1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে শিক্ষাঙ্গনে বিদ্বেষের বিষ?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২১ নভেম্বর ২০১৯

জাতপাত ও ধর্মীয় বিভাজনের গোঁড়ামি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত৷ সামাজিক বিদ্বেষ হিংসাত্মক ঘটনা হয়ে প্রায়ই উঠে আসছে খবরে৷ বিভেদ, বিদ্বেষ দূরীকরণে প্রয়োজন শিক্ষা৷ কিন্তু ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে রয়েছে শিক্ষাঙ্গনেও৷

২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার প্রতিবাদছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran

ভারতের ইতিহাসে দলিত পরিবারে জন্ম হওয়ায় অপরিসীম সামাজিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন ভীমরাও আম্বেদকর৷ পরে তিনিই ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করেছেন৷ সাত দশক আগে সামাজিক বিদ্বেষহীন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, যা সফল হয়নি এখনো৷

শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চিত্র

গত তিন-‌চার বছরে শুধুমাত্র দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের দিকে তাকালে চোখে পড়বে কয়েকটি ঘটনা৷ অকালে ঝরে যাওয়া তাজা প্রাণগুলোর ‘‌অপরাধ'‌ তারা অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চেয়েছিলেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের বিদ্বেষ, শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতিত্ব হয় কেড়ে নিয়েছে, নচেৎ নিখোঁজ করেছে মেধাবী রোহিত ভেমুলা, নাজিব আহমেদ, পায়েল তাদবি, ফতিমা লতিফদের৷

শুভদীপ মন্ডল জানাচ্ছেন তাঁর অভিজ্ঞতা

This browser does not support the audio element.

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র শুভদীপ মন্ডল ডয়চে ভেলেকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‌‘‌আমি নিজে একজন দলিত ছাত্র হওয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠী থেকে অধ্যাপক, সর্বস্তরে কুকথা শুনতে হয়েছে৷ আমার যোগ্যতা বিচার করা হয়েছে আমার জাতের নিরিখে৷ রোহিত ভেমুলা থেকে আজকের ফতিমাদের আত্মহত্যার ঘটনা চোখে আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে উচ্চশিক্ষা নিতে এসে তাঁরা কতটা নির্যাতিত হয়েছেন৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি-‌হিন্দু-‌হিন্দুস্তান নীতি নিয়ে এগোচ্ছে৷ অখণ্ড ভারতের তত্ত্ব গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তাদের মণুবাদ বলছে, ব্রাহ্মণরা ঈশ্বরের মাথা থেকে জন্মগ্রহণ করেছে আর দলিতরা নাকি ঈশ্বরের পা থেকে৷ ফলে, বোঝাই যায় এমন ভাবনার শিকড়টা কোথায়৷’’‌

এই ধরনের ঘটনা রুখতে অবিলম্বে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত: আহমেদ হাসান ইমরান

This browser does not support the audio element.

মাদ্রাজ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফতিমা লতিফ আত্মহত্যা করেছেন৷ ৮ নভেম্বর নিজের হস্টেলের রুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়েছেন ফতিমা৷ অভিযোগের তির আইআইটির কয়েকজন শিক্ষকের দিকে৷ সুইসাইড নোটে তেমনই লিখে গেছেন ফতিমা৷ তদন্ত চলছে৷

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহনন করেছিলেন ২০১৬ সালে৷ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-‌র এক ছাত্রনেতা ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন৷ তার জেরে আম্বেদকর ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়৷

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচজন দলিত ছাত্রকে বহিষ্কার করে৷ সেই সঙ্গে হস্টেলসহ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়৷ সে বছর ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সাজাপ্রাপ্ত দলিত রোহিত ভেমুলা হস্টেলে গলায় দড়ি দেন৷

একইভাবে গত ২২ মে জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন মুম্বাইয়ের বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক পায়েল তাদবি৷ তিনিও দলিত৷ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ৷ পায়েলের মা আবেদা ও স্বামী সলমনের অভিযোগ, দলিত হওয়ায় মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো পায়েলকে৷

কোথায় নাজিব?

ডয়চে ভেলেকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান বলেছেন, ‘‌‘‌ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ছাত্রছাত্রীরা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাগুলো দুঃখজনক৷ এই ধরনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বিষয়৷ পুরো বিষয়টি একটি ধারণা থেকে জন্মায়৷ এই ধরনের ঘটনা রুখতে অবিলম্বে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত৷ দলিত ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমাজের মানসিকতা বদলাতে হলে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তর থেকে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷’’

তিন বছর আগে নিখোঁজ হয়েছেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির ছাত্র নাজিব আহমেদ৷ জেএনিউ-‌এর ‘মাহি মান্ডভি হস্টেল’ থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে৷ ১৪ অক্টোবর রাতে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন তিনি৷ বেদম মারে অসুস্থ হয়েছিলেন৷ ১৫ তারিখ সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ৷ নাজিবের মা ফতেমা আহমেদ আজও আশা করে বসে আছেন, তাঁর ছেলে ঠিক ফিরে আসবে৷ দিল্লি হাইকোর্টে ‘হেবিয়াস কর্পাস' আবেদন জানানো হয়৷ হাইকোর্ট পুলিশের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে৷ পরে নাজিবের তথ্য দিতে পারলে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়৷ আরো পরে পুরস্কার মূল্য দশ লক্ষ করা হয়৷ পরের বছর নাজিব নিখোঁজ মামলার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া হয়৷ অবশেষে আদালতকে সিবিআই জানায়, নাজিব নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসাবে কোনো অপরাধের চিহ্ন মেলেনি, অতএব, মামলা বন্ধ করা হোক৷ তা-‌ই হয়েছে৷ মামলার তদন্ত আর হচ্ছে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ