ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক ডিভিশন বেঞ্চ৷ রাজনৈতিক দলগুলি এই রায়কে স্বাগত জানালেও রায় কার্যকর করা নিয়ে কেউ কেউ সন্দিহান৷
বিজ্ঞাপন
ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবৈধ বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুরের নেতৃত্বে সাত জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত এক ডিভিশন বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই রায় দেন গত সোমবার৷ তিন জন বিচারক অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন৷ জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩(৩) ধারা অনুসারে রায়ে বলা হয়েছে, কেবল প্রার্থীরই নয়, ভোটারদেরও ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার জিগির তুলে নির্বাচনী প্রচারকরা যাবে না৷এমনকি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টও যদি নিজের সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তা হলেও সেটা হবে বেআইনি৷
উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন৷অন্য রাজ্যগুলি হলো পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড. গোয়া ও মনিপুর৷ঐসব রাজ্যে সাধারণত ধর্ম ও জাতপাতের ভিত্তিতেই ভোট পড়ে৷আগেও শীর্ষ আদালতের অনুরূপ এক রায়ে শুধু প্রার্থীর ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার কথাই বলা হয়েছিল, ভোটারদের নয়৷ নতুন রায়ে ভোট প্রার্থীর সঙ্গে ভোটাদাতাদের মধ্যে প্রচারকেও এর আওতায় আনা হয়েছে৷
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷
ছবি: Reuters/S. Pring
6 ছবি1 | 6
বেঞ্চের বিচারকদের মতের বিভাজন ছিল ব্যক্তির ধর্ম বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা নিয়ে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য, ব্যক্তিবিশেষের সবারই নিজস্ব ধর্মাচরণের অধিকার আছে, সেখানে রাষ্ট্রের নাক গলানোর অধিকার নেই৷ রাষ্ট্রকে এটা সর্বদাই মাথায় রাখতে হবে৷ অন্যথায় সেটা হবে অবৈধ কাজ৷ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বা ভোটের কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না৷ নির্বাচন এক ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ অবশ্যই হতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ, বলেছেন প্রধান বিচারপতি টি.এস ঠাকুর৷ বেঞ্চের সংখ্যালঘিষ্ঠদের পক্ষে বিচারপতি ডি. চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য, এখনও ধর্ম, জাতপাত এবং ভাষার ভিত্তিতে দেশের জনগণের একটা বড় অংশ বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার৷ এটাই ভারতীয় সমাজের এক নির্মম বাস্তবতা, সেটাকে অস্বীকার করা কঠিন৷ সংবিধানেও তাঁদের ন্যায় বিচারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে৷
রাজনৈতিক দলগুলি যা বলছে
মোটামুটিভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি মুখপাত্র বলেছেন, বিজেপি সর্বদাই রাষ্ট্রবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ রায়ে সেকথাই বলা হয়েছে, মূলত নতুন কিছু বলা হয়নি৷ কাজেই এই রায় স্বাগতযোগ্য৷ কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, ধর্ম, জাতপাত ও আঞ্চলিকতা দেশের মূল্যবোধের বিপরীত যে মূল্যবোধের ওপর দেশ ও সংবিধান প্রতিষ্ঠিত৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেটাই বলা হয়েছে৷ রায়কে স্বাগত জানানো হলেও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতে, এই রায়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে, যেখানে জাতপাতভেদে বৈষম্য করা হয়ে থাকে, সেটাকে আরও স্পষ্ট করা উচিত৷ কমিউনিস্ট পার্টি নেতা ডি. রাজা মনে করেন, রায় যথার্থ হলেও ভাষা ও জাতপাতের বিষয়ে আরো সতর্ক হলে ভালো হতো, কারণ, দলিত, আদিবাসীসহ সমাজের একটা অংশ এখনও বঞ্চনা ও হিংসার শিকার৷ তৃণমূল কংগ্রেস এই রায় নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি৷
ভারতের কিছু বিতর্কিত আইন
ভারতে এমন কিছু কিছু আইন আছে, যা খুবই স্পর্শকাতর৷ তাই এ সব আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বিতর্ক৷ তখন শেষ পর্যন্ত আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, দিতে হয় সমাধান৷ এই রকমই কয়েকটি আইন তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
৩৭০ ধারা
ভারতীয় সংবিধানের এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় কতগুলি ক্ষেত্রে স্বশাসনের বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য গণপরিষদ এর সংশোধনের সুপারিশ না করায়, এটা এ মুহূর্তে স্থায়ী বিধান হয়ে আছে৷ তবে জাতীয় নিরাপত্তা, অত্যাবশ্যক পণ্য, সর্বভারতীয় নিয়োগ বিধি, কর ও শুল্ক, আদালত, মানবাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীর অন্যান্য রাজ্য থেকে অভিন্ন৷
ছবি: Mohammadreza Davari
সোচ্চার সংঘ পরিবার
৩৭০ নম্বর ধারা রদ করার জন্য ভারতে সংঘ পরিবারের মতো কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলি জোর আন্দোলন শুরু করেছে৷ সরকারকে তারা ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে এ জন্য৷ তাদের মতে, এই ধারা ভারতের সংহতি ও অখণ্ডতার পরিপন্থি৷ শুধু তাই নয়, এই ধারা নাকি জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য অনেকখানি দায়ী৷ সরকার অবশ্য এই বিতর্কে নিজেকে জড়াতে চাইছে না৷
ছবি: AP
এএফএসপিএ বা আফস্পা
সেনাবাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন বা এএফএসপিএ কার্যকর হয় ১৯৫৮ সালে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীরে৷ জঙ্গি তৎপরতা রুখতে এই আইনে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে অবাধ ক্ষমতা৷ এতে করে ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার, যখন খুশি তল্লাসি, কোনো কারণ না দেখিয়ে আটক এবং নির্যাতন করতে পারে মিলিটারি৷ তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, এ আইন অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবত থাকতে পারে না৷ বরং ক্ষেত্রবিশেষে তদন্ত করতে হবে৷
ছবি: AP
প্রতিবাদী নারী শর্মিলা চানু
মানবাধিকার সংগঠনগুলি আফস্পার বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ অভিযোগ, গত দু’দশকে মনিপুরে এ আইনকে কাজে লাগিয়ে সাজানো সংঘর্ষে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও মনিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ বছর ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু৷ নাকে ১৬ ইঞ্চির টিউব লাগানো তাঁর এই প্রতিবাদী ছবি গোটা দুনিয়া চেনে৷ আত্মহত্যার মামলা দায়ের করেও তাঁকে থামানো যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
৩৭৭ ধারা
ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামিতা এখনও অপরাধ৷ সমলিঙ্গের দুই প্রাপ্তবয়স্ক যদি পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনকাজে লিপ্ত হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলেও ৩৭৭ নং ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ১০ বছরের জেল, এমনকি যাবজ্জীবন কারাবাসও হতে পারে৷ ভারতের সমকামী গোষ্ঠীগুলি ব্যক্তিস্বাধীনতার খেলাপ মনে করে এই আইন বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিীন ধরে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে ভারতের জনমত বিভাজিত৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Kakade
এলজিবিটি সম্প্রদায়ের নতুন পিটিশন
সম্প্রতি ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদটির বিরুদ্ধে আবারো পিটিশন দায়ের করেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সেলিব্রেটি৷ বের হয় মিছিলও৷ হাতের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে লেখা থাকে ছিল, ‘সমকামীদের ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেবার অধিকার দিতে হবে৷’ ঋতু ডালমিয়া, আমন নাথ এবং নৃত্যশিল্পী এনএস জোহর-এর মতো তারকারা ছিলেন সেই মিছিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণপ্রথা বিরোধী আইন
ভারতে আজও পণপ্রথা বিরোধী আইনের ৪৯৮-এ ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কখনও কখনও ঘটে যায় বধু হত্যার মতো ঘটনা৷ এই ধারা অনুযায়ী, বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে স্ত্রী আত্মহত্যা করলে বা তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, স্বামী বা অন্য সদস্যদের প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা নির্দোষ৷ তা নাহলে বধু নির্যাতনের অপরাধে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷ তবে স্ত্রী যাতে এই আইনের অপব্যহার না করেন, সেদিকটাও এবার খতিয়ে দেখতে চায় আদালত৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
আত্মহত্যা না খুন?
এ বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির ফতেপুর বেরিতে ২২ বছরের নববিবাহিতা বধু ববিতাকে শ্বশুরবাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ বৌটির বাপেরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, পণের জন্য ববিতার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা৷ আর সে কারণেই ববিতা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় অথবা আত্মহত্যার মোড়কে তাঁকে খুন করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই৷
ছবি: Getty Images/AFP
জাতিভেদ প্রথা অপরাধযোগ্য
জাতিভেদ বা অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আইনের ১৭নং ধারায় এই আইন লঙ্ঘনে ছ’মাসের জেল ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কারণ মানুষের ব্যক্তি অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ সামাজিক মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া, ওঠা-বসা, ধর্মীয় স্থানে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে নীচু জাত আর উঁচু জাতের মধ্যে বিভেদ করা অবৈধ৷ ১৯৭১ সালে আইনটি সংশোধন করে তার নাম দেওয়া হয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা আইন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
দলিতরা কি মানুষ নয়?
মন্দির তো দূরের কথা, সম্প্রতি গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু গ্রামে দলিত ও হরিজনদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হয় গ্রামের মোড়লদের নির্দেশে৷ এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিলে, পুলিশ পাহারা বসাতে হয়৷ শেষে দলিতরা নিজেদের জন্য আলাদা কুঁয়ো খুঁড়ে নেন৷ প্রচণ্ড খরা সত্ত্বেও গুজরাটের মেহসানা জেলার ডজন খানেক মহিলা কাকুতি-মিনতি করলেও তঁদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে দেওয়া হয়নি৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
লিঙ্গ বৈষম্য নিরোধক আইন
দেব-দেবীর মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার না থাকায়, তার বিরুদ্ধে নারীবাদী সংগঠনগুলি সোচ্চার সর্বদাই৷ কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের মন এতে টলেনি৷ ধর্মগুরুদের মতে, প্রাচীনকাল থেকেই মাসিকের সময় মেয়েদের ‘অশুচি’ বলে গণ্য করা হয়৷ তাই তাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না৷ এ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে মুম্বই হাইকোর্ট মন্দির প্রবেশাধিকার আইন ১৯৪৭ অনুসারে রায় দেয় যে, মন্দিরে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না৷
ছবি: Reuters/Anindito Mukherjee
মন্দিরে প্রবেশাধিকার নিয়ে আবারো আপিল
তৃপ্তি দেশাইয়ের নেতৃত্বেই একদল মহিলা মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে একটি শনি মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে, তাঁরা সেখানেই ধর্ণা দেন৷ মুম্বইয়ের রাস্তায় মন্দিরে মেয়েদের অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়৷ এরপর কিছু কিছু মন্দিরে নারীরা প্রবেশাধিকার পেলেও, কেরালার সবরিমালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
মুসলিম শরিয়ত বিধি ১৯৩৭
‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ নিয়ে সরকার দোটানায়৷ সংবিধানে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু মুসলমানদের জন্য সামাজিক বা পারিবারিক বিবাদে কোরান-ভিত্তিক শরিয়ত আইনই শেষ কথা৷ তবে মুসলিম নারীরা বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষদের এক তরফা তিন তালাকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে৷ আওয়াজ তুলেছে বহুবিবাহ, তালাক ও খোরপোষের দাবিতে৷ একদিকে সংবিধান, অন্যদিকে মুসলিম পুরুষ সমাজ৷ বিযয়টি তাই আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাহ বানুর পর সায়রা বানু
ভারতের দেরাদনের ৩৫ বছরের সায়রা বানু সম্ভবত প্রথম মুসলিম মহিলা, যিনি সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক প্রথা রদ করার আর্জি জানিয়েছেন৷ সায়রা বানু উত্তরাখণ্ডে বাপের বাড়িতে গেলে তাঁর স্বামী রিজওয়ান আহমেদ এলাহাবাদ থেকে তালাকনামা পাঠিয়ে ১৫ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টানতে চান৷ বিয়ের পরে বহবার গর্ভপাতে আজ অসুস্থ সায়রা৷ তারপরও এই অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মরিয়া সায়রা বানু৷
ছবি: Reuters
14 ছবি1 | 14
শীর্ষ আদালতের রায় বাস্তবে রাজনৈতিক ময়দানে কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টি.এস কৃষ্ণমূর্তি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাইলে প্রার্থীপদ নাকচ করার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি৷ সেটা দিলে তবে কাজ হতে পারে৷'' বর্তমানে নির্বাচন কমিশন বড়জোর আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে৷ এই রায় কার্যকর করার বিষয়ে সুশীল সমাজই বা কী বলছে ? ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের প্রবীণ অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ মনে করেন, জনমতই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার যে ধারা আছে ভোটের রাজনীতিতে দেখেছি বারংবার তা আক্রান্ত হতে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা কিছুটা প্রতিহত হবে৷'' তাঁর মতে, ‘‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করছে তাঁরা যদি ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পারে, তাহলে জনমত সেদিকেই যাবে৷ এই রায় তাঁদের হাতে হবে একটা বৈধ হাতিয়ার৷'' পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সময় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবার জন্য প্রকাশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, সেটা হয়ত এর ফলে বন্ধ করা সম্ভব হবে৷ ফুরফুরা শরিফের ইমামদেরকেও রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে কাজে লাগিয়েছিল নির্লজ্জভাবে৷ সবথেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়বে কি বিজেপি? এর উত্তরে অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘পড়বে বৈকি৷ তবে বিজেপি খুব ধুরন্ধর দল৷ খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে অন্য পথে তা করতে পারে৷ তবে হ্যাঁ, রাম মন্দির ইস্যু হয়ত তুলবে না৷ দলিতদের কাছে টানতে তাঁদের বিরুদ্ধে বঞ্চনা বা বৈষম্যের কথা যেসব দল বলছে, তারা চাইছে জাতপাতের রন্ধ্র দিয়ে কাজ হাসিল করতে৷ মোটকথা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে বৈধতা তৈরি হলো, সেটা অবশ্যই ঐতিহাসিক, সন্দেহ নেই৷
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
হিন্দু মৌলবাদীরা ভারতে যে অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে – এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন হিন্দি ছবির সুপারস্টার শাহরুখ খান৷ তাতেই খেপে গেছেন বিজেপিসহ হিন্দু মৌলবাদী অন্যান্য দলের কতিপয় নেতা৷ শাহরুখকে বলছেন ‘পাকিস্তানের দালাল’!
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
কিং খানের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
গত ২ নভেম্বর ছিল ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন৷ জীবনের অর্ধ শতাব্দী পূরণ বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত এ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন এবং শুভকামনায় সিক্ত করেন শাহরুখকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
শাহরুখের সত্যি বয়ান
জন্মদিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শাহরুখ৷ সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু মৌলবাদীরা যে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর হয়না৷ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/F. Shamim
বিজেপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গব টুইটারে লিখে দেন,‘শাহরুখের হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’৷ সেই টুইট পরে প্রত্যাহার করে নিলেও বুধবার তিনি বলেছেন, ভারত অসহিষ্ণু হলে শাহরুখের মতো এক মুসলমান অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না৷’’ বিজেপির কয়েকজন নেতা শাহরুখকে ‘মুখ সামলে কথা বলা’র অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, মুখ না সামলালে শাহরুখের ছবি বয়কট করা হবে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
জঙ্গি নেতার সঙ্গে তুলনা
শাহরুখের সমালোচনা করতে গিয়ে বিজেপির আরেক সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘শাহরুখ এখন হাফিজ সাঈদের ভাষায় কথা বলছেন৷’’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা হাফিজ সাঈদের তুলনা ভারতের সাধারণ মানুষ এবং শাহরুখ ভক্তদের আহত করেছে৷ সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন সবাই৷
ছবি: AP
শাহরুখের ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে শাহরুখ খুবই উদার৷ তাঁর স্ত্রী গৌরির জন্ম হিন্দু পরিবারে৷ প্রেম করে বিয়ে করার পরেও শাহরুখ কখনো গৌরির ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্ম চর্চায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ ভক্তদের কাছে ‘এসআরকে’ নামেও পরিচিত মুম্বই মহাতারকা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে নামাজ পড়া এবং পূজা করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ছবিতে স্ত্রী গৌরির সঙ্গে শাহরুখ৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে মুম্বাইয়ের সান্দাক্রুজ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে জেতেন বিজেপির অভরাম সিং৷ তাঁর হয়ে প্রচারে নেমে বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রয়াত প্রমোদ মহাজন এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা প্রধান প্রয়াত বালা সাহেব ঠাকরে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিতে বলেন ভোটদাতাদের৷ ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার অভিযোগে অভিরামের নির্বাচনকে অবৈধ বলে খারিজ কোরে দেন মুম্বাই হাইকোর্ট৷ সেই রায়ের বিরুদ্ধে অভিরাম সুপ্রিম কোর্টে আপীল করেন৷ একই ধরণের আরও কয়েকটি আর্জির একসঙ্গে শুনানির পর সুপ্রীম কোর্ট এই চুড়ান্ত রায় দেন৷