আশঙ্কা সত্যি হলো। পাঁচ রাজ্যে ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর বেড়ে গেল পেট্রোল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম।
বিজ্ঞাপন
ভারতে ১৩৭ দিন পর বাড়ানো হলো পেট্রোল-ডিজেলের দাম। লিটারে ৮০ পয়সা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে সিলিন্ডার পিছু ৫০ টাকা। শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা ডিজেলের দাম লিটারে ২৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো হয়েছিল। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়লেও ভারতে এতদিন তা বাড়েনি। ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পরই সাধারণ মানুষের আশঙ্কা ছিল, এবার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়বে। এবার সেই আশঙ্কা সত্যি হলো।
পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ার অর্থ হলো, জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া। অতীতে যতবার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে, ততবারই জিনিসের দাম বেড়েছে। এবারও সেই একই কাহিনির পুনরাবৃত্তি হবে বলে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা।
তেলের দাম আকাশছোঁয়া, কলকাতায় বিক্ষোভ
গত কয়েকমাসে গোটা ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লিটারে একশ টাকা ছাড়িয়েছে। দিকে দিকে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পেট্রোল একশ
কলকাতায় এই মুহূর্তে এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। ডিজেল ১০০ টাকা প্রতি লিটার। মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আগে কী ছিল
কিছুদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পেট্রোল পাওয়া যেত ভারতে। করের তারতম্যের কারণে একেকটি রাজ্যে তেলের দাম একেকরকম হয়। কিন্তু তা কখনোই পাঁচ টাকার বেশি হয় না। গত কয়েকমাসে নাগাড়ে বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। অবশেষে তা একশ ছাড়ালো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মনমোহন জমানা
মনমোহন সি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন পেট্রোলের দাম ৬০ টাকা প্রতি লিটারে পৌঁছেছিল। বিরোধী বিজেপি তখন রাস্তায় নেমে তুমুল আন্দোলন করেছিল। অথচ তেলের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছানোর পরেও বিজেপির সরকার নিশ্চুপ।
মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রতিবাদ
তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গোটা ভারতেই প্রতিবাদ হচ্ছে। কলকাতায় রাস্তায় নেমেছেন অ্যাপ-ক্যাবের চালকরা। গাড়িতে এসি চালানো তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাড়ছে জিনিসের দাম
ডিজেলের দাম বাড়ায় বাজার আগুন। শাক-সবজি থেকে ভোজ্য তেলের সবকিছুর দাম বাড়ছে চড়চড় করে। কারণ, পরিবহণ খাতে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে।
ছবি: DW/Prabhakar
গাড়ি কমেছে পেট্রোল পাম্পে
পেট্রোল পাম্পগুলিতে গাড়ি কম আসছে বলে জানিয়েছেন পাম্প-মালিকেরা। তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ গাড়ি চড়া কমিয়ে দিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিএনজি পাম্পে ভিড়
অনেকেই পেট্রোল গাড়ি সিএনজি বা গ্যাসে বদলে ফেলছেন। কিন্তু দিল্লি, হরিয়ানায় সিএনজি পাম্প যথেষ্ট থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যথেষ্ট সিএনজি পাম্প নেই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভবিষ্যত কী
আগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারতে তেলের দাম বৃদ্ধি পেত। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও ভারতে তেলের দাম বাড়ে। কারণ সরকার সমানে কর ও শুল্ক বাড়িয়ে চলেছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের যুক্তি, এর থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করা হয়। তাই তারা শুল্ক ও কর কমাবে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
8 ছবি1 | 8
আর এর ফলে সবচেয়ে বিপদে পড়েন মধ্যবিত্তরা। কারণ, ভারতে গরিবরা করোনার সময় থেকে এখনো প্রতি মাসে বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছেন। এটা যদি বন্ধও হয়ে যায়, তাও খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে দুই টাকায় চাল ও তিন টাকা কেজি দরে গম পাবেন। তাছাড়া একশ দিনের কাজের প্রকল্পও চালু আছে।
বড়লোকদের ক্ষেত্রে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়া খুব একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না। সেটা হয় মধ্যবিত্তদের কাছে। জিনিসের দাম বাড়া মানে সংসারের বাজেট গোলমাল হয়ে যাওয়া। তবে সরকারের যুক্তি, বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় দেশে দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় ছিল না।