১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মানসিক রোগীর সংখ্যা পাঁচ কোটি৷ কিন্তু এদের যথার্থ চিকিৎসা দেওয়া হয় না৷ এ সমস্যা নিয়ে কথাও বলে না কেউ৷ রাজধানী দিল্লিতে এদের নিয়ে বিশেষ এক উদ্যোগ নিয়েছে একটি এনজিও৷
বিজ্ঞাপন
দিল্লির ঐতিহাসিক জামা মসজিদের সামনে দিয়ে আপনি মিনা বাজারের অলিগলিতে ঢুকলেন, অনেক দোকান, প্রচুর ভিড়, অলংকার থেকে প্রসাধন সামগ্রি বা পুতুল, জামাকাপড়, জুতোর সারি সারি দোকান৷ এই ব্যস্ত অলিগলি পেড়িয়ে উর্দু পার্ক, যেখানে হকাররা বসে৷ এই ব্যস্তততম জায়গায় দু'টি চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় একজন মনোচিকিৎসক ও একজন মনোবিজ্ঞানীকে৷ চেয়ার দু'টোর সামনে চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন৷
সপ্তাহে অন্তত দু'দিন তাঁরা উর্দু পার্কে আসেন৷ মানসিক রোগীদের সাহায্য করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য৷ তবে শুধুমাত্র রোগীদের চিকিৎসাই করেন না তাঁরা, বিনামূল্যে ওষুধও দেন৷
এনজিও-টার নাম – আশ্রয় অধিকার অভিযান বা ‘ট্রিপল এ'৷ ১০ বছর আগে গৃহহীনদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই সাহায্য সংগঠন৷ কিন্তু আজ এদের পরিচিতি মানসিক রোগীদের সাহায্য করার জন্য৷ দিল্লিভিত্তিক এই বেসরকারি সংস্থাটি গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সড়কে ছোট ছোট ক্লিনিক স্থাপন করেছে৷
২০০৮ সাল থেকে এক হাজারেরও বেশি মানসিক রোগীকে সাহায্য করে আসছে সংস্থাটি৷ উর্দু পার্ক প্রকল্পে সেচ্ছাসেবীরা ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স বা আইএইচবিএএস-এর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে কাজটি করছেন৷ ‘ট্রিপল এ'-এর উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার ডয়চে ভেলেকে জানালেন, প্রথমে এই মানসিক রোগীদের জীবনমানের উন্নতি করার চেষ্টা করেন তাঁরা৷ তাঁদের সমস্যাগুলো নথিভুক্ত করেন, কী উপায়ে তাঁরা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন বা পেরেছেন, সেটাও লেখা থাকে৷ এছাড়া এনজিও-টি খাবার, পোশাক, সাবান, আশ্রয় এবং ওষুধ দিয়ে থাকে এই সব মানসিক রোগীদের৷ প্রতি মাসে যার জন্য খরচ হয় অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার রুপি৷
পরিবারের অবহেলা
ঋতিকা শর্মাকে এই ক্লিনিকে নিয়ে এসেছিল পুলিশ৷ আইএইচবিএএস-এর তত্ত্বাবধানে এক মাস চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু মূল সমস্যাটা হচ্ছে, এই রোগীদের পরিবার আর তাঁদের দায়িত্ব নিতে চায় না৷ ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর কারো ঠিকানা জানা গেলে অথবা যোগাযোগ করা হলে, তাঁদের সঙ্গে পরিবারের মানুষজন দেখা করতেও আসে না৷ ফলে এই রোগীদের পুরোপুরি সেরে ওঠাটা খুব কঠিন, জানালেন সঞ্জয়৷
পাবনার ‘পাগলা গারদের’ কিছু দুর্লভ ছবি
পাবনার মানসিক হাসপাতালকে অনেকে বলে ‘পাগলা গারদ’৷ সেখানকার অবস্থা নিয়ে অভিযোগ অনেক৷ তবে এখানে থাকছে হাসপাতালটির কিছু দুর্লভ ছবি, যা ১৯৯৪ সালে তুলেছিলেন এক আলোকচিত্রী৷
ছবি: imago/UIG
প্রথম মানসিক হাসপাতাল
বাংলাদেশের প্রথম মানসিক হাসপাতালের অবস্থান পাবনায়৷ ১৯৫৭ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল একটি বাড়িতে৷ পরে ১৯৫৯ সালে হাসপাতালটি হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়৷ শুরুতে মানসিক হাসপাতালটি ছিল ৬০ শয্যাবিশিষ্ট৷ পরবর্তীতে তা ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়৷
ছবি: imago/UIG
প্রায় দেড়কোটি মানসিক রোগী
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, ২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে এ কথা৷ এত বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য বলতে গেলে মূল সরকারি হাসপাতাল একটাই, পাবনায়৷ ছবিটি ১৯৯৪ সালে তোলা এক নারীর, যিনি ভারতের মাদ্রাজ থেকে এসেছিলেন এবং পাবনায় হাসপাতালটির শুরু থেকেই রোগী হিসেবে ছিলেন৷
ছবি: imago/UIG
মানসিক রোগী সম্পর্কে ভুল ধারণা
বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের ‘পাগল’ বলা হয়, যা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ দেশটিতে মানসিক রোগীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে৷ মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় যা এক অন্তরায়, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ ছবিতে ১৯৯৪ সালে পাবনা মানসিক হাসপাতালের রান্নাঘর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: imago/UIG
গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের জন্য নয়
১৯৯৪ সালে যখন এ সব ছবি তোলা হয়, তখন মানসিক হাসপাতালে শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের ভর্তি করা হতো না৷ এখনও সেই নিয়ম চালু আছে কিনা জানা যায়নি৷
ছবি: imago/UIG
পুরুষ ওয়ার্ড
ছবিতে পাবনার মানসিক হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতাকে রোগ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা রয়েছে, মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা৷
ছবি: imago/UIG
মানসিক রোগীদের প্রার্থনা
মুসলমান পুরুষ রোগীরা প্রার্থনা করছেন৷ মানসিক হাসপাতালে পুরুষ ওয়ার্ড থেকে ছবিটি তোলা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, মানসিক রোগীদের পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়৷ বরং তাদের পরিবারের সংস্পর্শে রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত৷ বাংলাদেশে অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন৷ পাবনা মানসিক হাসপাতালে থাকা রোগীদের আত্মীয়রা সচরাচর তাদের আর খোঁজ নিতে আসেন না৷
ছবি: imago/UIG
হিংসাত্মক প্রবণতা আছে যাদের
হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে প্রবার প্রবণতা আছে এমন রোগীদের রাখা হয় আলাদা ওয়ার্ডে৷ ১৯৯৪ সালে তোলা ছবিতে সেই ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: imago/UIG
চঞ্চল রোগীরা
মানসিক হাসপাতালে থাকা রোগীদের অনেকে অত্যাধিক চঞ্চল থাকেন৷ তারা প্রায়ই গলা ছেড়ে গান গান এবং নাচানাচি করেন৷ ছবিতে সেরকম কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের সমাজ এদের ‘পাগল’ বলে এবং প্রকাশের তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করা এক স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: imago/UIG
বদলায়নি পরিস্থিতি
পাবনা মানসিক হাসপাতালে ১৯৯৪ সালে তোলা এসব ছবির সঙ্গে বর্তমানের পরিস্থিতির ফাঁরাক খুব একটা দেখা যায় না৷ হাসপাতালের পরিধি বাড়েনি, এখনো সেটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল৷ গত বছর তোলা হাসপাতালটির কিছু ছবি পেতে ক্লিক করুন ‘আরো’ বোতামে৷
ছবি: imago/UIG
9 ছবি1 | 9
তাঁর প্রশ্ন, ভারতের মতো এত বড় একটা দেশে মনোচিকিৎসক এবং মনোবিদের সংখ্যা এত কম কেন? স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যেখানে ৫৪ হাজার ৭৫০ জন মনোচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসা কর্মী প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র ৭ হাজার৷