1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে সিজারিয়ান অপারেশন বাড়ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায়
২৩ জুলাই ২০১৭

সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানপ্রসবের হার বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে৷ এর বিহিত করতে সিজারিয়ান ও স্বাভাবিক ডেলিভারির হার অডিট করে তার তালিকা প্রকাশ্যে দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

প্রতীকী ছবিছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images

কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পের (সিজিএইচএস) সঙ্গে যুক্ত প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে দেখানোর নিয়ম বাধ্যতামূলক করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জে. পি. নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছেন৷ প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে সন্তান প্রসবে অনাবশ্যকভাবে সিজারিয়ান অপারেশন রোধে সময়ান্তরে অডিট করারও অনুরোধ করা হয়েছে রাজ্য সরকারগুলিকে৷ সাম্প্রতিককালে সন্তান প্রসবে সিজারিয়ান পদ্ধতি অবলম্বনের হার বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে৷ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যে৷ বারংবার কোনো মহিলার সিজারিয়ান করা হলে তাঁর প্রজনন স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়৷ এর বিহিত করতে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি প্রকাশিত পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলির তুলনায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে সিজারিয়ান অপারেশনের হার তিনগুণ বেশি৷ প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে এই হার যেখানে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, সরকারি হাসপাতালে সেখানে এই হার মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ৷

‘খরচ কম করতে হলে কর্পোরেট মালিকদের সঙ্গে সরকারের কথা বলতে হবে’

This browser does not support the audio element.

এই তারতম্যের কারণ কী? কারণটা লুকিয়ে আছে সম্ভবত বাণিজ্যিক স্বার্থে৷ মেডিক্যাল বিল মোটা করতে৷ এর ফলে সবথেকে বেশি মার খায় আর্থিক দিক থেকে অসচ্ছল পরিবারগুলো, বিশেষ করে যাদের মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স নেই৷ প্রাইভেট হাসপাতালগুলি যাতে সন্তান প্রসবে অনাবশ্যকভাবে সিজারিয়ান না করে তার জন্য ক্লিনিক্যাল প্রতিষ্ঠান আইনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারগুলিকে বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব সি. কে. মিশ্র৷ প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান প্রকল্পে গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে সিজারিয়ান অপারেশন করার দরকার না পড়ে৷ কারণ এই অপারেশন বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, যার জন্য গরিব মহিলার পরিবারকে অহেতুক আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়৷ ভারতে স্বল্পবিত্ত পরিবারের ৭০ শতাংশেরই মেডিক্যাল বিমা নেই৷

এর প্রেক্ষিতে, দু'টি রাজ্যের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাইভেট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিতে সিজারিয়ান সন্তান প্রসবের হার প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই হার ১৮ শতাংশের মতো৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও ছবিটা প্রায় একই৷ প্রাইভেট এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে সিজারিয়ান এবং নর্মাল ডেলিভারির হার যথাক্রমে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ১৮ দশমিক ৮শতাংশ৷ সবথেকে বেশি সিজারিয়ান হয় তেলেঙ্গানা রাজ্যে ৭৫ শতাংশ এবং ৪০ দশনিক ৬ শতাংশ৷ আর সবথেকে কম সিজারিয়ান হয় রাজস্থানে৷

প্রশ্ন হলো, সিজারিয়ান অপারেশন কখন দরকার হয়? যখন দেখা যায় স্বাভাবিক প্রসব করাতে গেলে সন্তান এবং মায়ের জীবনের আশংকা রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিজারিয়ানেও ঝুঁকি আছে৷ এই যেমন সেই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের উন্নত পরিকাঠামো যদি না থাকে তবে জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ ডাক্তার এবং প্রাইভেট মেডিক্যাল সংস্থাগুলি সিজারিয়ান অপারেশনের বিরুদ্ধে শিশু ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর নির্দেশিকার সমালোচনা করেছে৷ তাদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলি অপারেনের খরচ অনেকটাই বহন করে থাকে৷ দ্বিতীয়ত সরকারি হাসপাতালগুলিতে এত বেশি ভিড় যে সময়মত পরিষেবা পাওয়া যায় না৷ তাই তাঁরা ছুটে আসে প্রাইভেট হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমে৷

সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা এত বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নাম করা স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অঞ্জন দে ডয়চে ভেলেকে যা বললেন, তার সারমর্ম হলো – আজকাল মায়েরা গর্ভযন্ত্রণা সহ্য করতে রাজি নন৷ তাঁরা তাড়াতাড়ি ডেলিভারি করানোর জন্য ডাক্তারদের চাপ দেন৷ সেজন্য প্রাইভেট হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করতেও পেছপা হন না অবস্থাপন্নরা৷ দ্বিতীয় বড় কারণ, আজকাল মহিলারা বেশি বয়সে বিয়ে করেন৷ ফলে সন্তানধারণ করেনও বেশি বয়সে৷ যদি ৩৫ বছরের লক্ষণরেখা পেরিয়ে যায়, তাহলে সন্তান এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জটিলতা বাড়ে৷ প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ কম করার বিষয়ে গায়নোকলজিস্ট ডক্টর দে ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ কম করতে হলে কর্পোরেট মালিকদের সঙ্গে সরকারের কথা বলতে হবে৷ এক্ষেত্রে ডাক্তারদের কোনো হাত নেই৷'' এছাড়া কর্পোরেট মালিকদের বলতে হবে সস্তায় সরকারি জমিতে যেসব কর্পোরেট-অধীনস্ত প্রাইভেট হাসপাতাল হয়েছে, সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে তাদের খরচ কমাতে হবে৷ পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলিতেও বাড়াতে হবে ডাক্তারদের সংখ্যা৷

এ বিষয়ে আপনার কী মতামত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ