ভারতে এসে প্রকৃত গো-সেবা দেখালেন এক জার্মান মহিলা৷ এটা তথাকথিত গো-রক্ষকদের থেকে একেবারে আলাদা৷ প্রায় ১২০০ অসুস্থ, মৃতপ্রায়, পরিত্যক্ত গবাদি পশুকে মাতৃস্নেহে থাকা খাওয়া, ওষুধপত্র দিয়ে ৩৮ বছর ধরে সেবা করে চলেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গো-রক্ষার নামে ভারতে যে তান্ডব চালাচ্ছে তথাকথিত গো-রক্ষকরা, তা নিয়ে সমাজে কম জল ঘোলা হয়নি৷ গণপিটুনিতে মারা গেছে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়৷ কিছুদিন আগে দিল্লি-মথুরা ট্রেনে গোমাংস নিয়ে যাচ্ছে বলে সন্দেহ করায় জুনেদ খান নামে এক কিশোরের প্রাণ যায় নকল গো-রক্ষকদের হাতে৷ প্রধানমন্ত্রী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এদেরকে বলেছেন নকল গো-রক্ষক৷ মহাত্মা গান্ধী বা আচার্য় বিনোবাভাবের আদর্শের বিপরীত৷ এরা সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব নষ্ট করতে চাইছে৷ তাতে কি ? গো-রক্ষার নামে গৈরিক পতাকাটা তো উড়ানো যাবে৷
পাশাপাশি এর সঙ্গে তুলনা টেনে বলা যায় প্রকৃত গো-সেবা কাকে বলে তার দৃষ্টান্ত রেখেছেন এক জার্মান মহিলা৷ নাম ফ্রিডারিশ ইরিনা ব্রুনিং৷ ভারতীয় দর্শনের গুরুবাদে প্রাণিত হয়ে বার্লিন থেকে ভারতে এসেছিলেন তিনি ১৯৭৮ সালে ২০ বছর বয়সে৷ এখন তাঁর বয়স ৫৯ বছর৷ ভারতে এসে উনি যান উত্তরপ্রদেশের মথুরার রাধাকুন্ডে নতুন গুরুর খোঁজে৷ তাঁর উপলব্ধি, গুরুই শুধু পারেন জীবনে এগিয়ে যাবার পথ দেখাতে৷ নিজের মুখেই মথুরা যাত্রার কথা জানান ব্রুনিং৷
মাংস উৎপাদন খারাপ, নাকি ভালো?
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে ‘ভেগানিজম’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ ভেগানরা পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই মাংস বা পশু থেকে উৎপাদিত কোনো খাবার খান না৷ কিন্তু আসলে মাংস উৎপাদন এবং ভক্ষণ পৃথিবীর জন্য কতটা খারাপ?
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
শিল্পোন্নত দেশের মানুষ বেশি মাংস খায়
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ (মাথাপিছু) গড়ে মাংস খেয়েছে ৪১.৩ কেজি৷ অথচ ৫০ বছর আগে এর অর্ধেক মাংস খাওয়া হতো৷ গত বছর উন্নয়নশীল দেশে যেখানে মাথাপিছু ৩১.৬ কেজি মাংস খাওয়া হয়েছে, শিল্পোন্নত দেশে খাওয়া হয়েছে ৯৫.৭ কিলোগ্রাম৷
ছবি: China Photos/Getty Images
উৎপাদনে পানি খরচ
মাংস উৎপাদন একটি ব্যয়বহুল ব্যবসা৷ এতে অর্থ, সময় ও সম্পদ খরচ হয়৷ এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে ১৫,৪১৫ লিটার পানি লাগে৷ এক কেজি শুকরের মাংস উৎপাদনে লাগে ৬ হাজার লিটার পানি৷ অন্যদিকে সবজি, যেমন আলু উৎপাদনে ১ কেজিতে খরচ হয় ৩০০ লিটার পানি৷ অন্যদিকে ধান উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ২,৫০০ লিটার পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
গরু ও মুরগির খাদ্য
ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের উৎপাদিত প্রতি ৫ টন শস্যের মধ্যে ২ টন পোলট্রি বা মাছের খামারে যায়৷ অন্যদিকে, গুরুর মাংস উৎপাদনের জন্য এত খাদ্য ব্যয় হয় না৷ ঘাস খেয়েই এদের অনেকটা চাহিদা পূরণ হয়৷
ছবি: Norberto Duarte/AFP/Getty Images
উজাড় হচ্ছে বন
প্রাণী খাদ্যের জন্য বন উজাড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ গাছ কেটে গরু চারণ ক্ষেত্র বা কৃষিক্ষেত্র বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে৷ সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
বিষাক্ত মিথেন
কার্বন নিঃসরণে কৃষির ভূমিকা রয়েছে ১১ থেকে ১৫ ভাগ৷ অন্যদিকে, গরুর ঢেঁকুর বা ‘গ্যাস’ থেকে যে মিথেন উৎপন্ন হয়, তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২০ গুণ বিষাক্ত ও ক্ষতিকর৷
ছবি: DW/C.Lomas
5 ছবি1 | 5
বলেন, সেখানে গিয়ে এক প্রতিবেশীর সনির্বন্ধ অনুরোধে একটি গরু কেনেন৷ তারপর থেকে তাঁর জীবনের পথটাই যায় পাল্টে৷ মনপ্রাণ সঁপে দেন গোসেবায়৷ তিনি দেখলেন গবাদি পশু বুড়ো হয়ে গেলে, দুধ দেবার ক্ষমতা না থাকলে তাকে রাস্তাঘাটে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ মালিকের খাটালে তার আর জায়গা হয় না৷ মালিকের কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়৷ বাতিল হয়ে যায় এরা৷ রাস্তাঘাটে ঘুরতে ঘুরতে অনাহারে অর্ধাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় আহত বা পঙ্গু হয়ে পড়ে কিংবা মরে যায়৷
কলিযুগে মানুষ স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না৷ কিন্তু ব্রুনিং অত স্বার্থপর হতে পারেনি৷ গবাদি পশুর ক্লেশে তাঁর মন কেঁদে ওঠে৷ ব্রুনিং তখন তাদের তুলে নিজের তৈরি গোশালায় আশ্রয় দেন৷ খাদ্য, পানীয়, ওষুধপত্র, চিকিত্সা সবকিছুর ব্যবস্থা করেন পরম মমতায়, মাতৃস্নেহে৷ ব্রুনিংয়ের নিজের কথায়, ‘‘এরা আজ আমার কাছে সন্তানের মতো৷ অনেক সময় দেখেছি, অসুস্থ, আহত গরুকে আমার আশ্রমের কাছে কেউ ছেড়ে দিয়ে গেছে. তখন ওদের আমি ফেলতে পারি না৷ এখন লোকমুখে ব্রুনিংয়ের নাম সুদেবি মাতাজী৷ আর ৩৩০০ বর্গ গজ জমিতে গড়ে তোলা তাঁর গোশালার নাম সুরভি গোশালা নিকেতন৷
অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস খান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকলেও ভারতে গরু বা মহিষের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ সে দেশে যত মানুষ গরু বা মহিষের মাংস খান তাদের মধ্যে সোয়া কোটিই হিন্দু৷
ছবি: AP
গরু কম, মহিষ বেশি
হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে ধর্মীয় কারণেই গরুর মাংস কম খাওয়া হয়৷ তবে মহিষের মাংস খান অনেকেই৷ গরু এবং মহিষের মোট ভোক্তা প্রায় ৮ কোটি৷ ২০১১-১২-তে একটি জরিপ চালিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ (এনএসএসও)৷ সেই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
সাধারণ মানুষের মাঝে মাংস নিয়ে বিরোধ কোথায়?
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, যাঁরা গরু বা মহিষের মাংস খান তাঁদের বেশিরভাগই মুসলমান হলেও সেখানে সোয়া এক কোটি হিন্দুও এসব মাংস খান৷
ছবি: Getty Images/P. Guelland
সংখ্যাটা বাড়ছে
জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে গরু বা মহিষের মাংস খাওয়া বাড়ছে৷ এক কোটি মানুষের মধ্যে জরিপটি চালিয়েছিল এনএসএসও৷
ছবি: DW/S.Waheed
মাংস খাওয়ায় ভারত সবার পেছনে
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ১৭৭টি দেশে সব ধরণের মাংস খাওয়ার হার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তালিকায় সবার নীচে রয়েছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
রপ্তানিতে সবার আগে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরু এবং মহিষের মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নগরায়ণের কারণে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তারপরও অবশ্য অন্য সব দেশের তুলনায় ভারতের মানুষ এখনো অনেক কম মাংস খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
হিন্দুরা দ্বিতীয়
ভারতের মোট মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মুসলমান গরু বা মহিষের মাংস খান৷ সংখ্যার দিক থেকে তারপরেই রয়েছে হিন্দুরা৷ নিজেদের মোট সংখ্যার শতকরা হারের বিচারে মুসলমানদের পরেই রয়েছেন খ্রিষ্টানরা৷
ছবি: DW/S.Waheed
যাঁরা বেশি খান
মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা উপজাতিরাও যথেষ্ট গরু বা মহিষের মাংস খান৷ উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
‘‘গরু বাছুর মিলিয়ে ১২০০-রও বেশি গরু-মহিষ আছে আমার গোশালায়. সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত খোলা থাকে৷ নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সও আছে৷ জরুরি ডাক পেলে ছুটে যায়৷ এখন এই গোশালায় দেখা দিয়েছে স্থানাভাব৷ জায়গা করার জন্য গোশালাকে আলাদা আলাদা ভাগ করা হয়েছে৷ যেসব গরুর বিশেষ সেবাযত্নের প্রয়োজন, তাদের জন্য পৃথক জায়গা'', বলেন জার্মান মহিলা ইরিনা ব্রুনিং.
এই বিরাট গোশালা চালানোর খরচ কেমন? কে জোগায় সেই খরচ? উত্তরে ইরিনা জানালেন, ‘‘পশু খাদ্য, ওষুধপত্রের খরচ আর গোশালার কর্মীদের বেতন ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে খরচ পড়ে মাসে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা৷ আমার এখানে কাজ করেন ৬০ জন কর্মী৷ বার্লিনে আমার ঘরবাড়ি, বিষয় সম্পত্তি কিছু আছে৷ সেখান থেকে ভাড়াবাবদ টাকা পাই৷ শুরুর দিকে আমার বাবা টাকা জোগাতেন৷ তখন তিনি কাজ করতেন নতুন দিল্লির জার্মান দূতাবাসে৷ এখন আমার বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন৷ এখন তিনি জার্মানির প্রবীণ নাগরিক৷ তবে স্থানীয় সরকার থেকে কোনো অর্থ সাহায্য পাইনা৷ তা সত্বেও কোনো রকমে ম্যানেজ করে নিই৷ কারণ, এই গোশালা আমি কিছুতেই বন্ধ করতে পারবো না৷ এতগুলো লোক এখানে কাজ করে৷ এখানকার মাইনে দিয়ে তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ হয়৷ সেটাও একটা মানবিক দিক৷'' তবে ক্ষোভ নিয়ে তিনি জানালেন, এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা মঞ্জুর করেনি৷ তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে পারেননি৷ নিলে বার্লিন থেকে তাঁর টাকা আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে৷ কৃষ্ণভূমিতে গো-সেবাতেই এখন তিনি নিবেদিত প্রাণ৷ হিন্দি ভাষাটাও তিনি রপ্ত করেছেন বেশ ভালো৷
সমুদ্রতটে গরুর পাল – এক অবিশ্বাস্য ছবি!
মস্কোতে আতঙ্কজনক মুখোশ পরা সকার ফ্যান থেকে করসিকা সমুদ্রতটে গরুর বিচরণ অবধি এসব ছবি গতসপ্তাহে সম্ভবত আপনার চোখে পড়েনি৷ ব্যতিক্রমী ছবিগুলো দেখে নিন৷
ছবি: Getty Images/P.Pochard-Casabianca
সিডনিতে ধোঁয়া আচার
সিডনিতে জাতীয় রাগবি লিগের এক ম্যাচের আগে এভাবে ধোঁয়া দিয়ে ধর্মীয় আচার পালন করেন এক আদিবাসী৷
ছবি: Getty Images/M. Kolbe
মস্কোয় স্পারটেক ভক্ত
খেলাধুলার আরেক ইভেন্টে রাশিয়ার সকার ক্লাব এফসি স্পারটাক মস্কোর এক ভক্তকে এভাবে মুখোশ পরে জয় উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷ রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সেই ম্যাচে তারেক গ্রজনিকে ৩-০ গোলে হারায় তাঁর দল৷
ছবি: picture alliance/AA/S. Karacan
ইউক্রেনের অর্থোডক্স নানরা
চার্চের উপরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর এক প্রস্তাবিত আইনের প্রতিবাদ জানাতে এভাবেই কিয়েভের সংসদের সামনে হাজির হন অর্থোডক্স নানরা৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
করসিকা সমুদ্রতটে গরুর পাল
ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ করসিকায় এভাবে গরুর কবলে পড়েন এক নারী৷ প্রতি বছরই নাকি সেখানে সমুদ্রতটে এভাবে গরুর পালকে হাজির হতে দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/P.Pochard-Casabianca
চীনের ক্লান্ত সঙ্গীতজ্ঞরা
বেইজিংয়ের গ্রেট হলে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মওরিসিও মাক্রিকে স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানের আগে চীনের সামরিক ব্যান্ডের সদস্যদের বিশ্রাম নিতে দেখা যাচ্ছে৷ চীনের সিল্ক রোড প্রকল্প সম্পর্কিত সম্মেলনে অংশ নিতে সেদেশে গিয়েছিলেন মাক্রি৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ক্যানাডায় ‘নমস্তে’
কানাডার অটোয়াতে পার্লামেন্ট হলের সামনের লনে কয়েক শত মানুষ এভাবে ফ্রি যোগব্যায়াম ক্লাসে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
লন্ডন আই-এর মধ্যে বসবাস
লন্ডনের বিখ্যাত চরকা ‘লন্ডন আই-’এর একটি ক্যাপসুলকে এভাবে রেইন ফরেস্ট থেকে অনুপ্রাণিত রুফটপ গার্ডেনের মতো করে সাজানো হয়েছে৷ ইংরেজিতে #স্কাইহাইস্টে প্রচারণার অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে৷