1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে শিশুদের যৌন নিগ্রহ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৯ নভেম্বর ২০১৭

ভারতে শিশু ও নাবালিকাদের ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ দেশে প্রতি দু'জন শিশুর একজন যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তাই এ ধরনের ঘটনা কেন বাড়ছে, কীভাবে তা রোধ করা যায় – এ সব নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে চিন্তা-ভাবনা৷

Symbolbild Kindesmisshandlung Bestrafung
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul

শিশু ও নাবালিকাদের যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের ঘটনা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অল্পবিস্তর হয়৷ কিন্তু ভারতে এই সংখ্যাটা উদ্বেগজনক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে৷ ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্ডিয়া' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি দু'জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু বয়সেই কোনো না কোনোভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়৷ তা সত্ত্বেও চারটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার বাচ্চাদের ওপর এই নিগ্রহকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলতে চায় না, মূলত লোকলজ্জার ভয়ে৷ সে কারণেই দেশের ২৬টি রাজ্যের ৪৬ হাজার শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর সমীক্ষাটি চালায় ঐ এনজিও৷ শুধু তাই নয়, ২০২১ সাল নাগাদ শিশু যৌন নিগ্রহের ঘটনা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে একটি অভিযানও শুরু করেছে তারা৷

কীভাবে? প্রথমত, জোর দেওয়া হয়েছে বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর৷ এই কাজে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সামিল করার কথা বলা হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, বাচ্চাদের দেওয়া হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ৷ শেখানো হবে ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শের তফাত এবং অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপ৷ কারুর স্পর্শ যদি খারাপ লাগে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি যেন অভিভাবকদের জানায়৷ অন্তর্বাসের নীচে দেহের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন কাউকে স্পর্শ করতে না দেয় তারা৷ আর কেউ তা করার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে যেন সে চিৎকার করে অভিভাবকদের জানায়৷ সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে এই যৌন নিগ্রহ হয় জানা শোনা ও পরিচিত লোকজনদের দ্বারা৷ এই অভিযানের অঙ্গ হিসেবে পোস্টারর মাধ্যমে স্কুল বাচ্চাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বার্তাও দেওয়া হয়৷

যেসব শিশু বা নাবালিকা ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের শিকার, তাদের চিকিৎসায় কীভাবে আরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার, সে বিষয়ে সম্প্রতি এক ক্লিনিক্যাল নির্দেশিকা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ প্রথম সারির স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা, ডাক্তার, গাইনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নার্সদের জন্য মূলত এই নির্দেশিকা৷ কারণ তাঁরাই ধর্ষণ ও বাচ্চাদের যৌন নিগ্রহকাণ্ডে প্রথম চিকিৎসা শুরু করেন৷ ভারতীয় চিকিৎসক মহল এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে নির্দেশিকাই বাচ্চাদের ওপর যৌনকাণ্ড নিবারণের একমাত্র উপায় নয়, আরও কিছু করা জরুরি৷ ভারতীয় শিশু চিকিত্সা একাডেমির সভাপতি ডা. সমীর দেহলাই মনে করেন, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া বাচ্চাদের এবং তার পরিবারের অভিভাবকদের যেভাবে তদন্তকাজে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সেটা আরও যন্ত্রণাদায়ক৷ পুলিশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চায় ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ৷ এছাড়া শিশুর মুখ থেকে শুনতে চাওয়া এবং যেভাবে তাদের দৈহিক, মানসিক ও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়, তা অমানবিক ও অসংবেদনশীল৷ এক্ষেত্রে সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা এবং শিশু মনস্তাত্ত্বিকদের তদন্ত কাজে যুক্ত করা৷

প্রশ্ন হলো, বাচ্চাদের যৌন নিগ্রহকাণ্ডের বর্তমান আইন কী বলছে এবং সেই আইন কতটা জটিল এবং কার্যকর? কয়েকদিন আগের ঘটনা৷ একটি নাবালক তার স্কুলেরই এক নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করে৷ ছেলেটির বয়স সাত বছরের নীচে এবং মেয়েটির বয়স চার৷ অভিযোগ, ছেলেটি মেয়েটির যৌনাঙ্গে আঙুল আর পেন্সিল ঢুকিয়ে দেয়৷ মেয়েটির মায়ের অভিযোগে নতুন দিল্লির পুলিশ এফআইআর করে৷ কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধিতে সাত বছরের নীচে কোনো ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না৷ আইনজীবীদের মতে, বাচ্চা ছেলেটির যৌনতার চেয়ে সে সময়ে বেশি ছিল কৌতূহল৷ ভালোমন্দ বোধ ছিল না৷ তাই চার্জশিট দেবার প্রশ্ন ওঠে না৷ দিল্লি পুলিশ পড়ে মহাফাঁপরে৷

বুদ্ধদেব ঘোষ

This browser does not support the audio element.

পাশাপাশি দিল্লিতেই ঘটে অন্য একটি ঘটনা৷ পশ্চিম দিল্লির একটি স্কুলে পাঁচ বছরের একটি ছেলে একই বয়সের এক সহপাঠিনীকে যৌন নিগ্রহ করেছে – এই মর্মে মেয়েটির মা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে৷ বাচ্চা মেয়েটিকে কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা খারাপ স্পর্শ তা শেখানো হয়েছিল৷ তাই সে বুঝতে পারে এবং বাড়িতে এসে সব বলে৷ তার যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্নও ছিল৷

আবার গত শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্ট ৪৫ বছরের এক ব্যক্তিকে তার সাড়ে তিন বছরের ভাইঝিকে যৌন নিগ্রহের পর খুন করার অপরাধে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দেয়৷ এ রকম অসংখ্য ঘটনা সমাজের চারপাশে আকছারই ঘটে চলেছে নিত্যদিন৷

এই সামাজিক ব্যাধি কীভাবে নিবারণ করা যায় সে সম্পর্কে ডয়চে ভেলে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের সমাজবিজ্ঞানী বুদ্ধদেব ঘোষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টা অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেন৷ বলেন, ‘‘আগে ‘রিলিজিয়ন' মানে ধর্ম কতগুলো ‘নর্মস' বা অনুশাসন আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল৷ তা সে ভালো হোক বা মন্দ৷ লোকে তা মেনে চলতো এই বিশ্বাসে যে, খারাপ কাজের জন্য ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দেবেন৷ সেই ধর্মবোধ থেকে আত্মসংযম আসতো৷ ক্রমশ ধর্মবোধের সেই জায়গাটা ভেঙে যাচ্ছে৷ কিন্তু সেই জায়গায় একটা বিকল্প সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি৷ ধর্মের শূন্য জায়গাটা পূরণ করতে দরকার একটা সাংস্কৃতিক সংস্কার, যেটা সবাই মেনে চলবে৷ শুধু আইন কঠোর করলেই এ ব্যাধি দূর হবে না৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ