সংখ্যাটা মর্মান্তিক হলেও সত্যি৷ কিন্তু কেন হারায়, কীভাবে হারায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেন হদিস পাওয়া যায় না তাদের? শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তাঁদের জীবন? হৃদয়মথিত করা এইসব প্রশ্নের সদুত্তর নেই পুলিশ প্রশাসনের কাছেও৷
বিজ্ঞাপন
বছর তিনেক আগে ভারতে ১ লাখ ৬০ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়৷ এরমধ্যে অধিকাংশের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ এক জনস্বার্থ আর্জিতে সরকারকে এ জন্য ভর্ত্সনা করে সুপ্রিম কোর্ট৷ কেন তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না? সরকার, পুলিশ, প্রশাসন কেন এত উদাসীন, জানতে চায় আদালত৷ তারপরও অবস্থার ইতরবিশেষ হয়নি৷ সমানে চলেছে শিশু নিখোঁজ হবার ঘটনা৷ গড়ে প্রায় লক্ষাধিক শিশু হারিয়ে যাচ্ছে বছরে৷ গত বছরে শুধু দিল্লি ও তার আশেপাশের এলাকা থেকেই নিখোঁজ হয়েছে কমপক্ষে ২২ হাজার বাচ্চা, যার মধ্যে ন'হাজারের আজও কোনো খোঁজ নেই৷ এদের মধ্যে আবার ৫৫ শতাংশ মেয়েষ৷ জাতীয় ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, এদের ৪৫ শতাংশের খোঁজ মেলেনি৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র৷ সেখানে ছেলেদের তুলনায় হারিয়ে যাওয়া মেয়ের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি৷ মধ্যপ্রদেশে নিখোঁজ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ হাজার মেয়ে৷ আর অন্ধ্রপ্রদেশে এই সংখ্যা ১২ হাজার৷
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
বছরের পর বছর ভারতে হাজারো শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর শোনা যায়, যাদের অনেকেরই আর কোনো খোঁজই পাওয়া যায় না৷ এদের কেউ নিজেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, আবার কাউকে অপহরণ করে নানা রকম কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: DW/B. Das
ভাগ্যের লিখন
ভারতে ‘শিশু বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১১ জন শিশু নিখোঁজ হয়ে থাকে৷ এদের মধ্যে কমপক্ষে চারজনকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না৷
ছবি: DW/B. Das
বন্দিদশা
দিল্লির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ১৬ বছর বয়সি মেয়ে পিংকিকে খুঁজে পাওয়া গেছে অপরিচিত একটি বাড়িতে৷ সেখানে ওকে জোর করে ঘরের কাজ করানো হচ্ছে এবং বলা বাহুল্য, কোনো বেতন ছাড়াই৷
ছবি: DW/B. Das
দেশব্যাপী অনুসন্ধান
ছবিটিতে এক বাবার হাতে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলের ছবি আর তাঁর অন্য হাতে একটি বাক্স৷ সে বাক্সে রয়েছে মানুষের সাহায্য করা অর্থ, যে অর্থ দিয়ে এই বাবা তাঁর ছেলেকে খুঁজে বের করতে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাবেন বলে ঠিক করেছেন৷
ছবি: DW/B. Das
পালিয়ে যায়
যেসব শিশুরা বাড়ি থেকে নিজের ইচ্ছায় চলে যায় বা পালিয়ে যায়, ওরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে কাজের ছেলে-মেয়ে হিসেবে বা এ ধরণেরই কোনো কাজ করে থাকে৷ যেমন চায়ের দোকান, পেট্রোল পাম্প বা কার্পেট তৈরি কারখানায়৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির একটি পেট্রোল পাম্প থেকে এমনই কিছু শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
ছবি: DW/B. Das
ধৈর্য ধরে থাকা
ছেলেটির হাতে ছয় বছর আগে ওর হারিয়ে যাওয়া বোনদের ছবি৷ ওদের খুঁজে পাবে এই আশায় এখনো বুক বেধে আছে ছেলেটির পুরো পরিবার৷ নিখোঁজ বোনদের ফিরে পাওয়ার জন্য পরিবার থেকে মাঝে মাঝেই বোনদের ছবি এবং নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিসহ প্রচারপত্র বিলি করা হয়৷
ছবি: DW/B. Das
দীর্ঘ প্রতিক্ষা
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এই শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে অবশেষে৷ শিশুটি ওর বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঠিক এ জায়গাতেই অপেক্ষা করছে গত প্রায় এক বছর যাবত৷ কবে শেষ হবে এই অপেক্ষার পালা?
ছবি: DW/B. Das
খুশির দিন ফিরে এসেছে
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অর্জুন আবারো মায়ের কোলে ফিরে এসে অত্যন্ত আনন্দিত, ভীষণ খুশি৷ অর্জুন ওর মাকে তার কষ্টের কথা জানিয়েছে৷ বলেছে, গত দু’বছর ওকে বেধে রাখা হয়েছিল এবং কাজ করতে বাধ্যও করা হয়েছিল৷ তবে ওর মা কিন্তু অর্জুনকে ফিরে পাবার আশা কখনো ছেড়ে দেয়নি৷
ছবি: DW/B. Das
অতিরিক্ত সাবধানতা
এই মা তাঁর কয়েকজন শিশুর মধ্যে একজনকে হারিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আর কখনো আমি আমার শিশুদের চোখের আড়াল হতে দেব না৷ উল্লেখ্য, ‘শিশু বাঁচাও আন্দোলন’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে www.bba.org.in ঠিকানায়৷
ছবি: DW/B. Das
8 ছবি1 | 8
কোথায় যাচ্ছে এইসব বাচ্চারা?
নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন' বা বিবিএ মনে করে, নিখোঁজ বাচ্চারা সংগঠিত চক্রের হাতে পড়ে পাচার হয়ে যায়৷ তা কোথায় পাচার হয় এরা? বাচ্চা ছেলেদের বেগার শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হয় ক্ষেত খামারে, দোকানে, কারখানায়, আর না হয় পথশিশু হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিতে৷ ভারতে শিশুশ্রমিকদের সংখ্যা এখন ১ কোটি ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে৷ মেয়েদের পাচার করা হয় উপসাগরীয় দেশগুলিতে আর নামানো হয় দেহ ব্যবসায়৷ এছাড়া ভারতের যেসব রাজ্যে স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ সমতায় ফারাক বেশি, পাচার করা হয় সেইসব রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে৷ সেখানে অসম বয়সি পুরুষদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়৷ আবার এমনও দেখা গেছে যে, বাচ্চাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার পর মেরে ফেলা হয়েছে কিংবা প্রতিবন্ধী করে রাখা হয়েছে৷
কীভাবে বছরে হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষাধিক বাচ্চা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য ও দৈহিক মানসিক উৎপীড়নের চাপে তারা ঘর ছেড়ে পালায় এবং পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে৷ রাজধানী দিল্লি এই ধরনের পাচারকারী চক্রের একটা ঘাঁটি হয়ে উঠেছে৷ অন্যান্য রাজ্য থেকে ঘরছাড়া বাচ্চারা চলে আসে দিল্লিতে কিংবা মুম্বইতে৷ প্রথমে তাদের থাকার জায়গা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড কিংবা মন্দির-মসজিদে৷ ফলে সহজেই তারা গিয়ে পড়ে পাচারকারীদের হাতে৷ শুধু গরিব পরিবারের বাচ্চারাই নয়, অবস্থাপন্ন, সিঙ্গল বা ভেঙে যাওয়া পরিবারের বাচ্চারাও নিখোঁজ হয়, হামেশাই৷ কারণ বাড়িতে বা পরিবারে তাদের দেখভাল করার কেউ থাকে না৷ এ জন্য তাদের মনে জমতে থাকে রাগ আর অভিমান৷ তারপর একদিন ঘর থেকে পালিয়ে যায় তারা৷ তাই সেদিক থেকে থেকে দেখলে, এটা একটা সামাজিক কারণও বটে৷
মাত্র কয়েক টাকার জন্য
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermann
তোয়ালে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebroker
দিনে ৬৫ টাকা
লেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnews
সস্তা শ্রম
ভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker
অমানবিক অবস্থা
২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermann
কম্বোডিয়ার পরিস্থিতি
কম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
পুলিশ প্রশাসন কী করছে?
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন' বলছে, পুলিশ এ বিষয়ে উদাসীন৷ তারা যথেষ্ট তৎপর হলে নিখোঁজের সংখ্যাটা অনেক কমিয়ে আনা যেত৷ বড়জোর পুলিশ কয়েকটা শেল্টার হোমে খোঁজখবর করার পর বেমালুম বসে যায়৷ অনেক রাজ্যে ‘মিসিং পার্সন ব্যুরো' আছে৷ কিন্তু সেখানে যোগ্য অফিসারদের কদাচিত পোস্টিং দেওয়া হয়, যেহেতু এই বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় না৷ দিল্লির উপকণ্ঠে গুরুগ্রামের এক কারখানা শ্রমিক রাম সিং৷ এ বছরের এপ্রিল মাসে তাঁর এগারো বছরের ছেলেটা হারিয়ে যায়৷ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর তাকে পাওয়া যায়নি৷ পরে পুলিশে ডাইরি করে রাম সিং৷ খোঁজাখুঁজি করতে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা৷ কারখানার কাজে যেতে না পারায় চাকরিটাও চলে যায় তাঁর৷ এখন পেট চালানো দায়৷ অথচ পুলিশ কিছুই করেনি৷ একই কাহিনি বিহারের বেগুসরাই থেকে পেটের ধান্দায় দিল্লিতে আসা হাসিনা ও আসমার৷ বাড়ি বাড়ি বাসন মাজে তাঁরা৷ তাই সকালে বেরিয়ে যেতে হয়৷ স্বামীও জোগানদার হিসেবে নির্মাণ শিল্পে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে বেরিয়ে যায়৷ একদিন ঘরে ফিরে দেখে তাদের নাবালক ছেলেমেয়েরা উধাও৷ সন্দেহ করা হচ্ছে, কেউ তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে ছেলেমেয়েকে অপহরণ করেছে৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ নেই৷ এ রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটছে নিত্যদিনই৷
শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করণীয় কি কিছুই নেই?
আছে বৈকি৷ শক্তি বাহিনী নামে একটি এনজিও-র দৃঢ় বিশ্বাস, নিখোঁজ ছেলেমেয়েদের হদিশ পেতে অবিলম্বে চালু করা দরকার ডিএনএ ডেটা ব্যাংক৷ বিশ্বের অনেক দেশে তা চালু আছে৷ অথচ ভারতে যেখানে বছরে লক্ষাধিক শিশু হারিয়ে যায়, সেখানে তা চালু করতে এত গড়িমসি কেন? স্পষ্টতই সরকারের সদিচ্ছার অভাব৷ ২০০৭ সালে দিল্লির অদূরে নয়ডাতে নিথারি অপহরণ, বিকৃতকাম ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিখোঁজ বাচ্চাদের ডিএনএ ডেটা ব্যাংক চালু করার সুপারিশ করে৷ পরে সেই দায়িত্ব বর্তায় নব গঠিত শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের ওপর৷ নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক অন-লাইনে ‘ট্র্যাক-চাইল্ড' নামে নিখোঁজ ছেলেমেয়েদের একটি ডিএনএ ডেটা ব্যাংক তৈরির কাজ হাতে নেয়৷ শক্তি বাহিনীর প্রধান ঋষি কান্ত জানান, তাঁরা অন-লাইন একটা ইমারজেন্সি নম্বর রেখেছেন৷ বাচ্চা নিখোঁজ হবার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরা যদি ঐ নম্বরে যোগাযোগ করেন, তাহলে হদিশ পাওয়ার কাজটা সহজ হবে৷ শক্তি বাহিনীর সদস্যরা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় নজর রাখতে পারবে৷ কারণ এ সব জায়গা থেকেই শিশুদের হাত বদল হয়ে থাকে৷
সম্প্রতি ১৬ বছরের এক কিশোরিকে দিল্লির এক ডাক্তার দম্পতীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শক্তি বাহিনী৷ চার বছর বয়সে সে নিখোঁজ হয়েছিল৷ কিশোরি হবার পর গর্ভ নিরোধক পিল খাইয়ে তার ওপর চলে লাগাতার যৌন নির্যাতন, বলেন এনজিও শক্তি বাহিনীর প্রধান ঋষি কান্ত৷
এভাবে শিশু নিখোঁজ হওয়ার দায় কার? সরকারের না পরিবারের? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
বিভিন্ন দেশের শিশুদের লেখা শেখার কৌশল
বিভিন্ন দেশে শিশুদের শেখার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন৷ জার্মানিতে এই হেমন্তেই শিশুদের লেখা শেখার একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ কোন দেশের শিশুদের কীভাবে লেখায় হাতে-খড়ি হয়, চলুন সে বিষয়ে জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীন: যত তাড়াতাড়ি লেখা শেখা যায়, তত ভালো
চীনে তিন বছর বয়স হলে বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো হয় অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য৷ তবে শিশুরা ঠিকমতো লেখা শিখতে শুরু করে ছয় বছর বয়সে৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের দশ হাজার অক্ষর শিখে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন৷ পরে যা শিখতে হয় তার তেমন কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান: স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত
ক্লাস ওয়ান শেষ হওয়া মানেই কিন্তু লেখা শেখা শেষ নয় জাপানে৷ সেখানে ক্লাস নাইন পর্যন্ত সিলেবাসেই থাকে নির্ধারিত কিছু অক্ষর শেখার নিয়মকানুন৷ জাপানে লিখতে পারার জন্য একজনকে মোটামুটি ২১০০ অক্ষর জানতে হবে৷ জাপানে লেখা জানার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, তা না হলে কোনো না কোনো অক্ষর খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে যে কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিশর: একটি ‘নতুন’ ভাষা
মিশরের বাচ্চাদের লেখা শেখার সাথে সাথে একটি নতুন ভাষাও শিখতে হয়৷ কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ যার ফলে, সেখান থেকে শুদ্ধ আরবি ভাষাকে আলাদা করা বেশ অসুবিধা৷ এছাড়া, সেখানকার কোনো স্কুলে ক্লাসে প্রতি ৮০ জন করে ছাত্র থাকে৷ ফলত লেখাপড়ার মান নীচু হয়৷ এর জন্য অনেক ছাত্র কখনোই ঠিকমতো লিখতে বা পড়তে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
মরক্কো: শুধু আরবি ভাষা নয়
বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন মরক্কোর স্কুলে বাচ্চারা শুধু আরবি ভাষা শিখতো৷ তবে ২০০৪ সাল থেকে এর পরিবর্তন হয়েছে৷ তখন থেকেই ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও হিব্রু ভাষার পাশাপাশি তামাসিখট ভাষাও শিখতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞান নেই এবং শুধু হিব্রু ভাষায় কথা বলে, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ ২০১১ সাল থেকে তামাসিখট ভাষাকে সেখানকার স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Ronald Wittek
পোল্যান্ড: শূন্য থেকে শুরু
পোল্যান্ডে স্কুল শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকে নয়, শূন্য থেকে৷ স্কুলে যাবার আগেই প্রতিটি শিশুর শূন্য ক্লাসে বা কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তখন খেলার ছলে বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়৷ অবশ্য ঠিকমতো লেখা শেখা শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকেই৷ তবে কোনো কোনো অক্ষর খুব ভালো করে শিখতে বা মনে রাখতে হয়, কারণ সেগুলোর উচ্চারণ প্রায় একই রকম৷ এক্ষেত্রে বাংলার ‘ন’ এবং ‘ণ’ অক্ষরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/PAP
সার্বিয়া: ভাষা এক, লেখা দু’রকম
সার্বীয় ভাষা সিরিলিক এবং ল্যাটিন অক্ষরে লেখা হয়, তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই একসাথে দু’রকম লেখা শিখতে হয়৷ ক্লাস ওয়ানে শিখতে হয় সিরিলিক অক্ষর, তারপর ল্যাটিন৷ কয়েক বছর পর ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চায়৷
ছবি: DW/D. Gruhonjic
জার্মানি: শুনে শেখা
২০ বছর আগে থেকেই এই সিস্টেম বা মাধ্যমে বহু স্কুলে লেখা শেখানো হয়ে থাকে৷ শেখার সুবিধার জন্য বোর্ডে একটি জানালার ছবির পাশে শুধু ‘জ’ বা ঘড়ির পাশে ‘ঘ’ লেখা হয়৷ বাকিটা শিখতে হয় শুনে শুনে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, এভাবে অনেক বাচ্চার পক্ষেই ঠিকমতো লেখা শেখা সম্ভব নয়৷ তবে এই নিয়মে পড়া শেখার ব্যাপারে কিন্তু তাড়াতাড়ি সাফল্য এসেছে৷