রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে ভারতের প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কেন্ডেয় কাটজু৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে কংগ্রেস জোট সরকারের আমলে তামিলনাড়ুর ডিস্ট্রিক্ট জাজের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাজ হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি কলমের এক খোঁচায় ঐ বিচারকের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খারিজ করে দেন৷ শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে ঐ বিচারককে তামিলনাড়ু হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে উন্নীত করা হয়৷
বিচারপতি কাটজুর অভিযোগ, ঐ বিচারকের পেছনে ছিল রাজ্যের এক বড় রাজনৈতিক দলের জোরালো সমর্থন৷ ঐ রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে কংগ্রেস জোট সরকারের এক ওজনদার শরিক৷ জেলায় বিচারক থাকাকালীন ঐ রাজনৈতিক দলের এক নেতার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন তিনি৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বিচারপতি কাটজু সুপ্রিম কোর্টের তামিলনাড়ু হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে যোগ দিয়ে এবিষয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি গোয়েন্দা বিভাগকে দিয়ে ঐসব অভিযোগের তদন্ত করান এবং গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টে তা সত্য প্রমাণিত হয়৷ যেহেতু উক্ত বিচারকের দুবছরের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবার মুখে, তাই উক্ত বিচারপতির মেয়াদ বাড়ানো হবে না, এটাই ধরে নেয়া হয়েছিল৷ কিন্ত দেখা গেল তাঁকে আরো এক বছর এক্সটেনশন দেয়া হয়৷ বিচারপতি নিয়োগের নির্বাচকমন্ডলী তাঁর এক্সটেনশন নামঞ্জুর করা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো হলো? বিচারপতি কাটজুর বক্তব্য অনুযায়ী, তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস জোট সরকারে তামিলনাড়ুর এক ওজনদার রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে, এই যুক্তি দেখিয়ে যে, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মনমোহন সিং সরকারের সংখ্যাগরিষ্টতা না থাকায় ঐ তামিল দল, ধরে নিতে হবে ডিএমকে, তার সমর্থন তুলে নেবে এবং সরকার পড়ে যাবে৷ মনমোহন সিং তখন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি বিমানবন্দরে৷ খবর শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন৷ তখন মন্ত্রিসভার এক কংগ্রেস মন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, পরিস্থিতি তিনি সামলে নেবেন যাতে সরকার না পড়ে৷ পরে শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে তিনি জানান, উক্ত বিচারপতির কার্যকালের মেয়াদ না বাড়ালে সরকারে সংকট তৈরি হবে৷ এরপর ঐ বিচারপতিকে এক্সটেনশন দেয়া হয় এবং পরে তাঁর পদোন্নতি হয়৷
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরণের অভিযোগের স্থায়ী সমাধান হলো অবিলম্বে বিচার বিভাগের সংস্কার৷ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে যে নির্বাচক মন্ডলীর সিস্টেম আছে, তাতে গলদ রয়ে গেছে৷ বিচারকদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমন্ডলী ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ এর সংস্কার করে সংসদের অনুমোদনক্রমে আলাদা বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন করা দরকার৷ বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে৷ যদি সেটা পারা যেত, তাহলে এক মন্ত্রী সরাসরি প্রধান বিচারপতির কাছে যেতে পারতেন না৷ দ্বিতীয়ত, অবসর গ্রহণের পরই কোন বিচারপতিকে সরকারি কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা উচিত নয়৷ বিচারপতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হলে কয়েক বছর অপেক্ষা করা দরকার৷ নাহলে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থেকে যায়৷