২০১৪ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার,অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা৷ এই বিপুল অর্থশক্তি স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে এক বড় চ্যালেঞ্জ, এমনটাই মনে করছেন নির্বাচন কমিশন৷
বিজ্ঞাপন
ভারতে ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী ৭ই এপ্রিল৷ নয় দফার এই নির্বাচন চলবে ১২ই মে অবধি৷ প্রায় ৮১ কোটি ভোটার ভোট দেবেন ৫৪৩ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে৷ ভারতের মতো এই বিশাল দেশে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের বড় অন্তরায় অর্থশক্তি এবং পেশিশক্তি যেটা চিন্তার কারণ বলে মনে করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার৷ নির্বাচনি প্রচার অভিযানে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, তা বিশ্বের সবথেকে ব্যয়বহুল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দেবার মতো৷ বলা হয়, ২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৭০০ কোটি ডলার৷ ভারতের নড়বড়ে অর্থনীতি সত্ত্বেও এবারের নির্বাচনে ৫০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডি৷ এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের নির্বাচনি ব্যয়ের তিনগুণ৷
খরচের বহরটা কোথায়, কেমন, কতটা? খরচের সিংহভাগ যায় গোটা দেশ জুড়ে নির্বাচনি প্রচার অভিযানে৷ নির্বাচনি প্রচার অভিযান বলতে বিজ্ঞাপন, জনসভা, পরিবহন এবং অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনা ইত্যাদি৷ এমনকি ওজনদার প্রার্থীদের জনসভা কভার করার জন্য মিডিয়া সংস্থাগুলিকেও টাকা দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে৷ বিজেপি নির্বাচনি সময়সূচি ঘোষণার আগে থেকেই প্রচার শুরু করে৷ দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রচার অভিযানে ভাড়া করা হেলিকপ্টার ও বিমানে গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন৷ রাজ্যওয়ারি প্রচার অভিযানে যেসব রাজ্য চিরাচরিতভাবে বিজেপি বিরোধী সেইসব রাজ্যে প্রচার চালাচ্ছেন মোদী আরো জোরেসোরে৷ পার্টি তহবিল ছাড়াও মোদীর প্রচারে অর্থ আসছে তাঁর পৃষ্ঠপোষক শিল্পপতিদের কাছ থেকে৷ মোদীর জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য গঠিত হয়েছে প্রাক্তন বিনিয়োগ ব্যাংকার এবং লন্ডনের সিটিব্যাংকের প্রাক্তন কর্তাব্যক্তির নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক কমিটি৷ প্রবাসি ভারতীয়দের কাছ থেকে অন-লাইন তহবিল সংগ্রহ অভিযান চালিয়েছেন৷ অন্যদিকে, দলীয় তহবিলে অর্থ যোগান কীভাবে হচ্ছে কারা দিচ্ছে তা খুঁজে বের করা কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর অবস্থা৷ বলা বাহুল্য, কালো টাকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ ভারতে সব রাজনৈতিক দলের একই চেহারা৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
নির্বাচন কমিশন সংসদীয় প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনি ব্যয় বেঁধে দিয়েছেন প্রার্থী পিছু ৭০ লাখ টাকা৷ কিন্তু বাস্তবে খরচ হয় তার দশগুণ৷ কালো টাকা বা অর্থশক্তির প্রভাব রোধে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনি ব্যয়ের দিকে লক্ষ রাখতে প্রতি বিধানসভা ক্ষেত্রের জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছেন নির্বাচন কমিশন৷ নির্বাচনের বিপুল ব্যয় ভারতের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন এতে ভাটা পড়া ভারতীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও গতি আসবে৷ সবথেকে লাভবান হবে বিজ্ঞাপন শিল্প৷ মদ ও মোটরবাইক শিল্প৷ ভারতে ভোটের সঙ্গে এই দুটি উপাদানের চাহিদা জড়িত৷ তবে এই ইতিবাচক লক্ষণ সাময়িক৷ ভোট পর্ব শেষ হলেই তা স্তিমিত হয়ে যাবে৷ ভারতে চলতি অর্থবর্ষে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৫ শতাংশের নীচে৷
এদিকে ভোটযুদ্ধ জমে উঠেছে৷ বেশির ভাগ দল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছেন৷ প্রার্থী তালিকা নিয়ে মান অভিমান, বিদ্রোহ এবং শেষে দল ছাড়াছাড়ি চলেছে সমানে৷ চলেছে ভোটের আগে এবং পরে জোট বাঁধার সমঝোতা৷ তৃতীয় ফ্রন্ট কিংবা যুক্তরাষ্ট্রীয় ফ্রন্ট গড়া নিয়েও চলছে নানা ফর্মুলা৷