-মধ্যে একে-অপরের প্রশংসা করুন, কাজ ভাগাভাগি করে নিন৷ সবচেয়ে বড় কথা দু’জনে মিলে সব কিছু প্ল্যান করুন, আলোচনা করুন আর সে আলোচনায় মাঝে মাঝে সন্তানদেরও সাথে নিন৷ ভালোবাসা গাছের মতো৷ যত্নে ভালোবাসায় তা ফুলে-ফলে ভরে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/G. Fischer
ঝগড়া এড়িয়ে চলুন
ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন, যাঁরা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ ঝগড়া অবশ্য শুধু ডিভোর্সের কারণই হয় না, মৃত্যুকেও এগিয়ে আনে৷ আর সন্তানের সামনে তো ঝগড়া নয়ই৷ এতে সন্তানের মধ্যে যেমন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তেমনই কমে যেতে পারে মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধও৷
ছবি: goodluz - Fotolia
প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন
ভুল মানুষ করতেই পারে৷ তাই স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো ভুল বা অন্যায় করে থাকে, তাহলে সেটা একে-অপরকে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন৷ দু’জনে দু’জনের প্রতি বিশ্বাস রাখুন৷ অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনোরকম গোপনীয়তা যেন না থাকে৷ তবে তার মানে অন্যের ওপর নজর রাখা কিন্তু একেবারেই নয়৷ অন্যের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিন৷ ভুলে যাবেন না যে, বিশ্বাসই দাম্পত্যজীবনের মূল ‘চাবিকাঠি’৷
ছবি: Colourbox/Kzenon
13 ছবি1 | 13
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷