কেরালা রাজ্যে সম্প্রতি এরকম একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ মানবাধিকার কর্মীরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷ তবে হিজড়াদের সমাজের সঙ্গে একীভূত করাই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
স্কুলটির নাম ‘সহজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল'৷ ছয়জন হিজড়া অ্যাক্টিভিস্ট স্কুলটি পরিচালনা করছেন৷ আপাতত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ জন৷ হিজড়া হওয়ার কারণে যারা ছোটবেলায় স্কুলে পড়াশোনা করতে যেতে পারেননি সেরকম বয়স্ক হিজড়াদের জন্য স্কুলটি গড়ে তোলা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে তাদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে৷
স্কুলের প্রশাসক ও হিজড়া অ্যাক্টিভিস্ট বিজয়রাজা মল্লিকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা চাই সমাজ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গ্রহণ করুক৷''
মল্লিকা সহ আরও দু'জন অ্যাক্টিভিস্ট মায়া মেনন ও সি কে ফয়সাল আশা করছেন তাঁদের উদ্যোগ ভারতে হিজড়াদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে৷
বৃহন্নলাদের ‘অহংকার যাত্রা’
২০১৩ সালের নভেম্বরে তৃতীয় লিঙ্গে হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বাংলাদেশের হিজড়ারা এবার ঢাকায় প্রথমবারের মতো ‘প্রাইড মার্চ’ করেছেন৷ এতে অন্তত এক হাজার হিজড়া অংশ নেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
প্রাইড মার্চ
বাংলাদেশের হিজড়া সম্প্রদায় ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো ‘হিজড়া প্রাইড ডে’ উদযাপন করেন৷ স্বীকৃতি পাওয়ার পর হিজড়ারা এই প্রথম ‘প্রাইড মার্চ’ করলেন৷ এই সমাবেশে অন্তত এক হাজার হিজড়া অংশ নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Monirul Alam
স্বীকৃতির বর্ষপূর্তি
গত বছর ১০ নভেম্বরে বাংলাদেশের হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে মন্ত্রিসভার স্বীকৃতি পায়৷ তার এক বছর পূর্তিতে এই সমাবেশের আয়োজন করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Monirul Alam
আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদযাপন
জাতীয় পতাকা নিয়ে এই হিজড়ার উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে বর্ষপূর্তির উৎসব উদযাপনে কতটা খুশি তিনি৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
অধিকার প্রাপ্তি
এই স্বীকৃতির ফলে তাদের অধিকার ফিরে পান হিজড়ারা৷ পান তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেয়ার অধিকার, সেই সাথে সব সরকারি নথিপত্র এবং পাসপোর্টে নিজেদের লিঙ্গ উল্লেখ করার অধিকার৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
মেহেদী উৎসব
বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মেহেদী উৎসবের আয়োজন করেছিলেন হিজড়ারা৷ অনেককেই দেখা যায় মেহেদী উৎসবে যোগ দিতে৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
হিজড়াদের সংখ্যা
সাধারণ হিসেবে দেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ কিন্তু হিজড়াদের নেতা আবুল হোসেন ডয়চে ভেলেকে গত বছর জানিয়েছিলেন, সারা দেশে তাঁদের সংখ্যা ৪০ হাজারের কম হবে না৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
বঞ্চনার কাহিনি
এর আগে লিঙ্গের স্বীকৃতি না থাকায় হিজড়ারা বেঁচে থাকার তাগিদেই কখনো পুরুষ আবার কখনো নারীর পরিচয় ধারণ করতেন৷ আর তাঁদের শুধু বঞ্চনা নয়, নির্যাতনেরও শিকার হতে হতো৷ এমনকি তাঁরা মারা গেলে তাদের জানাজা বা সত্কার নিয়েও হতো জটিলতা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
7 ছবি1 | 7
২০১৪ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷ তবে তারপরও সামাজিক ও আইনগত নানান বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা৷ উল্লেখ্য, দেশটিতে হিজড়ার সংখ্যা ৩০ লক্ষের বেশি৷
এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট অঞ্জলি গোপালান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উদ্যোগটি মহৎ, তবে আসল উদ্দেশ্য হতে হবে হিজড়াদের মূল সমাজের সঙ্গে একীভূত করা৷ কাজটি সহজ নয়৷''
মানবাধিকার কর্মী প্রমাদা মেননও স্কুল চালুর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘স্কুল থেকে শিক্ষা নেয়ায় হিজড়ারা হয়ত ভালো চাকরি পেতে পারে, কিন্তু আসল কাজ হচ্ছে তাদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা৷ এতে অনেক সময় লাগবে৷''
প্রথম হিজড়া মেয়র
২০১৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রায়গড়ের মেয়র নির্বাচিত হন মধু বাই কিন্নর৷ তিনিই প্রথম নির্বাচিত মেয়র যিনি হিজড়া সম্প্রদায় থেকে এসেছেন৷ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়ে দেন৷
প্রথম হিজড়া কলেজ অধ্যক্ষ, কিন্তু...
২০১৫ সালের মে মাসে কলকাতার কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মানবি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমার সব সহকর্মী, এমনকি অনেক শিক্ষার্থীও আমার বিরোধিতা করেছেন৷''
মুরালি কৃষ্ণান/জেডএইচ
পাকিস্তানের হিজরারা নেচে ভয় কাটান
দিনের বেলা ওয়াসিম সেলফোনের সরঞ্জাম বেচেন৷ রাতে তিনি মহিলা সেজে বিভিন্ন পারিবারিক উৎসবে নাচেন৷ ওয়াসিম হলেন হিজরা, রক্ষণশীল পাকিস্তানে যা এক অনন্ত সংগ্রাম৷ আলোকচিত্রী মুহম্মদ মুহাইসেনের তোলা ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
নিশীথ নর্তকী
রাওয়ালপিন্ডি শহরে আঁধার নেমে এলে ওয়াসিমের মুজরা শুরু হয়৷ ২৭ বছর বয়সি ওয়াসিম নাচেন ‘‘হিজরা’’ হিসেবে, যাকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলা হয়ে থাকে৷ পাকিস্তানে প্রায় আট লাখ হিজরা আছেন, বলে অনুমান৷ বিয়েশাদি এবং অন্যান্য উৎসবে নাচনেওয়ালি হিসেবে তাঁরা খুবই জনপ্রিয়, কেননা হিজরার নাচ মঙ্গল আনে বলে অনেকের বিশ্বাস৷ কিন্তু শুধুমাত্র সেখানেই হিজরারা গ্রহণযোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
দিনের আলোয়
পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পুরুষদের মহিলাদের বেশ ধারণ করাটা আজও অবাঞ্ছনীয়৷ ওয়াসিম দিনের বেলা সেলফোনের সরঞ্জাম বিক্রি করেন৷ তাঁর সহকর্মী কিংবা বন্ধুবান্ধব ওয়াসিমের নিশীথ জীবন সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Muheisen
ওয়াসিম হলেন রানি
ওয়াসিমের এই দ্বিমুখী জীবনের কারণ হলো: ‘‘নাচনেওয়ালি হিসেবে আমি বেশি রোজগার করি৷’’ বাস্তবিক যাঁরা হিজরা বলে পরিচিত, তাঁদের কাছে জীবন একটা অনন্ত সংগ্রাম৷ যে নর্তকী হিসেবে কাজ করতে পারেন না, তাঁর জন্য বাকি থাকে শুধু পতিতাবৃত্তি৷ সেই সঙ্গে নানা অপমান ও অপব্যবহার – যা ওয়াসিমও খুব ভালোভাবেই চেনেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Muheisen
যখন একা
বহু ধর্মবিশ্বাসী মানুষ ‘‘না স্ত্রী, না পুরুষ’’ এই জীবদের ঘৃণা করেন৷ জঙ্গি ইসলামপন্থিরা প্রকাশ্যেই হিজরাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গীরণ করে থাকে৷ কাজেই হিজরারা থাকেন সঙ্গোপনে, নিজেদের মধ্যে৷ ‘‘আমি রাস্তায় বেরলে মানুষজন হাঁ করে থাকে’’, জানালেন ৪৩ বছর বয়সি বখতাওয়ার: ‘‘আমি যখন অন্য হিজরাদের সঙ্গে নাচি, শুধুমাত্র তখনই আমার নিজেকে নিরাপদ এবং সম্মানিত বলে মনে হয়৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা
মানুষের চোখ এড়ানোর জন্য হিজরারা শহরের অলিগলিতে আশ্রয় নিয়েছেন, এমনকি নিজেদের সহকর্মী ও পরিবারবর্গের কাছেও সত্তার মহাসত্যটি গোপন রাখেন তাঁরা৷ অথচ ২০১১ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-কে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ হিজরারা তাঁদের পাসপোর্টে লিখতে পারেন যে তাঁরা হিজরা; তাঁরা ভোট দিতে কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং আর পাঁচজনের মতো কাজে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
সমানাধিকারের দাবি
২০১৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনে বিন্দিয়া রানার মতো প্রার্থীরা প্রথমবারের মতো অংশ নিতে পারেন (ছবিতে ডানদিকে)৷ নির্বাচনে জিততে না পারলেও, রানা সমানাধিকার এবং বৈষম্যের অন্ত ঘটানোর দাবিতে তাঁর বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও-র কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন: কেননা শুধু আইন করে পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজের মনোভাব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/Shakil Adil
টানাপোড়েন
আজও খুব কম মানুষই ৪৪ বছর বয়সি আমজাদের মতো সগর্বে বলতে পারেন: ‘‘নারী হিসেবে একমাত্র কাজ, যা আমি করতে পারি না, তা হল সন্তানের জন্ম দেওয়া৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
7 ছবি1 | 7
এই উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানতে চাই৷ তাই লিখুন নীচের ঘরে৷