নারী স্বাক্ষরতা অভিযানে ঠাকুরমা-স্কুল এক আলোকবর্তিকা৷ ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের ঠাকুরমা-স্কুল বর্ষিয়ান মহিলাদের জীবনে প্রথমবার লেখাপড়া শেখানোর উদ্যোগ এক অনন্য নজীর, সন্দেহ নেই৷ তবে এই উদ্যোগে বাধা বিপত্তিও কিছু কম নয়৷
বিজ্ঞাপন
মা বা ঠাকুরমার মতো প্রবীণ মহিলাদের কীভাবে লেখাপড়া শেখান? এই উদ্যোগ হাতে নেবার শুরু থেকেই এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয়েছে বছর তিরিশের শিক্ষিকা শীতল মোরেকে৷ গত বছর যখন তিনি চালু করেন এই স্কুল৷ আর সেই তখন থেকেই এই প্রশ্ন৷
গ্রামের নাম ফানগানে৷ ছবির মতো গ্রাম৷ মুম্বই থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে৷ বড় বড় গাছের ছায়ায় চটের আচ্ছাদনের নীচে মাটিতে পা মুড়ে বসে আছেন প্রবীণ মহিলারা শিক্ষিকার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে৷ পরনে সবারই একই রঙের শাড়ি, গোলাপি৷ এটাই ঠাকুমা-স্কুলের ইউনিফর্ম৷ বয়স সবারই পঞ্চাশের উপরে৷ কেউ কেউ আশির কোঠায়৷ বয়সের কারণে এঁদের সকলেরই স্মৃতিশক্তি দুর্বল৷ তাই একই কথা বলতে হয় বারংবার৷ কেউ কেউ আবার কানে কম শোনেন৷ তাই খুব জোরে জোরে বলতে হয়, পড়াতে হয়৷ ছাত্রীরা সবাই মারাঠি ভাষায় অক্ষর লিখতে পড়তে শিখছেন৷ সংখ্যা গুণতে শিখছেন৷ চোখের জোর কমে আসায় অক্ষরগুলিকে অতসী কাঁচের নীচে এনে পড়তে হয়৷ ক্লাসের আদব-কায়দার ধার ধারে না তাঁরা৷ মুখে বয়সের বলিরেখা৷ নাকে বড় বড় নোলক৷ শীতলের দৃষ্টি আকর্ষণে সবাই কথা বলতে চায় একসঙ্গে৷ শিক্ষিকা শীতলকে তাঁদের কথা বুঝতে এবং তাঁদের শান্ত করতে হিমসিম খেতে হয়৷ কেউ কেউ বাড়িতে বিয়ে আসছে, তাই নিয়ে হাসি মশকরা শুরু করে৷ অন্যরা হেসে ওঠে সমস্বরে৷
জীবনের জন্য শিক্ষা
পুরো ইউরোপে নতুন ক্লাসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা৷ শুরু হয়েছে নতুন বছর৷ লেবাননে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের কি অবস্থা? দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে কেউ স্কুলে পড়ালেখা করলেও, অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে বিপর্যয়৷
ছবি: Amy Leang
থেরাপি
বৈরুতের এই স্কুলে যে শিক্ষার্থীদের দেখছেন তারা সিরিয়ার শরণার্থী৷ স্কুলে গান গাইছে তারা৷ এটা একটা থেরাপি যাতে যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এবং আতঙ্ক কাটাতে পারে তারা৷ এছাড়া এখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তারা৷
ছবি: Amy Leang
দ্বিতীয় জীবন
শিশুদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যেন তারা লেবাননের সরকারি স্কুলে পড়তে পারে৷ এদের মধ্যে একজন সুজানে৷ বড় হয়ে শিল্পী হতে চায় সে৷ স্কুলে পড়ালেখা ছাড়া এই স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাই শিক্ষাগ্রহণকে সুজানে ‘দ্বিতীয় জীবন’ বলে মনে করছে৷
ছবি: Amy Leang
পরিবারের সহায়তা নেই
বৈরুতের ঐ স্কুলটিতে অঙ্কের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে ডায়নাকে৷ ডায়নার মতো সিরিয়ার এই শরণার্থী শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবারের কোনো সহায়তা পায় না তারা, এমনকি বাড়িতে পড়ানোর মতো কেউ নেই৷ স্কুলই পড়ার একমাত্র জায়গা৷
ছবি: Amy Leang
চিন্তার শক্তি
শিশুরা এই স্কুলে একবেলা খেতে পায়৷ যে বেসরকারি সংস্থাটি স্কুলটি পরিচালনা করছে, তার এক কর্মকর্তা জানালেন, একটি গির্জার সহায়তায় এই শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই শিশুরা ঐ এলাকার আশপাশেই থাকে এবং সেখানকার বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার৷ ফলে পরিবারের উপার্জনের প্রায় পুরোটাই বাড়ি ভাড়ায় চলে যায়৷ খাবারের জন্য অর্থ থাকে না৷
ছবি: Amy Leang
বাড়ি থেকে বাড়ি
এই শরণার্থী পরিবারগুলো এমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, যেখানে হয়ত সিঁড়ির নীচে বা ছাদের চিলেকোঠায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তারা৷
ছবি: Amy Leang
সৃজনশীলতা
১২ বছর বয়সি আশতাকে সৃজনশীল লেখা লিখতে বলা হয়েছে৷ তাই হয়ত জানলার বাইরে তাকিয়ে সে চিন্তা করছে কি লেখা যায়৷ এর মাধ্যমে নিজের মানসিক চাহিদাগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে তারা৷
ছবি: Amy Leang
হারিয়ে যাওয়ার পথে যে প্রজন্ম
নিজেদের ভাড়া বাড়িতে শিশুদের অঙ্ক বাড়ির কাজ নিয়ে বসেছেন বাবা-মা৷ সিরিয়ার কৃষক বাবা জানালেন, ‘‘আমি তাদের এখানে নিয়ে এসেছি৷ কারণ আমার ধারণা তারা সিরিয়ায় থাকলে অশিক্ষিতই থেকে যেত৷ এটা একটা বড় ধরনের ভুল৷ এর সমাধান করতে না পারলে একটা পুরো প্রজন্ম হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: Amy Leang
সময়ের অপচয়
লেবাননে থাকা যেসব শরণার্থী শিশুরা স্কুলে যায় না, তাদের পুরো সময়টা কাটে টিভি দেখে বা খেলাধুলা করে৷ এনজিওটি জানালো বর্তমানে ৪ লাখ শরণার্থী শিশু রয়েছে৷ কিন্তু মাত্র ৯০ হাজার স্কুলে যায়৷
ছবি: Amy Leang
পথেই জীবন
নারিমান, বয়স ৭৷ এত অল্প বয়সেই সে জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে৷ রাস্তায় রাস্তায় টিস্যু পেপার বিক্রি করে সে৷ তার চাচা তাকে এগুলো বিক্রি করতে দিয়েছে, তবে শর্ত হলো সন্ধ্যা ৬ টার আগে চাচার হাতে ১২,০০০ লেবানিজ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৮ ডলার তুলে দিতে হবে৷ তাই দিনের প্রায় পুরোটা সময় রাস্তাতেই কাটে তার৷
ছবি: Amy Leang
লক্ষ্যভ্রষ্ট
লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কাছে আরো একটি স্কুল খুলেছে বেসরকারি সংস্থা সাওয়া৷ সংস্থার এক কর্মী বললেন, ‘‘এই শিশুগুলো এমন আতঙ্ক ও ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, এখন কোনো কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না৷ পরোয়া করে না তারা৷
ছবি: Amy Leang
10 ছবি1 | 10
আর টিপসই নয়
ক্লাস হয় ঘণ্টা দুয়েক৷ এই দু'ঘণ্টা ঘর সংসারের কাজ থেকে মুক্তি৷ এরই মধ্যে অনেকটাই স্বাক্ষর হয়েছে ওঁরা৷ নিজের নাম সই করতে পারে৷ সংখ্যা গুণতে পারে৷ একটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদারভাব ফুটে উঠেছে চেখেমুখে৷ আগে আমি ব্যাংকের কাগজপত্রে টিপসই দিতাম৷ এখন নিজের নাম সই করি৷ দারুণ অনুভূতি৷ এবার ব্যাংকে গেলে ব্যাংকের অফিসাররা আমায় দেখে অবাক হয়ে যাবেন, বলেন বছর পঞ্চান্নের পড়ুয়া যশোদা কেদার৷ এরমত আরও অনেক মহিলা আছেন যাঁরা নিজের বয়স কত, জানে না৷ কারণ তাদের জন্মকলে বার্থ সার্টিফিকেটের চল ছিল না৷ এদের শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্র্যে৷ যশোদার মনে পড়ে এমন কতদিন গেছে ঘরে মাঠে হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও পেটে একটা দানা পর্যন্ত পড়েনি৷ তার ওপর মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত একেবারে নাবালিকা বয়সে৷ লেখাপড়ার সুযোগই ছিল না৷
চ্যালেঞ্জ আরও আছে সামনে
মোতিলাল দালাল দাতব্য ট্রাস্টের অধীনে এই ঠাকুরমা-স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা দিলীপ দালাল মনে করেন, ভারতে বয়স্ক নিরক্ষরতার হার বিশবে সর্বাধিক৷ প্রায় ২৯ কোটির মতো৷ জাতিসংঘের রিপোর্ট এবং পরিসংখ্যানও বলছে সে কথা৷ যদিও সরকার নিরক্ষরতা দূরিকরণে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে৷ শিক্ষাকে করেছে মৌলিক অধিকার৷ তবে সমস্যা হলো নারী সাক্ষরতার অভাব এবং স্কুলশিক্ষার সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতা৷ গ্রামে মেয়েদের স্কুল না থাকার মতো৷ ফানগানে গ্রামের পাঁচ'শ অধিবাসী চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল৷ চাষ করে ধান, দানাশস্য শাক-শবজি ইত্যাদি৷ নির্মাণকাজে মেয়েদের কর্মসংস্থান হাতে গোনা৷ মেয়েদের কাজ ঘরসংসার করা, মাঠে কাজ করা এবং বাচ্চা সামলানো৷ আর পুরুষ সদস্যরা কাজের ধান্দায় ছোটে শহরের দিকে৷ কেউ কেই মুম্বইয়ে৷
শিক্ষালাভের সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য
সীমার খুড়তোতো ভাই সন্তোষ কেদার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পুনে শহরে যায়৷ কয়েক বছর থাকতে হয় ফানগানের বাড়ির বাইরে বিভিন্ন শহরে৷ পরিবারের যা আয় তা অনেকটাই বেরিয়ে যায় তাঁর কলেজের মাইনে দিতে৷ তাঁদের গ্রামে একটিমাত্র স্কুল৷ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত৷ তারপর পড়তে গেলে যেতে হবে ১২ কিলোমিটার দূরে কাছের শহরে৷ গ্রামে বাস আসে না৷ ভাড়া করা জিপে সাত সকালে বেরিয়ে পড়তে হয় বাস ধরতে৷ ফলে গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়ায় এখানেই ইতি৷ বাড়ির অভিভাবকরা মেয়েদের ছাড়তে ভয় পায় নিরাপত্তার কারণে৷ মেয়ে বলে কথা বলেন যশোদা৷
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷
ছবি: KUS-Projekt
10 ছবি1 | 10
আমার নিজের মেয়ে সীমা চৌধুরি৷ বয়স ২৮ বছর৷ ক্লাস ফোর পর্যন্ত পডার পর মা কাকিমাদের গেরস্থালি কাজে হাত লাগায়৷ তারপর আর কী? বিয়ে৷ সীমার আক্ষেপ ছেলেদের মতো মেয়েরা সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না কেন? কেন তাঁদের মেধা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত? কেন নাবালিকা বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন অভিভাবকরা? এ জন্য অবশ্য দায়ী পরিবারের রক্ষণশীলতা এবং সামাজিক রীতিনীতি৷ ছলছল চোখে সীমা বলন, বিয়ের পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় স্বামী তাঁকে তাড়িয়ে দেয়৷ তাঁর চাই পুত্রসন্তান৷ মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়৷ ভয়ে পালিয়ে চলে আসি বাপের বাড়িতে এই ফানগানে গ্রামে৷ মেয়ে গায়ত্রীকে মানুষ করে তালাই আমার ধ্যানজ্ঞান৷ সে এখন পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে৷ আমি পড়াশুনার সুযোগ পাইনি, তাই মেয়েকে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াতে চাই যাতে নিজোয়ে দাঁড়াতে পারে৷ গ্রের স্কুলের গণ্ডি পার হলে সে চলে যাবে পুনে শহরে বোনের বাড়িতে৷ সেখানে ভালো ভালো স্কুল আছে, কলেজ আছে৷
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
অগাধ আত্মবিশ্বাস
গত বছর মার্চে ফানগানে গ্রামে ঠাকুরমা-স্কুল খোলার পর নারী সাক্ষরতা অভিযানে একটা সচেতনা জেগে উঠেছে৷ যশোদার স্বামী প্রভাকরও খুশি এই অভিযানে৷ কারণ জীবনের বেলাশেষে যশোদা স্বাক্ষর হয়ে উঠেছে৷ ঠাকুরমা-স্কুল আমাদের গ্রামে নারী শিক্ষার মশাল বাহক৷ জ্বালিয়েছে প্রগতির আলো, আত্মসম্মানের আলো৷ যশোদা এখন ব্যাংকের কাগজপত্র, ক্যুরিয়ারে আসা চিঠিপত্র নিজেই সই করে নিতে পারেন৷ বলা বাহুল্য, এ সবই ঠাকুরমা-স্কুলের অবদান৷ নাতনি গায়ত্রী ঠাকুমাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে৷ স্লেটের লেখা সংশোধন করে দেয়৷ খুশিতে ঝলমল যশোদার মুখ৷ বলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি স্কুলে যাব৷ লিখতে পড়তে পারব৷ নাতনি আমার হোমওয়ার্কে সাহায্য করবে৷ এ যেন আকাশের চাঁদ পাওয়া৷''