পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে, মানসিকভাবে অসাম্প্রদায়িক৷ অন্তত তেমনটাই ধারণা ছিল৷ কিন্তু গত ১০ বছরে এই ধারণাটা একটু একটু করে ভেঙে পড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাবরি মসজিদ ভাঙার বছরে, ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিয়ে এক আলোচনাসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছিলেন কলকাতার এক বুদ্ধিজীবী৷ তিনি বলেন যে, হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মুসলিম-বিদ্বেষ বরাবরই ছিল, আছে এবং থাকবে৷ প্রথমত, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং বহু হিন্দু পরিবারের উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসার যে যন্ত্রণা, তা এত সহজে যাওয়ার নয়৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ত এই যন্ত্রণার তীব্রতা একটু একটু করে কমবে৷ যে প্রজন্ম স্বচক্ষে দেশভাগ এবং শরণার্থী সংকট দেখেছে, তাদের যে রাগ, ক্ষোভ, বিদ্বেষ, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সেই একই অনুভূতি হয়ত ততটা সক্রিয় থাকবে না৷ এক্ষেত্রে শিক্ষার প্রসার অবশ্যই একটা বড় ভূমিকা নেবে৷
সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে দূর করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণের কথা বলে না৷ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কেউ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তাহলেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সব রকমের রাজনৈতিক উস্কানি বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের পেছনে কখনো না লাগি৷ সবাই সবার ধর্মকে সম্মান করি৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শেখ শাফায়াতুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেখা শাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সবাই যেন সবার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ নিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ এছাড়া সবাই মিলে একটি দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে সাম্প্রদায়িকতাও দেশ থেকে দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
খরাজ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা, পশ্চিমবঙ্গ
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ মেকআপ আর্টিস্টই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ কই, আমাদের তো সমস্যা হয় না! আমরা মন থেকে কোনও বিভেদে বিশ্বাস রাখি না৷ তাই নিজেদের মধ্যেও বিভেদ জন্মায় না৷ মনের অন্ধকার দূর করাটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার৷
সত্যিকারের জ্ঞান মনের সংকীর্ণতা দূর করে৷ তাই শুধু ডিগ্রি দিয়ে লাভ নেই৷ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে৷ সেটাই হবে আদর্শ জ্ঞাননির্ভর সমাজ৷ সেই সমাজ এমন মানুষ তৈরি করবে, যার মধ্যে উগ্রতা থাকবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
পতিতপাবন রায়, পিয়ারলেস, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগতস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সমষ্টিগতস্তরে মানতে হবে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন৷ দেওয়ানি বিধির অধীনে সবাইকে রাখতে হবে৷ রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন দরকার৷ তবেই রাস্তা আটকে নামাজ পড়া বা মণ্ডপ তৈরি নিয়ে দাঙ্গা হবে না বা রক্তও ঝরবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
8 ছবি1 | 8
কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, তেমনটা হয়নি৷ উলটে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল যখন পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ঘাঁটি গড়তে মরীয়া, তখন সামান্য খোঁচাতেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে মুসলিম-বিদ্বেষ৷ এবং না, শিক্ষা এক্ষেত্রে কোনো হেরফের ঘটায়নি৷ অতি উচ্চ শিক্ষিত, সফল পেশাদাররাও এখন প্রকাশ্যে বলছেন, ‘‘ওদের বড্ড বাড় বেড়েছে৷ শিক্ষা না দিলে চলছে না!'' কী রকম শিক্ষা? গুজরাটে যেমন দেওয়া হয়েছিল!
কখনো কখনো শিক্ষিত মানুষেরাও বলছেন এমন কথা! বিজেপি এমন আক্রমণাত্মক মানসিকতার প্রসারই চাইছে৷ যে কারণে এই বঙ্গভূমে রামায়ণ নিয়মিত পাঠে থাকলেও, পাঠান্তরে শ্রীরামচন্দ্র পুজো পাননি কখনও, অথচ আজ রামনবমী পালিত হচ্ছে৷ সে-ও অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মিছিল করে৷ দুর্গা পুজোর শেষে বিজয়া দশমী বাংলায় চিরকালই আত্মীয়-বন্ধুর পুনর্মিলনের উৎসব৷ সেদিন মুসলিম প্রতিবেশীর ঘরেও বিজয়ার নিমকি, নারকেল নাড়ু যায়, ঠিক যেভাবে ওদের ঘর থেকে আসে ঈদের সেমাই৷ কিন্তু এ বছর নাকি বিজয়া দশমী ‘শস্ত্র দিবস' হিসেবে পালিত হবে বাংলার কিছু জায়গায়৷ যুদ্ধজয়ের উৎসব হিসেবে৷
শিক্ষিত মুসলিমদের এখনও দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়
সমস্যা হচ্ছে, বিজেপির এই হিন্দুত্ববাদী কৌশলের পালটা হিসেবে আরও বিভ্রান্ত এক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে৷ রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল এবং এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বড় এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মীয় সংস্কৃতি দিয়েই বিজেপির পুজোপাঠের সংস্কৃতির বিরোধিতা করতে চাইছে, যা কার্যত অসম্ভব এবং ভুল৷ কারণ, ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতার যে আদর্শের অন্তত বাঙালি মানসিকতায় এক ধরনের আত্মীকরণ হয়েছিল, তার থেকে বাঙালিকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই রাজনৈতিক কৌশল৷ সেখানেও ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে৷ এই বছরেই যেমন, বিজয়া দশমীর পরের দিন মুসলমানদের মহরম পালিত হবে বলে সেই দিন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এই সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে, যার পুরো সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি৷
অথচ মুখ্যমন্ত্রী একবারও ভাবেননি, মহরমের মিছিল হয় দুপুরে, চলে বড় জোর বিকেল পর্যন্ত, আর প্রতিমা বিসর্জন শুরুই হয় সন্ধের পর থেকে৷ এর আগেও বহুবার বিজয়া দশমী এবং মহরমের তারিখ গায়ে গায়ে পড়েছে, কিন্তু কোনো অসুবিধে হয়নি৷ এবারেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর রাজ্যের একাধিক মুসলিম গোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা এমন কোনো আবেদন সরকারের কাছে করেনি৷ সোজা কথায়, এটা সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, যার সঙ্গে বাঙালি মুসলিমদের কোনো যোগ নেই৷
‘হিন্দুদের মুসলিম-বিদ্বেষ বরাবরই ছিল, এখনও আছে’
পরিস্থিতিটাকে বাঙালি মুসলমিরা কীভাবে দেখছেন? বিশেষত শিক্ষিত, উদারপন্থি মুসলিমরা? অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক শামিম আহমেদের গলায় হতাশার সুর স্পষ্ট৷ তিনি পরিষ্কারই বলছেন, শিক্ষিত মুসলিমদের এখনও দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়৷ আর যাঁরা আছেন, তাঁরাও খুব বিভ্রান্ত এবং অসহায়৷ এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কীভাবে করতে হবে, তাঁরা বুঝতে পারছেন না৷ বরং অনেক সময়ই ভুল প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলছেন কোনো ঘটনায়, যার জন্য আফসোস হচ্ছে৷
আরেক বাঙালি বুদ্ধিজীবী আবদুর রউফ আরও একটু স্পষ্ট করেছেন সংকটটা৷ তিনি বলছেন, যারা এইধর্মনিরপেক্ষতার স্খলন আটকাতে পারত, সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারত, সেই বামপন্থিরা আজ শক্তিহীন৷ জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী কংগ্রেসও অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে৷ তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মীয় সংস্কৃতি দিয়েই বিজেপির ধর্মীয় আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে চাইছে, যা শুধু ভুল নয়, বিপজ্জনকও বটে৷ আবদুর রউফের সাফ কথা, বাঙালি মুসলমানদের ভুল বোঝানো হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ, যা সরকার গড়ার পক্ষে জরুরি বলে মমতা ব্যানার্জির হয়ত মনে হচ্ছে৷ কিন্তু শতকরার হিসেবে যে ভোটের অঙ্ক আর কষা হয় না, সেটা উত্তর প্রদেশে বিজেপি কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে প্রমাণ করে দিয়েছে৷ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল ঐ রাজ্যেরও জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কিন্তু মুসলিম৷ তা সত্ত্বেও সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাদের ধর্তব্যের মধ্যেই রাখা হয়নি৷ প্রখর হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ সেখানে দাপটে সরকার গড়েছেন এবং একের পর এক মুসলিম-বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন৷ কাজেই ভোটের হিসেবে আজ যে গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে পাচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা স্রেফ অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে পারে৷ এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসও গুরুত্ব হারাতে পারে৷ কারণটা আবদুর রউফ তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেছেন যে, হিন্দুদের মুসলিম-বিদ্বেষ বরাবরই ছিল, এখনও আছে৷ বিজেপি তার সুযোগ নিচ্ছে মাত্র৷
বাবরি মসজিদের প্রতিষ্ঠা থেকে ভাঙচুরের ইতিহাস
হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবরের আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বরে৷
ছবি: dpa - Bildarchiv
১৫২৮ সালে নির্মাণ
রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৮ সালে সেখানে সম্রাট বাবরের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে জনমুখে মসজিদটির নামও হয়ে যায় বাবরি মসজিদ৷ আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷
ছবি: DW/S. Waheed
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী, ১৮৫২ সাল পর্যন্ত হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পূজা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran
সংঘাতের সূত্রপাত
প্রথমবারের মতো হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত৷১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার দেয়াল দিয়ে হিন্দু আর মুসলমানদের প্রার্থনার স্থান আলাদা করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
হিন্দুদের দাবি
আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে হিন্দুদের দাবি৷
ছবি: AP
বেআইনিভাবে মূর্তি স্থাপন
১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷
ছবি: DW/S. Waheed
নেহরুর ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
রাম-সীতার মূর্তি স্থাপনের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থকে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, তিনি বলেন ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে’’৷
ছবি: Getty Images
মসজিদের তালা খোলার আন্দোলন
১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
দুই সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থানে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে৷ ১৯৮৬ সালে মসজিদের তালা খুলে সেখানে পূজা করার অনুমতি প্রার্থনা করে হিন্দু পরিষদ৷ অন্যদিকে, মুসলমানরা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন৷
ছবি: AP
‘রাম রথযাত্রা'’
১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আডভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রাম রথযাত্রা'’ শুরু করেন৷
ছবি: AP
১৯৯২
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আডভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়াসহ অন্যান্য হিন্দুবাদী নেতারা মসজিদ প্রাঙ্গনে পৌঁছান৷ ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, শিব সেনা আর বিজেপি নেতাদের আহ্বানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাবারি মসজিদে হামলা চালায়৷ ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সমঝোতার উদ্যোগ
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দু’পক্ষের সমঝোতার জন্য বিশেষ সেল গঠন করেন৷ বলিউডের সাবেক অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে হিন্দু ও মুসলমানদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়৷
ছবি: AP
শিলালিপি কী বলে
পুরাতাতত্বিক বিভাগ জানায়, মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷ আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷
ছবি: CC-BY-SA-Shaid Khan
বিজেপি দোষী
বিশেষ কমিশন ১৭ বছরের তদন্তের পর ২০০৯ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দেয়৷ প্রতিবেদনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিকে দোষী দাবি করা হয়৷
ছবি: AP
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে জানান, যে স্থান নিয়ে বিবাদ তা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিত৷ এক তৃতীয়াংশ হিন্দু, এক তৃতীয়াংশ মুসলমান এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখড়ায় দেওয়ার রায় দেন৷ রায়ে আরো বলা হয়, মূল যে অংশ নিয়ে বিবাদ তা হিন্দুদের দেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদন
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল করে৷ দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, বাদী বিবাদী কোনো পক্ষই জমিটি ভাগ করতে চান না৷
ছবি: AP
ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়
ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে বাবরি মসজিদে হামলা একটি ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’৷ গুটি কয়েক হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দিনটিকে সূর্য দিবস বলে আখ্যায়িত করলেও বেশিরভাগ ভারতীয় দিনটিকে ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেন৷ অনেকেই বলেন, এই ঘটনায় দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি একেবারে ভূলুন্ঠিত হয়েছিল৷