ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাপ কাটাতে এবং সৌভাগ্যের আশায় কত কিছুই না করেন৷ পেঁচা বলি এর মধ্যে অন্যতম৷ দেশের আইনে পেঁচা ধরা বা হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ৷ অথচ কালো বাজারে পেঁচা বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত৷ ডয়চে ভেলে তুলে ধরছে সে কাহিনি৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের রাজধানী দিল্লির বিখ্যাত লাল কেল্লার বিপরীত দিকে একটি পাখি বাজার আছে৷ স্থানীয়ভাবে এটি ‘কবুতর বাজার' নামে পরিচিত৷ কিন্তু কবুতরের বদলে সেখানে অন্য পাখিই বেশি৷ এদের রাখা হয়েছে ছোট ছোট খাঁচায়, ভীষণ নোংরা পরিবেশে৷ চারপাশে খাবার ছড়ানো৷ রঙিন পাখিদের টকটকে লাল বা উজ্জ্বল হলুদ রঙ এই নোংরা পরিবেশে হালকা হতে চলেছে৷ এ সবের মধ্যে হঠাৎ আপনার চোখে পড়বে কতগুলো পেঁচা৷
ভারতে ৩২ ধরনের পেঁচা আছে৷ ১৯৭২ সালের ওয়াইল্ডলআইফ প্রটেকশন আইনের আওতায় এদের রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ অথচ টাকা দিলে ভারতের যে কোনো প্রান্তে আপনি পেয়ে যাবেন এই পাখিদের৷ ভারতে পেঁচা পূজ্য হিসেবে বিবেচিত এবং ধারণা করা হয় এরা অতিপ্রাকৃত শক্তির অধিকারী৷
ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে বা আর্থিক উন্নতির আশায় অনেকে পেঁচা বলি দেয়৷ অনেকে পাখিটিকে হত্যা করার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ তাবিজে করে গলায় পরে৷ পুরো বছর ধরে পেঁচা বেচাকেনা চলে৷ তবে পেঁচা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দীপাবলীর সময়৷ আগামী ৩০ অক্টোবর ভারতে পালিত হবে দীপাবলী৷ সেদিন হিন্দুদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা হবে৷ পেঁচা লক্ষ্মীর বাহন৷ আর লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী৷ এ কারণে দীপাবলী বা দেওয়ালির সময় সবচেয়ে বেশি পেঁচা বলি দেয়া হয়৷
ছোট পেঁচার দাম আট হাজার রূপি আর বড় পেঁচাগুলো বিক্রি হয় ২০ হাজার রূপিতে৷ এসব পেঁচাকে বলি দেয় ওঝারা৷ পাখি ব্যবসায়ীরাই এসব ওঝা সরবরাহ করে থাকে৷ এমন এক ওঝার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন ডয়চে ভেলের প্রতিবেদকরা৷ ওঝাকে এই বলির বিশেষত্ব জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, যিনি বলি দেন তার সমৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী৷ আর মৃত পেঁচার নখ এবং চোখ তাবিজ বানিয়ে গলায় পরা হয়৷ তিনি আরও জানালেন, ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ নির্বাচনের আগে পেঁচার নখ বা চোখের তাবিজ পরেন৷
ন্যাশনাল ওয়াইল্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো ডব্লিউসিসিবি দীপাবলির সময় পুলিশ নিয়োগ করে, যাতে তারা পাখির মার্কেটগুলোতে হানা দিতে পারে৷ কিন্তু পুলিশ স্বীকার করেছে, এসময় পেঁচাসহ দোকানিদের ধরা খুব মুশকিল৷ তারা পাখিগুলো গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখে৷ আর যথারীতি কালো জাদু আর ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে রমরমা হয় এই ব্যবসা৷
পশু-পাখি যখন কাঁদে
সন্তান মারা গেছে, এই সত্য মানতেই পারছিল না গোরিলা মা৷ মৃত সন্তানকে পিঠে নিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছে সে৷ সন্তান বা অন্য কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে ডলফিন, হাতি, বেবুন, কাক, ভালুক বা মাছের শোক পালনও হৃদয়বিদারক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
গোরিলার সন্তানশোক
জার্মানির ম্যুনস্টার চিড়িয়াখানায় এক গোরিলার বাচ্চা মারা যাওয়ার পর হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল৷ মা গোরিলাটিকে সবাই ডাকতো গানা আর তার সন্তানকে ডাকতো ক্লাউডিও নামে৷ ক্লাউডিও মারা গেল৷ সন্তানের মৃত্যু মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না৷ আগের মতো সন্তানকে পিঠে নিয়েই চলাফেরা করছিল সে৷ চিড়িয়াখানার কর্মীদের কেউ কাছাকাছি গেলেই গানা তেড়ে আসত৷ সন্তানহারা গরিলা মায়ের মন শক্ত হতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
সন্তানকে সমুদ্রেই সমাধিস্থ করে মা ডলফিন
সন্তান মারা গেলে ডলফিনরাও দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ এমনও দেখা গেছে, সদ্য মারা যাওয়া সন্তানকে মুখে নিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মা ডলফিন৷ মুখ থেকে পড়ে সন্তানের দেহ যখন তলিয়ে যাচ্ছে, ডুব দিয়ে দিয়ে তাকে অনুসরণ করছে মা৷ বড় কেউ মারা গেলেও ডলফিনরা তাকে ছেড়ে যেতে চায় না৷ মৃতদেহকে অনেকক্ষণ ঘিরে থাকে তারা৷
ছবি: Public Domain
হাতির ‘শোকসভা’
হাতিদের শোকও হৃদয় ছুঁয়ে যায়৷ কোনো হাতি মারা গেলে সঙ্গীরা তার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে৷ দূর থেকে অন্য হাতিরাও এসে যোগ দেয় সেই শোকে৷ প্রিয়জন হারানোর দুঃখ হাতি ভুলতেই পারে না৷ তাই অনেকদিন পরও স্বজনের কঙ্কাল বা দেহাবশেষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেন তাদের স্মরণ করে তারা৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE/M. Harvey
সেবায় মন দেয় শোকসন্তপ্ত বেবুন
এক বেবুন মারা গেলে অন্য বেবুনরা দুঃখে এতটাই কাতর হয় যে তাদের স্ট্রেস হরমোনের ঘনত্ব বেড়ে যায়৷ এবং বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শোকে যখন দিশেহারা অবস্থা, বেবুনরা তখন একে অন্যের গায়ের লোম পরিষ্কার করায় মন দেয়৷ শোক ভোলার কী অদ্ভুত কৌশল!
ছবি: picture alliance/chromorange
পাখিদের মৃত্যুশোক
কোনো কাক মারা গেলে তার মৃতদেহ ঘিরে অন্য কাকদের শোক অনেকেই হয়ত দেখেছেন৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রিয়জনের শোকে কাক নাকি অনেক সময় খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ করে দেয়৷ পাখিদের মধ্যে যারা এক সঙ্গী নিয়েই জীবন পার করে দেয়, তারা নাকি সঙ্গীর মৃত্যুর পর না খেয়ে খেয়ে মারাও যায়৷ রাজহাঁস আর কিছু গায়ক পাখি নাকি প্রায়ই প্রিয়জনের মৃত্যুর পর এভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়৷
বার্লিনের চিড়িয়াখানার এই বিড়াল আর ভালুকটি যেন ছিল ‘হরিহরাত্মা’৷ একজনের কাছ থেকে আরেকজনকে আলাদাই করা যেত না৷ ভালুকটি মারা যাওয়ার পর তাই আজব এক সমস্যা দেখা দিল৷ দেখা গেল, বিড়ালটি আর ভালুকের খাঁচাটি ছেড়ে যাচ্ছে না৷ কয়েকদিন অবিরাম ‘মিঁউ’ ‘মিঁউ’ করে ডেকে ডেকে বন্ধুর প্রতি শোক জানিয়েছিল সে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rüsche
মনিবের কবর পাহারা দেয় কুকুর
কুকুরের প্রভুভক্তির অনেক গল্প আছে৷ কুকুর তার মনিবকে এতটাই ভালোবাসে যে মনিব মারা গেলে তার কবরে গিয়ে সে বিলাপ শুরু করে৷ জার্মানির একটি কুকুর তো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বড় খবর হয়েছিল৷ কুকুরটির নাম কাপিটান৷ তার মনিব আর্জেন্টিনায় মারা যান৷ জার্মান শেফার্ডটি আর্জেন্টিনার ভিলা কার্লোসে মনিবের ওই সমাধিস্থল বহু বছর পাহারা দিয়েছে৷