আর মাস চারেকের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন৷ কংগ্রেস ও বিজেপি নির্বাচনি লড়াই-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরে বিজেপি হাতে নিয়েছে ‘মিশন২৭২+’ অভিযান৷ বসে নেই কংগ্রেসও৷
বিজ্ঞাপন
হালের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সাফল্য হাতে নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি আর দেরি না করে নেমে পড়েছে ভোট ময়দানে৷ দেশব্যাপী শুরু করে দিয়েছে ‘মিশন২৭২+' প্রচার অভিযান৷ একক শক্তিতে সরকার গড়তে হলে সংসদের মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে পেতে হবে ন্যূনতম ২৭২টি আসন৷ স্লোগান হবে মোদী চয়নিত ‘ভোট ফর ইন্ডিয়া'৷
প্রচারণায় বিজেপির হাতিয়ার হবে কংগ্রেস শাসনের দুর্নীতি ইস্যু৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর বার্তা গোটা দেশে ৬০ দিনের প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ভোটারের দরজায় পৌঁছে দেয়া হবে৷ প্রচারের অংশ হিসেবে অর্থ সংগ্রহের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে ‘এক ভোট, এক নোট' কর্মসূচি৷ বিজেপিপন্থিদের কাছ থেকে নেয়া হবে ১০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনি প্রচার অভিযান কমিটি, সংসদীয় কমিটি এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের দীর্ঘ অধিবেশনে ঠিক হয়েছে যে, প্রার্থী নির্বাচনে চারশটি সংসদীয় কেন্দ্রে পাড়ায় পাড়ায় জনসভা করা হবে৷ দলের ভবিষ্যতদর্শী সনদ রচনা করে তা সমন্বিত করা হবে নির্বাচনি ইশতেহারে৷ জনগণের কাছে পৌঁছোতে জোর দেয়া হবে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং-এর ওপর৷ আবেদন জানানো হবে ভোটারদের দরজায় দরজায় গিয়ে৷ জানুয়ারি থেকে প্রায় ১২ কোটি নতুন ভোটারদের পাশে টানতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বিজেপি৷
প্রচার অভিযানের নতুন টেকনিক কী আম আদমি পার্টির সাফল্যের অনুকরণে? বিজেপি মুখপাত্র তা অস্বীকার করে বলেন, ১৯৭৭ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলনের পর এই পন্থা অবলম্বন করে সাবেক জনতা পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল৷
কংগ্রেসের প্রস্তুতি
হালের বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়লেও কংগ্রেস বসে নেই৷ আগামী ১৭ জানুয়ারি বসছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের অধিবেশন৷ কংগ্রেসের অন্দর মহল থেকে শোনা যাচ্ছে দলের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে দলের উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর নাম৷ তার আগে রাহুল শিবির বার্তা দিতে চায় দলের কাণ্ডারি রাহুলই৷ বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ব্যর্থতা নিয়ে রাহুলের দিকে আঙুল তোলা সত্ত্বেও৷
সংসদীয় ভোটের রোডম্যাপ তৈরি করার আগে ২৭ ডিসেম্বর কংগ্রেস শাসিত ১২টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকতে চলেছেন রাহুল৷ মত বিনিময় হবে মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসুরক্ষা, লোকপাল আইনের মতো সামাজিক কর্মসূচির সফল রূপায়ন নিয়ে৷ হালে দুর্নীতি-বিরোধী লোকপাল আইন পাসে ছিল রাহুলের সক্রিয় ভূমিকা৷
এরপর তিনি বৈঠক করবেন শরিক দলগুলির নেতা শরদ পাওয়ার, লালুপ্রসাদ, রামবিলাস পাশোয়ান ও ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে৷ দলীয় স্তরে রদবদল করতে চলেছেন মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থানে৷ আনা হতে পারে নতুন মুখ৷ কংগ্রেস পার্টির লাগাম যে রাহুলের হাতে সেই বার্তাই দিতে চান তিনি৷ সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রীর ইঙ্গিত যুব ভারতের যোগ্য নেতা রাহুল৷ তাঁরই প্রধানমন্ত্রী হওয়া সাজে৷ এক কথায়, রাহল গান্ধী কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর নতুন মুখ৷ স্রেফ আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটুকু বাকি৷
রাহুল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে তার অর্থ হবে প্রথমত, ড. মনমোহন সিং আর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না৷ দ্বিতীয়ত, রাহুল হলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া বেশ কিছুটা কমে যেতে পারে, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷