থাকথিত ‘গরু রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলো’ কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে না – শুক্রবার কেন্দ্রীয় ও ছয়টি রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ পরবর্তী শুনানি ৩রা মে৷
বিজ্ঞাপন
রাজস্থান, ঝারখন্ড, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের সরকারকে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে৷
‘গো-রক্ষক' নামে পরিচিত গরু রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলোর হাতে কয়েকজন মুসলমান নিহত হওয়ার পর কংগ্রেস নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালার দায়ের করা পিটিশনের প্রেক্ষিতে এই নোটিশ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে ভারতের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া'৷
পিটিশনে পুনাওয়ালা বলেন, এই গোষ্ঠীগুলো ‘সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে'৷ ফলে ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া' বা এসইএমই'র মতো গো-রক্ষকদেরও নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি৷ উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে গঠিত এসইএমইকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
পুনাওয়ালা পিটিশনে আরও বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্য যে, গরু রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলো গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা বা পুরস্কার পেয়ে থাকে এবং এভাবে তারা বৈধতা পেয়ে আসছে৷''
সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ জারির বিষয়টি টুইটারে শেয়ার করেছেন পুনাওয়ালা৷
পিটিশনে পুনাওয়ালা গরু জবাই কিংবা চোরাচালান সংক্রান্ত ১০টি সহিংস ঘটনার উল্লেখ করেন৷ এর মধ্যে একটি গত শনিবার রাজস্থানে গরু পরিবহনের সময় চালানো হামলা৷ ঐ ঘটনায় গুরুতর আহত ৫৫ বছরের মুসলমান কৃষক পেহলু খান সোমবার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন৷
উল্লেখ্য, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরু জবাই করা নিষিদ্ধ৷ এছাড়া গরু রক্ষার কথা বলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহারায় বসেছে বেশ কিছু মানুষ, যাদের সংখ্যা ২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর অনেক বেড়েছে৷
ভারতের সিদ্ধান্তে সমস্যায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মানুষ যেন গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয় সেজন্য ভারত থেকে বাংলাদেশ গরু পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
সীমান্তরক্ষীদের নতুন দায়িত্ব
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
গরু পবিত্র
হিন্দুদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী৷ তাই ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চায়৷ রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ আরএসএস এর পশ্চিমবঙ্গের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘গরু জবাই কিংবা চোরাই পথে চালান, আর হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা বা হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা একই কথা৷’’
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
চার যুগের ইতিহাস
ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুই এতদিন বাংলাদেশের মানুষের মাংসের প্রধান উৎস ছিল৷ গত চার দশক ধরে সেটা হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য জড়িয়ে আছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
দাম বেড়ে গেছে
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গরুর মাংস রপ্তানিকারক বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব গত জুলাই মাসে রয়টার্সকে জানান, ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁর কোম্পানির মাংস রপ্তানি প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Asia News Network/Jofelle P. Tesorio
চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৪,০০০
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, জুন পর্যন্ত চামড়া শিল্পে কর্মরত প্রায় চার হাজার কর্মীর চাকরি গেছে৷ আর ১৯০টি ট্যানারির মধ্যে ৩০টি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ভারতীয় গরুর মাংস ভালো
বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব বলেন, তিনি এখন নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে মাংস আমদানির চিন্তা করছেন৷ কিন্তু ভারতীয় মাংস ও চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি৷ উল্লেখ্য, ভারত গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভারতের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন মাংসের জন্য বাংলাদেশকে নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে কেননা ভারত তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
গরুর মাংস খাওয়ার বা গরু চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে ভারতে হিন্দুদের হামলায় গত দু'বছরে অন্তত দশজন মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০১৫ সালে এক মুসলমান গরু জবাই করেছেন এই সন্দেহে স্থানীয় হিন্দুদের একটি উগ্র অংশ তাঁকে মেরে ফেলে৷ যদিও পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, সেই মুসলমান বাড়িতে ছিল খাসির মাংস৷