ভারতে পুরানো ভবনের টেকসই রূপান্তর
১৭ এপ্রিল ২০২৪এক পুরানো ভবনকে কিছুটা টেকসই করে তুলতে ডিজাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ চেন্নাই শহরের স্থপতি অনুপমা মোহনরাম সাধারণ ভবনগুলিকে টেকসই করে তোলেন৷ সেই প্রক্রিয়াকে ‘গ্রিন ট্রান্সফরমেশন' বা সবুজে রূপান্তরবলা হয়৷ এমন উদ্যোগের সার্থকতা তুলে ধরে অনুপমা বলেন, ‘‘আমরা গ্রিন ট্রান্সফর্মেশনে উৎসাহ দেই, কারণ সে ক্ষেত্রে ভবনটি অটুট রেখে পরিবর্তন আনা যায়৷ বাড়ি ভেঙে ফেললে অনেক দূষণ সৃষ্টি হয়, তাই না? তাছাড়া সেই ভগ্নস্তূপ নিয়ে কী করা যায়? গোটা প্রক্রিয়ার জন্য মালিকের সময়ও বেশি লাগে৷ বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়তে হলে হয়তো দুই বছর সময় লাগবে৷ আর ছয় মাসেই গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন করা সম্ভব৷''
প্রতিটি ভবনের গ্রিন ট্রান্সফর্মাশেন প্রক্রিয়া ভিন্ন৷ প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছু স্থির করতে হয়৷ যেমন অনুপমা ও তাঁর টিম চেন্নাই শহরে রোশনি গোপিনাথন ও তাঁর স্বামীর বাসভবনটির রূপান্তর ঘটিয়েছেন৷
সেই ভবনে সৌরশক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা করে সব আলো-পাখা জ্বালানি সাশ্রয়ের মডেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে৷ যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করাতে জানালার মাপ বাড়ানো হয়েছে৷ সেইসঙ্গে ক্রস ভেন্টিলেশন চালু করে এমনভাবে বাতাস চলচল করানো হচ্ছে, যে বাসিন্দাদের আর ঘনঘন এসি চালাতে হচ্ছে না৷ এমন পদক্ষেপের ফলে জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে৷ অনুপমা বলেন, ‘‘পানির ক্ষেত্রে আমরা সব প্লাম্বিং ফিটিং বদলে এমন প্রণালী বসাই, যার মধ্যে পানির প্রবাহের গতি কম৷ যেমন ডুয়াল ফ্লাশ ওয়াটার ক্লজেট৷ অথবা এমন ট্যাপ, যা থেকে কম গতিতে পানি বের হয়৷ ফলে পানির ব্যবহার কমে যায়৷ আর বাসার সব বর্জ্য পানি আমরা সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও সেখানেই পুনর্ব্যবহার করি৷ তাছাড়া ছাদের উপর যে বৃষ্টির পানি পড়ে, সেই পানি বাসার মধ্যেই ব্যবহার করি৷ বেরিয়ে যেতে দেই না৷ হয় মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, অথবা জলাধারে জমা করা হয়৷''
এমন ‘গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন'-এর ফলে বাসার পানির ব্যবহার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷ জ্বালানির ব্যবহারও প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে৷ পেশায় ডাক্তার হিসেবে রোশনি পরিবেশবান্ধব বাসায় থাকার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক বাইরের মানুষ আমার বাসা সম্পর্কে মন্তব্য করে আমাকে প্রশ্ন করেছেন৷ আশা করি পরিবেশবান্ধব নির্মাণের ক্ষেত্রে এটা একটা প্রেরণা হতে পারে৷''
এমন ‘গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন' প্রক্রিয়া আরো বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়াই আদর্শ হবে৷ কিন্তু চেন্নাইয়ের মতো বিশাল শহরে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ বিশেষ করে ব্যয়ভার একটা বড় সমস্যা৷ অনুপমা মোহনরাম বলেন, ‘‘গ্রিন ট্রানস্ফর্মেশনের ব্যয় কাজের উপর নির্ভর করে৷ আমার মতে ১৫ থেকে ২০ লাখ ব্যয় করলে বেশিরভাগ ফিটিং করানো যায়৷''
এমন বিশাল অংক অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে৷ কিন্তু উপদেষ্টা হিসেবে কৃতিকা মুতুকৃষ্ণণের মতে, এমন রূপান্তর সত্যি খাঁটি পরিবর্তন আনতে পারে৷ সিনিয়র গ্রিন বিল্ডিং কনসালটেন্ট হিসেবে কৃতিকা মুতুকৃষ্ণণ মনে করেন, ‘‘রূপান্তরের ফল যখন স্পষ্ট দেখা যায়, মানুষ যখন দেখে যে জ্বালানির বিল কমে গেছে, বাসায় পানির সাশ্রয় হচ্ছে, নিজেদের পরিবেশে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে, তখন সেই বিশাল প্রভাব অনুভব করা যায়৷''
সব ভবন টেকসই করে তোলার ক্ষেত্রে বর্তমানে ভারতে কোনো স্পষ্ট নীতি নেই৷
কৃতিগা নারায়ণন/এসবি