অবশেষে নাবালক বিচার সংশোধন বিলটি পাস করলো সংসদ৷ নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অপরাধী স্রেফ নাবালক বলে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায়, বিলটি নিয়ে চলছিল তুমুল আলোচনা৷ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল – এই নিয়ে জনজীবন তোলপাড়৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের নাবালক অপরাধীর মুক্তি আটকানোর আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ গণধর্ষণ কাণ্ডের সময় এই নাবালকের বয়স ছিল ১৮ বছর থেকে ছয় মাস কম৷ আদালতের অভিমত, চলতি নাবালক বিচার আইনে তা আটকানো যায় না, যদিও বিচার বিভাগ জনমানসের আবেগ ও প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারছে৷ এর জন্য আইনগত দিক থেকে প্রথমে নাবালক বিচার আইনের সংশোধন প্রয়োজন, যেটা করতে পারে সংসদ৷ তাতে যদি নাবালক বা নাবালিকার বয়স সীমা বর্তমানের ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা হয়, তবেই তার বিচার এবং শাস্তি প্রাপ্তবয়স্ক ধরে নিয়ে করা সম্ভব৷ আর শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো৷
মঙ্গলবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতে নাবালক বিচার আইনের সংশোধনি বিলটি পাশ হলো৷ তাতে ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘৃণ্যতম অপরাধের ক্ষেত্রে সাবালকের বয়স-সীমা ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা হয়েছে৷ বিলটি পেশ করার সময় দর্শকের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন নির্ভয়ার বাবা-মা৷ এর আগে তাঁরা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের দরজায় দরজায় গিয়ে এই বিলটি দ্রুত পাশ করাবার আবেদন জানিয়ে এসেছেন, বহুবার৷ এখন অবশ্য এই বিল পাশ হলে নির্ভয়ার নাবালক ধর্ষকের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না৷ এই বিল কার্যকর হবে আগামী দিনে৷
বলা বাহুল্য, নির্ভয়ার নাবালক ধর্ষকের মুক্তি পাওয়া নিয়ে জনসমাজে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক৷ সমাজ দ্বিধাবিভক্ত৷ এই রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্ভয়ার মা বলেছিলেন, ‘‘সিস্টেমর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে৷''
ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারও প্রতিবাদ মিছিল অব্যাহত থাকে৷ মহিলা কমিশনের প্রধানের কথায়, ‘‘এই দিনটিকে মহিলাদের কাছে কালো দিন হয়ে থাকবে৷'' তাঁর কথায়, ‘‘এখন মোমবাতির বদলে মশাল হাতে নেবার সময় এসেছে৷''
সমাজের একাংশের মতে, ধর্ষণ এবং খুনের মতো জঘন্য অপরাধ করেও স্রেফ নাবালক বলে ছাড়া পেয়ে যাবে – এটা মেনে নেয়া যায় না৷ অন্যদিকে আরেক পক্ষ মনে করেন, কঠোর শাস্তি দেয়াটাই শেষ কথা নয়৷ শেষ কথা হলো বিপথগামী নাবালকের মানসিকতা সংশোধন করে তাঁকে সমাজে ফিরিয়ে আনা৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
মুক্তি পাবার পর ঐ নাবালক অপরাধীকে এক এজিওর তত্ত্বাবধানে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এই প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বলেন, ‘‘আইন ও শাস্তির বিবাদ বহু পুরানো৷ আমরা শাস্তি কেন দেই? দেই যাতে ভবিষ্যতে সে সাবধান থাকে৷ কিন্তু কথা হচ্ছে, যে-সব কারণগুলো একটি নাবালককে অপরাধী করে তুলছে, সেদিকটা আমরা দেখি না৷ শাস্তি দিলেই যে সে আর ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করবে না, সেটাও বলা মুশকিল৷ তাই সমাজের একজন সদস্য হিসেবে নাবালক অপরাধীকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে৷ এরপরেও অবশ্য নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, কোনটা ভালো – জেলখানা না সংশোধনাগার?''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামে একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিও-এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা বাচ্চা যাতে অপরাধী হয়ে না ওঠে, সেটা দেখার দায়িত্ব অনেকটাই বর্তায় সরকারের ওপর৷ একটা বাচ্চা অপরাধী হয়ে জন্মায় না৷ বরং সমাজব্যবস্থাই তাঁকে অপরাধী করে তোলে৷ তাই আগে দেখতে হবে আইনের শাসন ঠিকমত পালিত হচ্ছে কিনা৷ কড়া শাস্তি দিলেই সব ঠিক হয়ে যায় না৷ তাই যদি হতো, তবে ফাঁসির সাজা দিয়েও তা আটকানো যাচ্ছে না কেন? আসল কথা হচ্ছে, বিপথগামী নাবালকদের মানসিকতায় প্রকৃত সংশোধন হয়েছে কিনা সেটা দেখা জরুরি৷ পাশাপাশি এটাও সত্য যে, কড়া শাস্তি দিলে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করার আগে অপরাধীকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে৷
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানা রাজ্যের আদালত সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এক নেপালি মহিলাকে ধর্ষণ ও খুন করার অপরাধে৷
বন্ধুরা, নাবালক ধর্ষর্কের শাস্তি কম হওয়া কি উচিত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷