পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সীমান্ত। এদিকে ভারত। উল্টোদিকে বাংলাদেশের বেনাপোল। স্বাভাবিক সময়ে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সীমান্তের ছবিটা বদলে গেছে। বাংলাদেশ থেকে কিছু ট্রাক ঢুকছে। তবে ভারত থেকে ট্রাক যাচ্ছে না। উপরের ছবিতে বাংলাদেশ থেকে ঢোকা একটি ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সারাদিন ধরে ট্রাক ঢুকেছে। বুধবার সকাল থেকেও ঢুকছে। ভারত চাইছে, যত ট্রাক বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছেছে, তা পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসতে। মঙ্গলবার একের পর এক ট্রাক বেনাপোল থেকে এভাবেই পেট্রাপোলে ঢুকেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৫৬টি ট্রাক ভারতে ঢুকেছে।

ভারত থেকে কোনো ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে না। বাংলাদেশ থেকেও পণ্যভর্তি ট্রাক আসছে না। আসছে ভারতের খালি ট্রাক। ফলে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষীরা জানিয়েছেন, সরকার কিছুদিন আগে প্রতিবেশী দেশে ৮০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। ফলে প্রচুর পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আটকা পড়ে গেছে। সাবেক সাংসদ ও কৃষক নেতা রাজু শেট্টি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সমস্যার সমাধান করার অনুরোধ করেছেন।

সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কড়া করা হয়েছে। বিএসএফের ডিজি এসে পরিস্থিতি দেখে গেছেন। যে সব ট্রাক ঢুকছে, সেই ট্রাকচালকদের কড়া তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে। কোনোরকম ঝুঁকি নিচ্ছে না সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।

বাংলাদেশের নাগরিকদের মেডিক্যাল ভিসা থাকলে তাদের ভারতে আসতে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন। এছাড়া ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে আসতে পারছেন। এখন তারাই শুধুমাত্র ভারতে ঢুকতে পারছেন।

বাংলাদেশি নাগরিক যারা ভারতে ছিলেন, তারা সীমান্ত দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশে ফিরছেন। প্রচুর মানুষ এভাবেই ফিরে যাচ্ছেন।

ট্রাকচালক ইন্দু সিং ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আমি মুম্বই থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ গেছিলাম। সেখান থেকে ফিরছি। তবে খুব কঠিন কোনো পরিস্থিতির মুখে আমাকে পড়তে হয়নি।''

মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ধীমান চন্দ্র দেবনাথ বাংলাদেশ গিয়েছিলেন এক আত্মীয়কে ওষুধ দিতে। সেসময়ই ছাত্রদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। চারপাশ উত্তাল হয়ে যায়। ফলে তিনি দ্রুত ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

ঢাকার মালিবাগে ছিলেন গৌতম ঘোষাল। গত ছয় বছর ধরে তিনি বাংলাদেশেই বেশিরভাগ সময় থাকতেন। ড্রাইভিংয়ের ট্রেনিং দিতেন আসানসোলের গৌতম। পরিস্থিতি দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রথম সুযোগেই ঢাকা থেকে বাসে করে সীমান্ত পৌঁছান। তারপর বেনাপোল থেকে চলে আসেন পেট্রাপোলে।

জলপাইগুড়ির সেনপাড়ার বাসিন্দা দুলাল সরকার তার ঠাকুমাকে নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরতে গেছিলেন। পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠার পর তারাও তাড়াতাড়ি ভারতে ফিরে এসেছেন।

গত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশে ছিলেন অজিত কুমার। বগুড়ায় চাকরি করতেন। চোখের সামনে আন্দোলন দেখেছেন। তারপর ভারতে ফেরার প্রথম সুযোগেই দেশে ফিরে এসেছেন।

মুদ্রা ব্যবসায়ী বাপ্পা ঘোষ বলেছেন, ''বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে খুব বেশি মানুষ ভারতে আসছেন না আমার মতো মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি টাকা যে দরে কিনে রেখেছিলাম তা ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা মনে করছি, এখন লাভের দিকে তাকালে হবে না। কারণ দর কমছে। সেটা হিসাব করে রেখেই আমরা মূল পুঁজি বাঁচানোর চেষ্টা করছি।'

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে ভারতীয় সেনা এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

সোমবার সকালে শেষ বিমান চলাচল করেছে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। দুপুরের পর একে একে সমস্ত বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বিমান পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত, উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত-সহ প্রায় সমস্ত সিমান্তেই বন্ধ রয়েছে বাণিজ্য। ট্রাকগুলিকে বন্দরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। হিলি সীমান্তে ৮৯টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

সোমবার বিকেলে এবং মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ভারতীয় ট্রাকগুলিকে সীমান্ত পার করে ভারতের দিকে ঢোকানো হয়েছে। নিরাপত্তার কারণেই একাজ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সীমান্তের দুই পারেই বহু মানুষ অপেক্ষা করছেন। পায়ে হেঁটে তারা সীমান্ত পার করতে পারছেন। বাস যাতায়াত করছে না।

ভারতীয় নাগরিকেরা সীমান্ত পার করতে চাইলে বিএসএফ-এর তরফে বর্ডার পার হতে নিষেধ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে না ঢুকতে।

বহু বাংলাদেশি ভারতে এসে আটকে পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই চিকিৎসার জন্য় আসেন। বিমান, রেল, বাস বাতিল হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষের পথে।

পেট্রাপোল, হিলি, আসামের করিমগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বহু ভারতীয় দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে। পায়ে হেঁটে তারা সীমান্ত পার করছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এদিন সর্বদল বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার ভারতীয় আছেন। এখনই তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

কারফিউ ওঠার পর ফের বাণিজ্য শুরু হবে বলে আশা করছেন ব্য়বসায়ীরা। তবে আপাতত কোনো ট্রাক সীমান্তের অন্য়পারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য বাস। কোনো বাস সীমান্ত পার করতে পারছে না।