পশুপাখির প্রতি তাচ্ছিল্য, সহানুভূতির অভাব আজও বড় সমস্যা৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের ফলে প্রাণিজগতের আবাস কমে চলেছে৷ ভারতে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর এক উদ্ধার কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে৷
ভারতের হাতি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে একটি হাতিছবি: DW
বিজ্ঞাপন
সুজি চোখে দেখতে পায় না৷ তা সত্ত্বেও সে কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এক সার্কাসে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে এসেছে৷ কিন্তু এর বিনিময়ে সুজি ঠিকমতো খাবার ও যত্ন পায়নি৷ তাকে উদ্ধার করে যখন মথুরার হাতি সংরক্ষণ ও দেখাশোনার জন্য গঠিত কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল, প্রাণীটি খুবই দুর্বল ও খারাপ অবস্থায় ছিল৷
সেখানকার সব হাতিরই এমন করুণ কাহিনি রয়েছে৷ ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা কার্তিক সত্যনারায়ণ বলেন, ‘‘প্রতি বছর হাতির সংখ্যা কমে চলেছে৷ আমরা তাদের হারাচ্ছি৷ বসতি ধ্বংসের কারণে শত শত হাতি মারা হচ্ছে৷ বনজঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে, শহরের সম্প্রসারণ ঘটছে৷ অনেক হাতি ধরে নির্যাতন, শোষণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এ আমরা হাতি উদ্ধার করে প্রাণীগুলির পুনর্বাসন করি৷''
ভারতের প্রথম হাতির হাসপাতাল
04:15
This browser does not support the video element.
বর্তমানে প্রকৃতির কোলে যে সব এশীয় হাতি টিকে রয়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ভারতেই পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেই হাতিও কোনো রকমে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷
বর্তমানে ভারতের জঙ্গলগুলিতে এশীয় হাতির সংখ্যা ২২,০০০-এরও কম৷ প্রায় ২,৭০০ হাতি মানুষের হাতে বন্দি রয়েছে৷ সেগুলিকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷
হাতির যত্ন নিতে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস ২০১০ সালে এই কেন্দ্রটি খোলে৷ বর্তমানে ৩০টিরও বেশি হাতি সেখানে বাস করছে৷
জিঞ্জারের বয়স ৫০-এরও বেশি৷ ২০২১ সালে তাকে এখানে আনা হয়েছিল৷ শরীরে ক্ষত এত গভীর ছিল, যে প্রাণীটি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি৷ ডাক্তাররা সেই হাতির দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে পারেননি৷ তবে তাঁরা পায়ের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করছেন৷ পশুচিকিত্সক ড. প্রমোদ রাজপুত বলেন, ‘‘বর্তমানে আমরা জিঞ্জারকে লেজার থেরাপি দিচ্ছি৷ সেটির পিছনের জয়েন্টগুলো অত্যন্ত দুর্বল৷ তাই আমরা থেরাপির মাধ্যমে সেই অংশকে শক্তিশালী করে নিরাময়ের প্রক্রিয়ায় উন্নতি আনার চেষ্টা করছি৷ হাতি এখানে এলে আমরা প্রায়ই দেখি, যে সেগুলির জয়েন্ট দুর্বল অথবা বিকৃত হয়ে গেছে৷ মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা অপুষ্টির কারণে এমনটা ঘটে৷''
ঝলসে যাচ্ছে কলকাতা, বাঘ, হাতিও জলে গা ডুবিয়ে
এরকম গরম কলকাতায় থাকে না। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার উপরে। শুকনো গরম। সঙ্গে গরম হাওয়া বইছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুধু জলের খোঁজে
সারাদিন কলকাতার মানুষ শুধু জলের খোঁজ করছেন। হয় খাওয়ার জন্য। অথবা শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য। বাচ্চারা সমানে ঝাঁপ দিচ্ছে গঙ্গায়। অথবা কোথাও জলধারা পেলে তাতে স্নান করে নিচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুকনো গরম
কলকাতার গরমে আদ্রতার পরিমাণ থাকে খুব বেশি। তাই দরদর করে ঘামতে হয়। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু এবার পুরো উল্টো। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি। সেই সঙ্গে একেবারে শুকনো গরম। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কম। এই গরম মানুষের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। তখন এভাবে গায়ে জল ঢালার ব্যবস্থা করতে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জলে বাঘ
চিড়িয়াখানার ছবি। গরমের হাত থেকে বাঁচতে জলে আশ্রয় নিয়েছে বাঘ। সেখানেই দুপুরের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাতিও কাবু
এই গরমে কাবু হয়ে পড়ছে হাতিও। তারাও জলের মধ্যে গিয়ে বসে আছে। সমানে গায়ে জল ছেটাচ্ছে
এই গরমেও কাজ করে যেতে হচ্ছে ট্রাম ও বাসের কন্ডাকটরদের। নিজেকে সুস্থ রাখতে তারা বারেবারে মাথায়, মুখে জল দিচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় মানুষ প্রায় নেই
কলকাতার অফিসপাড়া। সাধারণ সময়ে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু এখন শুধু গাড়ি দেখা যাচ্ছে। মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। দরকার না হলে, কেউ রাস্তায় বেরোচ্ছেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছাতার বদলে
রাস্তায় বের হলে এই মানুষটির মতো অবস্থা হচ্ছে। ছাতা নেই। তাই রুমাল দিয়ে মাথা ঢেকে চলাচল করতে হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জলের জন্য
সকাল থেকে চলছে জল ধরে রাখার ব্যস্ততা। এই গরমে জল তো বেশি লাগবেই। নাহলে শরীর অসুস্থ হতে বাধ্য। সকাল সকাল সেই জলের কাজ সেরে ফেলার ব্যস্ততা এখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঠেলাওয়ালার অবস্থা
কাজ তো করতেই হবে। যখন কাজ নেই, তখন ছায়া খুঁজে বের করে লুঙ্গিটা হাঁটুর উপরে তুলে নিয়ে খালি গায়ে হাতপাখার হাওয়া খেয়ে একটু স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘুমের দেশে
এই গরমে সবচেয়ে ভালো কাজ। ময়দানের রেলিংয়ে লম্বা ঘুম লাগানো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
খদ্দের নেই তো ঘুম
গরমের দুপুরে কেউ কিছু কিনতে আসছে না। তাই দোকানদারও ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নারী পুলিশের অবস্থা
গরম হলেও পুলিশকর্মীদের তো কাজ করতেই হবে। এই নারী পুলিশকর্মী যেমন হাতপাথা দিয়ে গরমের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ট্রাফিক পুলিশের হাল
কিন্তু ট্রাফিক পুলিশকে তো রেদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পরিচালনা করতে হবে। তাই তারা ছাতা মাথায় পুরোহাতা গ্লাভস পরে রোদ ও গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
হাতি জঙ্গলের প্রাণী৷ সেখানেই তাদের থাকার কথা৷ কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এই প্রাণীকে পোষ মানিয়ে চলছে৷ সেনাবাহিনীর কাজ থেকে শুরু করে ভারি মালপত্র বহন, পিঠে চাপা অথবা উৎসবে মনোরঞ্জনের উপকরণ হিসেবে হাতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷
প্রাণী অধিকার অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, মানুষ আসলে কখনো হাতিকে সঙ্গী হিসেবে দেখেনি, বরং ক্রীতদাস করে রাখতে চেয়েছে৷ হাতি প্রকল্পের সমন্বয়ক শিবম রাই বলেন, ‘‘কোনো প্রাণীকে আমাদের সভ্যতার অংশ হয়ে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই৷ প্রকৃতি, পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমেই সেগুলির ভূমিকা থাকার কথা৷ কিন্তু মানুষ এমন প্রাণী ধরে, তাদের বিরক্ত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, ক্রীতদাস করার চেষ্টা করেছে৷ সেটা খুব ভুল কাজ এবং সব রকমভাবে এটা বন্ধ করা উচিত৷''
শুধু হাতি নয়, ভালুক, বাঘ, চিতা এবং সরিসৃপও উদ্ধার করে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস সংগঠনের সাহায্য নেওয়া হয়৷ উদ্ধারের কাজ, খোরাক ও চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ কার্তিকের মতে, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রাণী সম্পর্কে মানুষের মনোভাব বদলানো জরুরি৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রাণী দেখাশোনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ মানুষের কাছে চাঁদা চাওয়া, এই কাজের জন্য সমর্থন চাওয়া কঠিন কাজ৷ কিন্তু এই সব হাতির প্রতি সহানুভূতি, ভালবাসা এবং দয়া দেখানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে বোঝানোই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷
সেন্টারে আসার আগে এই সব হাতি অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ কিন্তু ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস প্রাণীগুলির বাকি জীবন যতটা সম্ভব মনোরম করে তোলার চেষ্টা করছে৷
প্রতিবেদন: অশোক কুমার/এসবি
আসল হাতি রক্ষায় ভারতের মন্দিরে ‘রোবট হাতি’
ভারতের কেরালার এক মন্দিরে সম্প্রতি এক যান্ত্রিক হাতি উপহার দিয়েছে প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন পেটা৷
ছবি: PETA India
রোবট হাতি
প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ বা পেটার ভারতীয় শাখা সম্প্রতি কেরালার ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরকে একটি যান্ত্রিক হাতি উপহার দেয়৷
ছবি: PETA India
লোহার তৈরি
ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রোবট হাতির উচ্চতা ১১ ফুট, ওজন ৮০০ কেজি৷ লোহার ফ্রেম দিয়ে তৈরি হাতিটির বহিরাবরণ রাবার দিয়ে ঢাকা৷ পেটা জানিয়েছে, রোবট হাতিতে পাঁচটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক মোটর রয়েছে৷ জীবিত হাতির মতোই এটি মাথা, চোখ এবং কান নাড়াতে পারে৷
ছবি: PETA India
খরচ
কেরালার থ্রিসুর শহরের কয়েকজন শিল্পী হাতিটি তৈরি করেছেন৷ এতে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ রূপি৷ এই হাতিতে একসঙ্গে পাঁচজন চড়তে পারবেন৷ আর মাহুত সুইচ দিয়ে শুঁড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
ছবি: PETA India
উদ্দেশ্য
এক বিবৃতিতে পেটা ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় আচার পালন, উৎসব আয়োজন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জীবন্ত হাতি বা অন্য কোনো প্রাণি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেছিল৷ এর পরই পেটা ইন্ডিয়া ঐ মন্দিরকে রোবট হাতিটি উপহার দেয়৷
ছবি: PETA India
ধর্মীয় আচার
মন্দির কর্তৃপক্ষ রোবট হাতিটির নাম দিয়েছে ‘ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি রমন’৷ সম্প্রতি এই হাতিকে দিয়ে ‘নাদায়িরুথাল’ (দেবতার উদ্দেশ্যে হাতি উৎসর্গ করা) পালন করা হয়৷ জ্যোতিষী পদ্মনভ শর্মা, তান্ত্রিক কারুমাথ্রা বিজয়ন ও শ্রী পদ্মনভস্বামী মন্দিরের পুরোহিত সাদিশান নামবুথিরি এই আচারে অংশ নেন৷
ছবি: PETA India
হাতির ব্যবহার
কেরালার বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীর অনুষ্ঠানে হাতি ব্যবহার করা হয়৷ তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রায়ই শিকলে বেঁধে রাখা হয়৷ মন্দিরে এভাবে হাতির ব্যবহারের সমালোচনা করেছিলেন প্রাণি অধিকারকর্মীরা৷ বছরের পর বছর ধরে এসব বন্দি হাতির স্বাস্থ্য, পরিচর্যা ও চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তারা৷
ছবি: PETA India
আহ্বান
বিবৃতিতে পেটা জানিয়েছে, উৎসবের সময় অতি উচ্চ শব্দে হাতিগুলোকে বশীভূত করা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর’ চর্চা৷ এই অমানবিক চর্চা বন্ধে প্রতিটি মন্দিরের উচিত যান্ত্রিক হাতি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করা৷
ছবি: PETA India
খুশি মন্দির কর্তৃপক্ষ
ইরিঞ্জাদাপ্পিলি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত রাজকুমার নাম্বুথিরি জানান, তারা এই যান্ত্রিক হাতিটি পেয়ে খুশি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখাদেখি অন্য মন্দির কর্তৃপক্ষও তাদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য এ ধরনের রোবট হাতি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে চিন্তা করবে বলে প্রত্যাশা করি৷’’
ছবি: PETA India
হাতির মৃত্যু
প্রাণি অধিকার সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র সম্প্রতি কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বর্ধিত মৃত্যুহার সম্পর্কে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, কেরালায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩৮টি বন্দি হাতি মারা গেছে৷
ছবি: PETA India
বুনো হাতির সংখ্যা
বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বুনো হাতি বন্দি অবস্থায় আছে৷ এর প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগই রয়েছে কেরালায়৷