করোনা বাড়ছে। তা সত্ত্বেও ভারতে বিধিনিষেধ আরো তুলে নেয়া হলো। এক সপ্তাহের মধ্যে মেট্রো চলবে।
বিজ্ঞাপন
আনলক ৪। মোটামুটি সিনেমা হল, সুইমিং পুল, অডিটোরিয়াম ছাড়া প্রায় সবই খুলে যাচ্ছে। মেট্রো রেল চলতে শুরু করবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে। রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সভা, সমাবেশ করা যাবে। তবে একশ জনের বেশি লোক থাকবে না। মাস্ক পরতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে নবম থেকে দ্বাদশ বা ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভের ছাত্রছাত্রীরা পড়া বুঝতে স্কুলে যেতে পারবে। তবে তাদের বাবা-মা-র লিখিত অনুমতি লাগবে। স্কুলও ৫০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষিকাকে প্রতিদিন ডাকতে পারবে। গবেষণা যাঁরা করছেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারবেন। বোঝা যাচ্ছে, আনলক ৫-এর সময় স্কুল, কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমান চলাচল এখনই শুরু হচ্ছে না। শুধু বিদেশে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে বিমান চলবে।
মেট্রো কীভাবে চলবে, তাতে কী কী সতর্কতা নিতে হবে, সে সব বিষয় পরে জানানো হবে। বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে মেট্রো চালু হবে। সূত্র জানাচ্ছে, মাঝে মাঝে কিছু আসন খালি রাখা হবে, যাতে সামাজিক দূরত্ব মানা যায়।
করোনা সংকট মোকাবিলায় অ্যাপ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে নজরে রাখতে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অ্যাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/A. Widak
জার্মানি
জার্মানির জনসংখ্যার মোট ২০ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছে জার্মানির করোনা বিষয়ক অ্যাপ ‘করোনা ওয়ার্ন’৷ এক কোটি ৬২ লাখবার ডাউনলোড হওয়া এই অ্যাপে রয়েছে নানা প্রযুক্তগত সমস্যা, জানাচ্ছে জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ অ্যাপ তার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতায় তখনই পৌঁছতে পারবে যখন দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ তা ব্যবহার করবে, জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়৷
ছবি: picture-alliance/H. Dittrich
ফ্রান্স
ফ্রান্সের ‘স্টপ কোভিড’ অ্যাপের মূল কাজ হচ্ছে করোনা সংক্রমিত মানুষ কোথায় রয়েছেন এবং কার সংস্পর্শে এসেছেন, তার খোঁজ রাখা৷ এই অ্যাপটি মে মাসে বাজারে আসে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর৷ জুন মাস পর্যন্ত ২০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Samson
যুক্তরাজ্য
করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত যুক্তরাজ্যে একই ধারার অ্যাপ চালু করবার আলোচনা চলছিল মার্চ মাস থেকেই৷ ‘এনএইচএস কোভিড ১৯’ অ্যাপটি এখনও বাজারে আসেনি, কিন্তু জনগণের পক্ষে এই অ্যাপ চালু করা নিয়ে চাপ রয়েছে কর্তৃপক্ষের ওপর৷ তার কারণ, মাথাপিছু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Department for Health and Social Care/NHSX
অস্ট্রেলিয়া
‘কোভিড সেইফ’ অ্যাপটির কাজও হচ্ছে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ বা সংক্রমণের পথ সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সাবধান করা৷ এই অ্যাপে একটানা ২১ দিনের তথ্য রেকর্ড করা থাকে, যা ব্যবহারকারীকে জানাবে এই সময়ের মধ্যে কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কি না৷ ২১ দিন পর সেই তথ্য আপনা থেকেই মুছে দেয় অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
সিঙ্গাপুর
একটানা ২৫ দিন ধরে সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য রাখে সিঙ্গাপুরের কোভিড বিষয়ক অ্যাপ ‘ট্রেস টুগেদার’৷ এই অ্যাপে রাখা তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকে এবং অ্যাপের ওয়েবসাইট বলছে, মহামারী শেষ হলে এই অ্যাপও মুছে দেওয়া হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Lai
ভারত
ভারতের করোনা-অ্যাপ ‘আরোগ্য সেতু’ এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড হওয়া করোনা-অ্যাপ৷ এর কারণ ভারতের বিশাল জনসংখ্যাও৷ পাশাপাশি, এই অ্যাপ ফোনে না থাকলে এক শহর থেকে আরেক শহরে এবং এক দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এই অ্যাপ এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছে, জানাচ্ছে প্রযুক্তসংস্থা সেনসর টাওয়ার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
‘এক্সপোজার নোটিফিকেশন এপিআই’, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এক এক রাজ্যের এক এক নিয়মে৷ দেশজুড়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ না থাকায় রাজ্যগুলি নিজেদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী এই অ্যাপ দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Whitehurst
চীন
করোনা সংক্রমণের উৎসকেন্দ্র চীনে রয়েছে একাধিক করোনা-অ্যাপ৷ পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে জোর দিয়েছে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখায়, সেখানে চীনের একটি অ্যাপে সংরক্ষিত থাকছে ব্যবহারকারীর চলাফেরার সম্পূর্ণ হিসাব৷ জাপান টাইমসকে এবিষয়ে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চুই শিয়াওহুই বলেন, ‘‘চীনা ও পশ্চিমা সংস্কৃতি আলাদা৷ এখানে মানুষ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে দিতে পিছপা হয়না৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
8 ছবি1 | 8
রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু হবে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে ছোট আকারে তা করতে হবে। মাস কয়েকের মধ্যে বিহারে ভোট। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি চালু করার কথা ভাবা হচ্ছিল। আনলক ৪ সেই সুযোগ করে দিল। তাছাড়া ধর্মীয় উৎসব নিয়েও আদালতে ছুটছিলেন অনেকে। বাকি সব যখন স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে, তখন সমাবেশ আর কতদিন বন্ধ করে রাখা হবে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, রাজ্যগুলি যখন তখন লকডাউন ঘোষণা করতে পারবে না। লকডাউন ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আর রাজ্যের ভিতরে ও এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া যাবে না। ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি সপ্তাহে এক বা দুই দিন লকডাউন করতে চায় তাহলে কেন্দ্রের অনুমতি নিয়েই করতে পারবে।
ভারতে অন্তত দুই কোটি ১০ লাখ শিখের বাস। দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম এটি। শিখ ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হলো সেবা। শিখ মন্দিরকে বলা হয় গুরুদুয়ারা। কোটি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয় গুরুদুয়ারাগুলোতে।
ছবি: DW/S. Chabba
করোনাকালে বিধিনিষেধ
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় মার্চ মাস থেকে গুরুদুয়ারাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল।তবে এ কারণে কোনো ভক্তের সমাগম না থাকলেও নিয়মিত প্রার্থনা আর সেবাদান অব্যাহত রেখেছিলেন গুরুদুয়ারার কর্মীরা। জুন মাসে ভারতে সব উপাসনালয় খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে মন্দিরে ঢুকতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাত পরিষ্কার এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ছবি: DW/S. Chabba
শিখ সম্প্রদায়ের রান্নাঘর
শিখ দর্শন অনুযায়ী, বিশ্বাসীরা কখনোই খালি হাতে বাড়ি ফিরবে না। গুরুদুয়ারাতে গেলে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে: শিখ গুরুর শিক্ষা, প্রসাদ (ময়দার পিঠা) এবং তিন বেলার খাবার।
ছবি: DW/S. Chabba
প্রতিদিন লাখো মানুষের খাবার
প্রতিদিন ভোর তিনটায় রান্নাঘর খোলা হয়। এরপর এক লাখ মানুষের খাবার তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়। নারী-পুরুষ মিলে ডাল, রুটি এবং ভাত রান্না করেন। দিল্লি শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং শিখ সম্প্রদায়ের ভক্তদের দানে চলে এই বিশাল আয়োজন।
ছবি: DW/S. Chabba
২০টি স্থানে খাবার প্রদান
খাবার ভর্তি ট্রাক দিল্লি পেরিয়ে নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে পৌঁছে যায়। কোন এলাকায় বেশি ক্ষুধার্ত মানুষ থাকতে পারে সেই ভিত্তিতে স্থান চিহ্নিত করে সেখানে গিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় এনজিওগুলোর কাছ থেকেও লাখো মানুষকে খাবার দেয়ার অনুরোধ আসে তাদের কাছে।
ছবি: DW/S. Chabba
দুস্থ মানুষের জন্য খাবার
শিখদের জন্য সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ হলো দুস্থদের সাহায্য করা। ট্রাকে খাবার ভরার সময় গুরুদুয়ারার বাইরে দুস্থদের লম্বা লাইন দেখা যায়। খাবারের জন্য অপেক্ষা তাদের। তরুণ, তরুণী, পথশিশু, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ সবাই আসেন খাবারের জন্য। করোনার কারণে কাজ হারিয়েছেন এমন অনেক মানুষও আসেন।
ছবি: DW/S. Chabba
সুন্দর-সংগঠিত একটি প্রক্রিয়া
দু’টো লাইন করা হয়-একটি পুরুষদের জন্য, অন্যটি নারী, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের জন্য। খাবার পরিবেশনের প্রক্রিয়াটি বেশ গোছানো। কিন্তু ১৩০ কোটি মানুষের দেশে সামাজিক দূরত্ব মানা খুবই কঠিন ব্যাপার।
ছবি: DW/S. Chabba
প্রখর তাপে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে
এমন অনেকেই আসেন যাদের দিনে এই একবারই খাওয়া হয় এবং সেটা এখানে। এমনকি অনেকেই পরিবার-পরিজনের মধ্যে যারা এখানে আসতে সক্ষম নন তাদের খাবার নেয়ার জন্যও প্যাকেট নিয়ে আসেন। গুরুদুয়ারার ট্রাক এমন সব জায়গায় পৌঁছে যায় যেখানে সরকারি এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো পৌঁছতে পারে না।
ছবি: DW/S. Chabba
8 ছবি1 | 8
এই সিদ্ধান্ত এমন সময় নেয়া হলো, যখন ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৭৯ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এটা একটা রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরীক্ষা আগের থেকে বেড়েছে, এটা ভালো লক্ষণ। আরো বাড়াতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের খবর করা প্রবীণ সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এখন না খুলে আর কোনো উপায় নেই। কতদিন আর সবকিছু বন্ধ করে বসে থাকা যায়। আর ভ্যাকসিন এলেও তো তা সঙ্গে সঙ্গে লোকে হাতে পাবেন না। সকলের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছনোটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।'' অবন্তিকা মনে করেন, ''যখন লকডাউন করা হয়েছিল, তখন সেটা উপযুক্ত সময় ছিল না। পরে করোনা যখন বেড়েছে তখন লকডাউন করলে ভালো হতো। কিন্তু লকডাউনের ফলে অর্থনীতির কী হাল হয়েছে, সেটাও সকলে দেখতে পাচ্ছেন।''
প্রধানমন্ত্রী মোদী রোববার বলেছেন. সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা বলা যতটা সহজ, করা কঠিন। বাসে, অটোতে, বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন শুধু নয়, অনেক সময়ই প্রায় অসম্ভব। ঘটনা হলো, ভারতে করোনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রায় তুলে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। কিন্তু সরকারের একটাই স্বান্ত্বনা, সুস্থ হয়ে ওঠার হারও বাড়ছে।