1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে বিতর্কে রোহিঙ্গা এবং জঙ্গি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৫ নভেম্বর ২০১৭

বিহারের বুদ্ধ গয়া মন্দির চত্বরে বোমা বিস্ফোরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এক রোহিঙ্গা কিশোর৷ ফলে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির যোগাযোগ আছে– এই অভিযোগে তাঁদের ফেরত পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার চলছে বিতর্ক৷

বিহারে বিস্ফোরণ
ছবি: REUTERS/Krishna Murari Kishan

মানবাধিকার কর্মীরা শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে৷ কিন্তু সম্প্রতি খোদ জাতীয় তদন্ত সংস্থাই কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করায় মানবাধিকার কর্মীদের অবস্থান নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে৷

বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর লাগাতার অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বিহারের বুদ্ধ গয়া মন্দির চত্বরেউপর্যুপরি বিস্ফোরণের জন্য ১৩টি বোমা রাখা হয়৷ পরে বিস্ফোরণে মহাবোধী মন্দির চত্বরের দুই জন শ্রমণ আহত হন৷ তিনটি অ-বিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়৷ অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম হায়দর আলি তদন্তকারীদের জেরায় স্বীকার করেছে যে, সে এবং এক কিশোরসহ আরও তিন জন রাঁচি থেকে এসেছিল ১৩টি বোমা নিয়ে৷ মুজিবুল্লা ও ইমতিয়াজ গয়ার বৌদ্ধ বিহারে নেমে যায়৷ তাদের বলা হয়েছিল, ৮০ ফুট উঁচু গৌতম বুদ্ধের মূর্তির নীচে বোমা রাখতে৷ 

‘আসলে সরকারের অবস্থান ক্রমশই একটা অযৌক্তিক জায়গায় চলে যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

মহাবোধী মন্দির চত্বরে ঢোকার আগে তারা পোশাক পালটে বৌদ্ধ ভিক্ষুর পোশাক পরে ভেতরে ঢোকে৷ প্রথম বোমাটি রাখে অনিমেষ লোচান মন্দিরে৷ দ্বিতীয় বোমাটি মহাবোধী বৃক্ষের নীচে, যেখানে গৌতম বুদ্ধ মোক্ষ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন৷ তৃতীয়টি একটি অ্যাম্বুলেন্সের তলায় এবং চতুর্থটি রাখা হয় চত্বরের আরেকটি ছোট মন্দিরে৷ বোমাগুলিতে টাইমার দেওয়া ছিল, ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে ফাটে৷ কারণ, ঐ সময়েই বৌদ্ধ ভক্ত এবং স্থানীয় পূণ্যার্থীদের ভীড় হয় সবথেকে বেশি৷

জাতীয় তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, গুজরাট ও মিয়ানমারে মুসলিম হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতেই তারা এসেছিল রাঁচি এবং রায়পুর থেকে৷ শক্তিশালী বোমা রাখার অপরাধে ভারতে ঐরোহিঙ্গা শরণার্থী কিশোরকে দোষী সাব্যস্ত করেন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড৷ থাইল্যান্ডের এক বৌদ্ধ শ্রমণ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর কাছে সাক্ষী দেন যে, ঐ যুবকদের তিনি বৌদ্ধ মন্দিরের ভেতরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন৷ দেখেছিলেন যুবকরা ভুলভাবে মন্দির পরিক্রমা করছিল৷ বৌদ্ধরা কখনোই এভাবে মন্দির পরিক্রমা করে না৷ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড ঐ কিশোরকে তিন বছর সংশোধনাগারে রাখার নির্দেশ দেন৷ বুদ্ধ গয়া এবং পাটনা সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডের এটি প্রথম রায়৷ অন্য অভিযুক্তদের বিচার পর্ব এখনও শেষ হয়নি৷

বুদ্ধ গয়া শুধু মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরই নয়, গোটা বিশ্বের বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র এক তীর্থস্থান৷ তদন্ত রিপোর্টে আরো বলা হয়, ঐ ঘটনার তিন মাস পরে পাটনার গান্ধী ময়দানে এক জনসভায় সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরমের ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও জড়িত ছিল রোহিঙ্গা যুবকদের ঐ দলটি৷ ঐ নির্বাচনি সভায় ভাষণ দেবার কথা ছিল বিজেপি জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এবং সে সময়ে  গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অন্যান্য বিজেপি নেতাদের৷ ঐ বিস্ফোরণে মারা যায় ৭ ব্যক্তি এবং জখম হয় ৮৯ জন৷

উল্লেখ্য গত কয়েক দশক ধরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে মুসলিমদের বিতাড়ন চলছে৷ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যেসব রোহিঙ্গা প্রতিবেশি দেশগুলিতে আশ্রয় নেয়, তাদের মধ্যে ৪০ হাজার আসে ভারতে৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর ক্রমাগত দমন-পীড়ন চালায়৷ তাঁদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়৷ তাঁদের অবাধ চলাফেরায় জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা৷ মৌলিক পরিষেবা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হয়৷ সংখ্যালঘু মুসলিম শুদ্ধিকরণের ফলস্বরূপ তাঁদের অনেকেই আজ রাষ্ট্রহীন৷ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷

এদিকে বিহার রাজ্যের বুদ্ধ গয়ার সিরিয়াল বিস্ফোরণের তদন্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে মানবতাবাদীদের প্রতিবাদ কি আর ধোপে টিকছে?ডয়চে ভেলে এই প্রশ্নটা রেখেছিল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্তর কাছে৷ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কয়েকজন যদি দেশবিরোধী হয় বা জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকে, তাহলে সব রোহিঙ্গাকে কি একগোত্রে ফেলা যায় ? যায় না৷ এক মঞ্চে একভাবে দাঁড় করানো অযৌক্তিক৷ এটার অর্থ হচ্ছে, আসল বিষয়টাকেই গুলিয়ে ফেলা৷ যেমন, হিন্দুদের মধ্যেও কিছু উগ্রপন্থি শক্তি আছে, তার মানে কি সব রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের সবাই উগ্রপন্থি? এইভাবে কোনো দেশ যদি আমাদের দেখে, তাহলে আমরা কি সেটা মেনে নিতে পারবো? আসলে সরকারের অবস্থান ক্রমশই একটা অযৌক্তিক জায়গায় চলে যাচ্ছে৷ বুদ্ধ গয়া মন্দিরের বিস্ফোরণকাণ্ডে ধৃত সবাই তো আর দোষী সাব্যস্ত হয়নি৷ কেউ কেউ ছাড়াও পেয়ে যেতে পারেন৷ এমন ঘটনাও তো আছে৷ যেমন গুজরাটের অক্ষরধাম মন্দিরে হামলা৷ এমন যদি হয়, তাহলে কি সরকার  ক্ষমা চাইবেন?''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ