1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উদার হবে সারোগেসি আইন?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৭ আগস্ট ২০১৭

গত বছরের নভেম্বরে ভারতের লোকসভায় ‘‌সারোগেসি বিল ২০১৬'‌ পেশ করা হয়৷ এরপর জানুয়ারিতে সেটি বিচার-‌বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক স্থায়ী সমিতির কাছে৷ সম্প্রতি তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে৷

ছবি: DW/D. Guha

‌নভেম্বরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে৷

সারোগেসি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো মহিলা অন্যের জন্য গর্ভধারণ করেন, জন্মের পর শিশুটিকে অন্যের হাতে সঁপে দেওয়ায় সম্মতি‌ও দেন৷ ভারতের মতো দেশগুলিতে বরাবরই মহিলারা শোষণের শিকার হয়ে আসছে৷

‘‌সারোগেসি বিল ২০১৬'-তে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র বিবাহিত দম্পতিরাই সারোগেসির সুবিধা নিতে পারবেন৷ অবিবাহিত কেউ, লিভ-‌ইন পার্টনার, একক বাবা-‌মা, বিধবা এবং সমলিঙ্গরা সারোগেসির সুবিধা পাবেন না৷ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘‘‌বিদেশিদের পাশাপাশি এনআরআই (‌নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান)‌, পিআইও (‌পার্সন অফ ইন্ডিয়ান অরিজিন)‌ এবং ওসিআই (‌ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া)‌-‌দের ওপর এই বিধিনিষেধ চালু হবে৷ অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিক ছাড়া অন্য কেউই সারোগেসির সুবিধা পাবেন না৷'‌'

‘ভারতে এখনও সেই ধরণের সামাজিক সচেতনতা গড়ে ওঠেনি’

This browser does not support the audio element.

ক'‌দিন আগেই সংসদে ৮৮ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক স্থায়ী সমিতি৷ বিলের নিন্দা করে এমন প্রস্তাবকে ‘‌পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ'‌ বলে আখ্যা দিয়েছে সংসদীয় সমিতি৷ সারোগেসি আইনের পরিসীমা বাড়িয়ে আরও বেশি উদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সমিতির সুপারিশ, বিবাহিত দম্পতি, লিভ-‌ইন পার্টনার, একলা বাবা অথবা মা এবং বিধবাদের সারোগেসির সুবিধা দেওয়া হোক৷ সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রামগোপাল যাদবের নেতৃত্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৩১ জন সাংসদ এই সমিতির সদস্য৷ দিন কয়েক আগে প্রস্তাবিত আইনের সীমারেখা বাড়িয়ে বিবাহিত দম্পতিদের পাঁচ বছর বিবাহের সময়সীমা তুলে দিয়ে একবছর করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি লিভ-‌ইন পার্টনার, একক মা অথবা বাবা এবং বিধবাদেরও সারোগেসি আইনের আওতায় আনার কথা বলেছে স্থায়ী সমিতি৷ এছাড়া ভারতীয় নাগরিকদের মতোই প্রবাসী ভারতীয়দেরও এই সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সমিতি৷ যে মা গর্ভ ভাড়া দেবেন, তাঁকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে৷

পেশায় চিকিৎসক রাজনীতিবিদ ডা. কাকলি ঘোষদস্তিদার দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব৷ তাঁর কথায়, ‘‘‌অনেক কারণের একটি হল স্ত্রীর সন্তান ধারণে অক্ষমতা৷ শুধুমাত্র মহিলার জীবনহানি হতে পারে এমন ক্ষেত্রেই জা, ননদরা এগিয়ে এসে গর্ভধারণ করেছেন৷ ভারতে এখনও সেই ধরণের সামাজিক সচেতনতা গড়ে ওঠেনি৷ তাই বাধ্য হয়েই গর্ভ ভাড়া নিতে বাধ্য হন মানুষ৷ ভারতের পশ্চিম ও উত্তরে মহিলাদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে৷ আমি মনে করি, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের ছাড় দেওয়া উচিত৷ সারোগেট মা খোঁজার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হবেন পরিবারেরই কেউ৷ তা না হলে বাইরে থেকে কাউকে নেওয়া হলে তাঁর শরীরের যত্ন নিতে হবে, পরীক্ষা করাতে হবে৷ তাঁকে উপযুক্ত অর্থ দিতে হবে৷ তিনি যেন কোনোরকম নির্যাতনের শিকার না হন, সেই খেয়াল রাখতে হবে৷ ইদানীং এ সবের ভীষণভাবে অপব্যবহার হচ্ছে৷ ‘‌ফিগার'‌ খারাপ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই ‘শখ পূরণ'‌ করতে সারোগেট মা ভাড়া করছেন৷'‌'

‘নবজাতকের ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে’

This browser does not support the audio element.

‌সম্প্রতি একটি সন্তান দত্তক নিয়েছেন প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক মলয় হালদার৷ তাঁর মতে, ‘‌‘‌সারোগেসি আইন প্রণয়ন হলে একদিকে যেমন নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তানসুখ পাবেন, তেমনই উলটোদিকে, শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে৷ বিশেষত লিভ টুগেদার সম্পর্কে দায় ঝেড়ে ফেলার মানসিকতা থেকে নবজাতকের ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা মোটেই অমূলক নয়৷'‌'‌

ভারতে লুকিয়ে গর্ভ ভাড়া দেওয়া ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছিল সরকার৷ শুরুর দিকে কয়েকটি হাসপাতাল এমন কিছু মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলত, যাঁরা অর্থের বিনিময়ে অন্যের হয়ে গর্ভ ধারণ করতেন৷‌ কিন্তু, ধীরে ধীরে সেটি বাণিজ্যিক আকার নিতে শুরু করে৷ এমনটা রুখতেই সরকার নতুন বিল নিয়ে আসে৷ এতে বলা হয়, সারোগেট মাকে আগে থেকেই বিবাহিত হতে হবে এবং কমপক্ষে এক সন্তানের মা হতে হবে৷ শুধু তাই নয়, সারোগেট মা শিশুর জন্ম দেওয়ার পর তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন৷ বিবাহিত দম্পতিরা সারোগেট মা নিতে চাইলে প্রথমে তাঁদের সন্তান প্রসবে অক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে৷ তাছাড়া তাদের ভারতীয় নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক৷ এমনকি সারোগেট মাকে দম্পতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হতে হবে৷

আরও কিছু বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে ওই বিলে৷ যেমন দম্পতির বৈবাহিক সম্পর্ক কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে (‌বর্তমান প্রস্তাবে যা কমিয়ে একবছর করা হয়েছে)৷ স্ত্রীর বয়স ২৫ থেকে ৫০-‌এর মধ্যে হতে হবে৷ স্বামীর বয়স হতে হবে ২৬ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে৷ স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে সারোগেট মায়ের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছর৷ 

এখন এই সমস্ত প্রস্তাবনায় আমূল পরিবর্তনের কথা বলেছে সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি৷ তাদের রিপোর্টে সারোগেট মা-‌এর ‘‌পরোপকারী'‌ হয়ে শিশুর জন্ম দেওয়ার প্রস্তাবটি কার্যত খণ্ডন করে দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সারোগেট মা কোনোভাবেই কিছু পান না৷ বরং তাঁর নিজের শরীরের ওপর অধিকারটুকুও অস্বীকার করা হয়৷ যে কারণে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা আরও মজবুত হয়৷

সারোগেট মাকে নিকটাত্মীয় হওয়ার শর্তকে ‘‌সামাজিক শোষণ'‌ বলে উল্লেখ করেছে সমিতি৷ জন্মদাত্রী মাকে কানাকড়ি না দিয়ে তাঁর কাছ থেকে শিশু নেওয়ার ইচ্ছাকে অনৈতিক ও শোষণের মাধ্যম বলেছে৷ প্রস্তাবিত আইনের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, গর্ভধারণ এক মিনিটের ব্যাপার নয়, ন'‌মাস ধরে শিশুকে গর্ভে ধারণ করে রাখা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়৷ এতে সেই মহিলার শরীর, তাঁর স্বাস্থ্য, তাঁর পরিবার এবং সময় সবকিছুই যুক্ত থাকে৷ ‘‌পরোপকারী সারোগেসি'‌-র পর দম্পতি সদ্যোজাত শিশু পেয়ে যায়, চিকিৎসক, হাসপাতাল ও আইনজীবীরা তাঁদের পারিশ্রমিক পেয়ে যান৷ কিন্তু, জন্মদাত্রী মায়ের ভাগ্যে কিছুই জোটে না৷ তাই সমিতির প্রস্তাব, সারোগেট মা যিনি হবেন, তাঁকে একটি নিশ্চিত পরিমাণ অর্থ দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে দরদাম করা চলবে না এবং সেটা দিতে হবে প্রক্রিয়া শুরুর আগেই৷ ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার দিকে নজর রেখে সমিতির আরও প্রস্তাব, কাউকেই সারোগেট মা হ‌তে বাধ্য করা চলবে না৷

তবে প্রস্তাবিত আইনের যে বিষয়গুলির সঙ্গে সমিতি সহমত পোষণ করেছে সেগুলি হলো, কোনো মহিলা একাধিকবার গর্ভধারণ(‌সারোগেসি)‌ করতে পারবেন না৷ দারিদ্রতার কারণে যেন কেউ গর্ভধারণ করতে বাধ্য না হন এবং কোনো মহিলা যেন সারোগেসিকে ব্যবসা হিসেবে বেছে না নেন৷

সারোগেসি বিল কি আরো উদার করা উচিত? মতামত জানান নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ