ভারতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই বায়োগ্যাসের প্রসারের চাবিকাঠি
৩০ আগস্ট ২০২৩
ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে পরিবেশবান্ধব বায়োগ্যাসের ব্যবহার আরও অনেক বাড়ানো সম্ভব৷ নতুন প্রযুক্তি থাকলেও উন্নত জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার অভাব ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব সেই পথে বাধা সৃষ্টি করছে৷
বিজ্ঞাপন
ছোট এক বায়োগ্যাস স্টেশন এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের অংশ৷ সেখানে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়৷ সেটির বৈশিষ্ট্য প্রায় প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসেরই মতো৷ প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার রাহুল জৈন বলেন, ‘‘সিবিজি বা কমপ্রেস্ড বায়োগ্যাস আসলে বায়োগ্যাসের এক শুদ্ধ বা সমৃদ্ধ রূপ৷ অ্যানএয়ারোবিক ডাইজেশন প্রসেসের মাধ্যমে সেটি উৎপাদন করা হয়৷ কমপ্রেস্ড বায়োগ্যাসের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মিথেন, প্রায় ৩০ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অল্প মাত্রার আর্দ্রতা ও হাইড্রাজেন সালফাইট থাকে৷''
‘প্রাইমুভ ইঞ্জিনিয়ারিং' নামের কোম্পানি ধানের খড় থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে৷ উৎপাদনের সময়ে জীবাণু এমন এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যে প্রক্রিয়ায় স্টার্চ, চিনি, প্রোটিন এবং চর্বি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেনে রূপান্তরিত হয়৷
ধানের খড় থেকে বায়োগ্যাস
04:08
‘প্রাইমুভ'-এর প্রতিষ্ঠাতারা সেটিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের বায়োগ্যাস বলেন৷ প্রথম প্রজন্মের বায়োগ্যাসের ক্ষেত্রে ভুট্টা ও গমের মতো খাদ্যশস্য ব্যবহার করা হতো৷ এই নতুন প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্যকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করতে পারে৷ সেখানে এক দিনে প্রায় ৮০০ কিলো ধানের খড় একশো কিলো কমপ্রেস্ড বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত করা হয়৷ প্রাইমুভ কোম্পানির সূত্র অনুযায়ী এই সিস্টেম কোনো রাসায়নিক ছাড়াই তুলোর গাছের অবশিষ্ট অংশ দিয়েও বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে পারে৷
নারায়ণ বয়নের মতো স্থানীয় চাষিরাও এই সিস্টেমের ফলে উপকৃত হচ্ছেন৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগে হয় আমাকে এই খড় পোড়াতে হতো অথবা গবাদি পশুর খোরাক হিসেবে ব্যবহার করতে হতো৷ তারপর আমি এই বায়োগ্যাস কোম্পানির সন্ধান পেলাম৷ তারা কিলোপ্রতি চার ভারতীয় টাকা দিয়ে আমার কাছ থেকে খড় কিনলো৷ এই বর্জ্য বিক্রি করে কিছু উপার্জন করতে পেরে আমি খুশি৷''
রূপান্তর প্রক্রিয়ার অবশিষ্ট বর্জ্য গাঁজানো জৈব সারে পরিণত করা হয়৷ চাষিরা ফসলের উপর সেই সার ছড়িয়ে দেন৷ কোম্পানির মতে, এর ফলে কিছু বাড়তি পরিবেশগত সুবিধাও পাওয়া যায়৷ গোটা প্রক্রিয়ায় কোনো কার্বন নির্গমন করা হয় না৷ তাছাড়া এই সব প্রণালী বায়ু অথবা সৌরবিদ্যুৎ প্রণালীর তুলনায় অনেক সহজ ও নমনীয় বলে কোম্পানি দাবি করছে৷ প্রাইমুভ কোম্পানির কর্ণধার সন্তোষ গোন্ধালেকর বলেন, ‘‘আমাদের মতে, গোটা দেশ ও পৃথিবী জুড়ে, সব গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে অফুরন্ত বায়োমাস ছড়িয়ে রয়েছে৷ আফ্রিকা, ব্রাজিল, অ্যামেরিকা, ক্যানাডা, রাশিয়া – সব জায়গায় চাষবাস করা হয়৷ তাই বায়োমাসের উপর নির্ভর করলে অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির সুযোগের সব সীমাবদ্ধতা আর থাকে না৷''
ভারত সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে এমন ৫,০০০ প্রণালী সক্রিয় দেখতে চায়৷ বর্তমানে মাত্র ৪৬টি সিস্টেম চালু হয়েছে৷ তার মধ্যে অনেকগুলি জ্বালানি উৎপাদন করতে পৌরসভার বর্জ্য ও জঞ্জালের স্তূপের বায়োমাসের উপর নির্ভর করে৷ কিন্তু আরও বায়োগ্যাস উৎপাদনের পথে আরেকটি বড় বাধা রয়েছে৷ ভারতের ভাগাড়গুলিতে জঞ্জাল প্রায় কখনোই আলাদা করা হয় না৷ বায়োগ্যাস সিস্টেমের প্রসারের পথে সেটা অন্যতম বড় বাধা৷ প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার রাহুল জৈন মনে করেন, ‘‘আবর্জনা আলাদা করা না হলে প্লান্ট কাজ করবে না৷ কারণ সেটির শুধু অরগ্যানিক কাঁচামাল লাগে৷ অন্য ধরনের জঞ্জাল প্লান্টে ঢুকলে গোটা জৈব পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে৷’’
প্রচলিত পেট্রোলের মতো বায়োগ্যাসের ব্যবহার ছড়িয়ে দেবার চাবিকাঠি হলো জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা, চাষের কাজ ও বায়োগ্যাস উৎপাদনকারীদের মধ্যে আরও ভালো সহযোগিতা৷
প্রচেতা শর্মা/এসবি
জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কৃষকের অস্ত্র ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়ছেন বাংলাদেশের কৃষকরা। সাধারণ জীবনযাপনের মাঝেই বহুকালের পুরনো পদ্ধতি মেনেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তারা। দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিয়মিত বিরতিতে বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিরোজপুর জেলার একজন কৃষিজীবী ভাসমান খেতে সেচের কাজ করছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক কৃষকই ফসলের চারা রোপণ করেন। বর্ষাকালে শুষ্ক জমিতে কচুরিপানার মতো জলজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি ভাসমান ভেলায় সবজি চাষ করেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কীভাবে যত্ন
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে ৪২ বছর বয়সি কৃষক মোহাম্মদ মোস্তফা তার ভাসমান খামারে চারার শিকড়ের উপরে জলের আগাছাগুলিকে রাখার চেষ্টা করছেন৷ তিনি রয়টার্সকে বলেন, "আমার বাবা এবং পূর্বপুরুষরা সবাই এ কাজ করেছেন৷ কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। পাঁচ বছর আগে ভাসমান খেতে চাষ করতে শুরু করি। এটি আমার জীবনে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে।"
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘ওরা কাজ করে’
কৃষক মোহাম্মদ সেলিম বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় তার খামারে ভাসমান খেতের ছাদে দড়ি দিয়ে একটি লাউ ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এই কৌশলটি শুষ্ক মৌসুমে শাকসবজিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বিক্রিবাটা চলছে
বাংলাদেশের পিরোজপুরের বেলুয়া নদীর তীরে একটি দ্বি-সাপ্তাহিক ভাসমান বাজারে কৃষকরা তাদের সবজি, ফল এবং চারা বিক্রি করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
জীবন বাঁচানোর উপায়
জলজ আগাছার ডালপালা থেকে বোনা ভেলাগুলি তাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। চরম বর্ষায় যখন শুষ্ক জমি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে, তখন এটি কাজে লাগে। এভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কাজ ভাগ করে নেয়া
বছর ৩৫-এর মুর্শেদা বেগম তার স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে পিরোজপুর জেলায় তাদের বাড়ির ভাসমান খামারে রোপণের জন্য একটি নৌকায় চারা তুলে রাখছেন। ঝড়, বন্যা এবং ক্ষয়জনিত বৃষ্টির প্রভাবে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে আশার আলো মুর্শেদা-মোহাম্মদরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাল ছেড়ো না
ভাসমান খামারগুলি এখন পিরোজপুর জেলায় মোট ১৫৭ হেক্টর (৩৮৮ একর) জুড়ে বিস্তৃত। নাজিরপুরে এগুলি ১২০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। পাঁচ বছর আগে এমন জমি ছিল মাত্র ৮০ হেক্টর। ২০০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
খামারে ভরসা
পিরোজপুরের একজন কৃষক ভাসমান খামারের কাজ করছেন। জলবায়ুর প্রভাব প্রাকৃতিক কারণে আরো জটিল হচ্ছে। টেকটোনিক পরিবর্তনের ফলে খেত ডুবে যাচ্ছে। উজানের বাঁধগুলি পলিকে ধরে রাখছে, যেগুলি আসলে ক্ষয়প্রাপ্ত ব দ্বীপ গঠনের কাজে লাগে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
প্রকৃতির পুত্র
পিরোজপুর জেলার এই কিশোরের নাম রাতুল ইসলাম। বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করার জন্য নৌকা থেকে লাফ দিচ্ছে সে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্যোগী এই কিশোরও।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
মায়ের পাশে
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় মুর্শেদা বেগমের ছেলে রাতুল। দুপুরে মায়ের সঙ্গে আড্ডা দেয় ঠিকই, তবে সে ভাসমান খেতের কাজেও সাহায্য করে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
নারী শক্তির উদ্যোগ
পিরোজপুরে মুর্শেদা, তার মেয়ে এবং প্রতিবেশীরা স্থানীয়ভাবে গাছের পাতাগুলোকে পাতলা টুকরো করে কেটে ওয়াটার লেটুসের বীজের বল বেঁধেছেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাতে কালো দাগ
ওয়াটার লেটুস চারা থেকে ক্রমাগত বল তৈরি করার ফলে কালো দাগে ভরে গিয়েছে মুর্শেদার হাত। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না তিনি। প্রকৃতির সঙ্গে এভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছেন মুর্শেদা তার পরিবার।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
রোজের জীবন
পিরোজপুরে গ্রামবাসীরা আখ কেনার জন্য একজন বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। চাষবাস, সংসার, ছোটদের পড়াশোনা, বাজার হাটের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা- এভাবে আশার আলো দেখাচ্ছেন পিরোজপুরের এই কৃষিজীবী পরিবারগুলি।