সরকারকে বেশি দামে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মুকেশ আম্বানি এবং বর্তমান ও প্রাক্তন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
বিজ্ঞাপন
দুর্নীতি-বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবার তোপ দেগেছেন ওপর মহলের দিকে৷ তাঁর মতে দুর্নীতি শুরু হয় ওপর মহলে, পরে সেখান থেকে চুঁইয়ে পড়ে নীচের দিকে৷ তাই ব্যবস্থা নিতে হবে সেখান থেকেই৷ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও তার কর্ণধার এবং দেশের সবথেকে ধনী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, বর্তমান পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি, প্রাক্তন মন্ত্রী মুরলি দেওরা এবং প্রাক্তন হাইড্রোকার্বন বিভাগের মহাঅধিকর্তা ভি.কে সিব্বালের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর যোগসাজসের অভিযোগে কেজরিওয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির দুর্নীতি দমন শাখাকে৷ অভিযোগ, দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা-গোদাবরি অববাহিকার তেল ও গ্যাস উৎপাদন ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি কোরে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৮.৪ ডলার, যেটা উৎপাদন ব্যয় থেকে অনেক বেশি৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে এর প্রভাব অনিবার্য৷
কেজরিওয়ালের অভিযোগ অনুসারে হাইড্রোকার্বন বিভাগের ডিজিকে লেখা চিঠিতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গ্যাসের উৎপাদন খরচের হিসেবে দেখিয়েছে প্রতি এমবিটিইউ গ্যাসের দাম পড়ে এক মর্কিন ডলারের কম৷ কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে ১৭ বছরের জন্য গ্যাস সরবরাহের চুক্তি হয় প্রতি এমবিটিইউ গ্যাসের দাম ২.৩৪ ডলার দরে৷ তারপর মন্ত্রীদের যোগসাজসে তা বাড়িয়ে করা হয় ৪.২ ডলারে, এমনটাই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর৷
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এই যুক্তিও দেখান যে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ দাম বাড়ালেও তার বাণিজ্যিক পার্টনার নিকো রিসোর্সেস সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করে প্রতি এমবিটিইউ ২.৩৪ মার্কিন ডলারে৷ ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে, ভারত তার নিজের গ্যাস কিনবে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে৷ ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ডলারে স্থির না করে করা দরকার ভারতীয় টাকায়৷ কারণ উৎপাদন ব্যয় হয় ভারতীয় টাকায়৷ এই বর্ধিত দাম কার্যকর হবে আগামী এফ্রিল মাস থেকে৷ এই গ্যাস প্রধানত ব্যবহার করা হয় সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে৷ প্রসঙ্গত, একই অভিযোগ এর আগে দায়ের করেছিলেন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেছেন, এই সব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই৷ দিল্লি নতুন মুখ্যমন্ত্রী জানেনই না কী করে সরকার চালাতে হয়৷ পেটেরোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ানো হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে৷ অনুরূপ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে৷ বলা হয়েছে, প্রতিটি অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন৷ এর জন্য উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মুকেশ আম্বানির ছোট ভাই অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অধীন দুটি সংস্থা দিল্লিতে বিদ্যুৎ বন্টনে দাম বাড়ানো নিয়ে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে৷ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, রাঘব বোয়ালদের সঙ্গে কেজরিওয়াল কতটা পেরে উঠবেন তাতে সন্দেহ আছে৷ পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্যও তাই৷ এমনকি, নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও দুর্নীতি দমনে কতটা সফল হবে, তাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ কারণ যে দলই ক্ষমতায় আসুক বেশির ভাগেরই টিকি বাঁধা একই জায়গায়৷