মাসকয়েক আগে পেট্রোলের দাম একশ পার করার পর দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সোমবার ফের তা একশ ছুঁয়েছে। ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। রান্নার গ্যাস পেরিয়েছে এক হাজার টাকা।

গত ছয়দিনে এই নিয়ে পাঁচবার দাম বাড়ল তেলের। প্রথম চারবার দাম বেড়েছে ৮০ পয়সা করে। সোমবার বেড়েছে যথাক্রমে ৫০ এবং ৫৫ পয়সা। ফলে সব মিলিয়ে গত ছয়দিনে পেট্রোলের দাম বেড়েছে তিন টাকা ৭০ পয়সা। ডিজেলের দাম বেড়েছে তিন টাকা ৭৫ পয়সা।

গত দুই মাস ধরে পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছে। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও সরকার দেশে তেল কোম্পানিগুলিকে দাম বাড়াতে দেয়নি। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই ফের বাড়তে শুরু করেছে দাম।

রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। এখন ব্যারেল প্রতি তেলের দাম হয়েছে ১১৭ ডলার। কিছুদিন আগেও যা ৮০ ডলারের ঘরে ছিল। ভারতে অবশ্য করোনাকালেও তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তখন তেলের দাম কমলেও ভারতের প্রশাসন ট্যাক্স বসিয়ে তেলের দাম বাড়িয়েছিল।

তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকমাসে ভোজ্য তেলের দাম দুইগুণ বেড়েছে।

গাড়ি এবং বাস চালকদের অভিযোগ, তেলের দাম বাড়তে থাকলেও তাদের ভাড়া বাড়ছে না। সরকার তাদের ভাড়া বাড়াতে দিচ্ছে না।

দেশের বিভিন্ন শহরে রীতিমতো হোর্ডিং দিয়ে উবার চালকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা গাড়িতে এসি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র চালাবেন না।

তেলের দাম বাড়ার কারণে গত কয়েক মাসে ই-স্কুটার কেনার প্রবণতা বেড়েছে।

কলকাতায় বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মালিকদের বক্তব্য, টিকিট বেচে তেলের দাম তুলতে পারছেন না তারা। ভাড়া না বাড়লে বাস চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব।

দিল্লি-কলকাতার মতো বিভিন্ন শহরে ফের সাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। এর আগে করোনার সময়েও সাইকেলের বিক্রি বেড়েছিল।

কলকাতায় এই মুহূর্তে এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। ডিজেল ১০০ টাকা প্রতি লিটার। মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।

কিছুদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পেট্রোল পাওয়া যেত ভারতে। করের তারতম্যের কারণে একেকটি রাজ্যে তেলের দাম একেকরকম হয়। কিন্তু তা কখনোই পাঁচ টাকার বেশি হয় না। গত কয়েকমাসে নাগাড়ে বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। অবশেষে তা একশ ছাড়ালো।

মনমোহন সি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন পেট্রোলের দাম ৬০ টাকা প্রতি লিটারে পৌঁছেছিল। বিরোধী বিজেপি তখন রাস্তায় নেমে তুমুল আন্দোলন করেছিল। অথচ তেলের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছানোর পরেও বিজেপির সরকার নিশ্চুপ।

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গোটা ভারতেই প্রতিবাদ হচ্ছে। কলকাতায় রাস্তায় নেমেছেন অ্যাপ-ক্যাবের চালকরা। গাড়িতে এসি চালানো তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা।

ডিজেলের দাম বাড়ায় বাজার আগুন। শাক-সবজি থেকে ভোজ্য তেলের সবকিছুর দাম বাড়ছে চড়চড় করে। কারণ, পরিবহণ খাতে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে।

পেট্রোল পাম্পগুলিতে গাড়ি কম আসছে বলে জানিয়েছেন পাম্প-মালিকেরা। তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ গাড়ি চড়া কমিয়ে দিয়েছেন।

অনেকেই পেট্রোল গাড়ি সিএনজি বা গ্যাসে বদলে ফেলছেন। কিন্তু দিল্লি, হরিয়ানায় সিএনজি পাম্প যথেষ্ট থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যথেষ্ট সিএনজি পাম্প নেই।

আগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারতে তেলের দাম বৃদ্ধি পেত। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও ভারতে তেলের দাম বাড়ে। কারণ সরকার সমানে কর ও শুল্ক বাড়িয়ে চলেছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের যুক্তি, এর থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করা হয়। তাই তারা শুল্ক ও কর কমাবে না।