ভারত রাশিয়ার তেল কিনলেও তা নিয়ে আপত্তি নেই জার্মানির। জানালেন, ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকা-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন রাশিয়া থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আমদানি কমানোর ব্যবস্থা করছে, তখন রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে ভারত। ভারতের এই পদক্ষেপকে কীভাবে দেখছে জার্মানি? কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার জে লিন্ডার জানিয়েছেন, এ বিষয়ে জার্মানির কোনো বক্তব্য নেই। এই সিদ্ধান্ত একান্তই ভারতের ব্যক্তিগত। জার্মানি সেখানে নাক গলাবে না।
লিন্ডারের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে ক্রেমলিনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভারত যদি যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বিষয়।
লিন্ডার জানিয়েছেন, গ্যাস, তেল এবং কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে জার্মানি বরাবরই রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। জার্মানি ভাবেনি, মস্কো প্রতিবেশী দেশে এভাবে যুদ্ধ শুরু করে দেবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জার্মানি চেষ্টা করছে, এবছরের শেষের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল নেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার। তবে কাজটি করতে সময় লাগবে। ইতিমধ্যেই আমদানি অনেক গুণ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিভিন্ন দেশে খাবারের দাম বেড়ে গেছে৷ ফলে গরিবরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও বিপদে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে কিছু দেশ৷
ছবি: REUTERS
অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়া, ইউক্রেন
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৫ শতাংশ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন৷ সূর্যমুখী তেল রপ্তানিতেও শীর্ষ দেশ ইউক্রেন৷ এছাড়া বার্লি ও ভুট্টা রপ্তানিতে বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইউক্রেন৷ এদিকে রাশিয়ার গ্যাস, তেল ও সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল ইউরোপ৷
ছবি: Olena Mykhaylova/Zoonar/picture alliance
ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডাব্লিউএফপির মোট খাদ্য সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে৷ যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে শস্য চাষে প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়’ নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি৷ যুদ্ধ শুরুর আগে ৩৮টি দেশের প্রায় চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় ছিল বলে জানিয়েছিল ডাব্লিউএফপি৷
ছবি: Valentin Sprinchak/dpa/TASS/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে ইইউ সদস্য দেশগুলোর কৃষকদের চার হাজার ৭২৫ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ইইউর কৃষকরা রাশিয়ার সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল৷ যুদ্ধের আগেই সারের দাম বেড়ে গিয়েছিল৷ এছাড়া শূকর শিল্পসহ কৃষি ও মৎস খাতেও সহায়তার প্রস্তাব করেছে ইইউ৷ আরো বেশি জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ফসল চাষেরও অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জার্মানি
৯০ দিনের জন্য বেশ কিছু ভর্তুকি ও ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে৷ যেমন পেট্রোলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ৩০ সেন্ট এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ১৪ সেন্ট কম গুনতে হবে৷ সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে মাসে মাত্র নয় ইউরো মূল্যে বাস-ট্রাম ব্যবহার করা যাবে৷ এছাড়া আয়করদাতারা এককালীন ৩০০ ইউরো পর্যন্ত হাতে পাবেন৷ সন্তানপ্রতি ১০০ ইউরো বাড়তি ভাতাও দেওয়া হবে৷ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্যও ভর্তুকির ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷
ছবি: Sabine Kinkartz/DW
ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের বাড়তি মূল্যের ক্ষতি পোষাতে গরিবদের বিশেষ চেক দেয়ার কথা ভাবছেন তিনি৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
মিশর
মিশরে কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি মূল্যে রুটি বিক্রি হচ্ছে৷ ফুড কার্ড থাকা ব্যক্তিরা এই দামে রুটি কিনতে পারেন৷ মোট জনসংখ্যার (প্রায় দশ কোটি ২০ লাখ) প্রায় ৬০ ভাগ এই সুযোগ নিয়ে থাকে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভর্তুকি ছাড়া যে রুটি বিক্রি হয় তার দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এছাড়া মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হারও বাড়িয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture alliance/dpa
বাংলাদেশ
গত রোববার থেকে এক কোটি পরিবারের জন্য কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে৷ একটি পরিবারকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুইবার করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে৷ উপরের ছবিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে তোলা৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
কিউবা
রুটি থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - অনেক কিছু কম দামে কেনার জন্যই কিউবানদের লাইনে দাঁড়াতে হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এবার কিউবানদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে জ্বালানি তেল কিনতে দেখা গেছে৷ উপরের ছবিটি সোমবার তোলা৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন পোস্টের সোমবারের এক প্রতিবেদন বলছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় ফুড ব্যাংকগুলোতে মার্কিনিদের ভিড় বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটে সহায়তা হিসেবে ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে সেই পরিমাণ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷
ছবি: Tayfun Coskun/AA/picture alliance
9 ছবি1 | 9
রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল নেওয়ার প্রশ্নে লিন্ডার বক্তব্য, 'প্রতিটি দেশের নিজস্ব অতীত আছে। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভরশীল। ফলে এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।'
ইউক্রেন সংকটে ভারতের অবস্থান নিয়ে বিশ্ব কূটনীতিতে নানা আলোচনা চলছে। অ্যামেরিকা ভারতের উপর চাপ তৈরি করছে। বস্তুত, যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার রাস্তা তৈরির বিষয়ে ভারত আগ্রহী হলেও জাতিসংঘে এখনো পর্যন্ত প্রতিটি ভোটেই মোদীর সরকার ভোটদানে বিরত থেকেছে। শুধু তা-ই নয়, সোমবারও এক অনুষ্ঠানে দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ভারত রাশিয়ার কাছে থেকে কম দামে তেল কিনবে। কারণ, সবার আগে দেশের স্বার্থ।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থাগুলি ব্যারেল প্রতি ৩৫ ডলারে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। আগামী তিন-চার মাস রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশের তেল এবং খনিজসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রীও।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাশিয়ার প্রসেডিন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের একাধিকবার কথা হয়েছে। যুদ্ধ থামাতে ভারত মধ্যস্থতা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন মোদী। জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য, এবিষয়ে পুটিনকে বোঝানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। ভারত যদি তা করতে পারে, জার্মানি তাকে স্বাগত জানাবে।