ভারতের পাঞ্জাব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল নাসিম বদরের পরিবার৷ পাকিস্তানের এই নারীর মতই অভিজ্ঞতা ভারতের স্পর্শ আহুজার পরিবারের৷ তাদের পূর্বপুরুষদের জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার গল্প তুলে ধরছে প্রোজেক্ট দাস্তানের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মুভি৷
বিজ্ঞাপন
লন্ডনের বেড়ে ওঠা নাসিম বদর এতদিন তার পরিবারের কাছ থেকে শুধু ভারত থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে আসার গল্পই শুনেছেন৷ এখন তিনি দাস্তান প্রকল্পের করা এক ভার্চুয়াল ফিল্ম দেখে বুঝতে পারছেন ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় কী পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবের রূপপুর থেকে চলে এসেছিল ৭০টি পরিবার৷ নাসিমের পরিবারও ছিল ওই ৭০টি মুসলিম পরিবারের মধ্যে৷
ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাধ্যতামূলক অভিবাসনের জন্ম দেয়৷ ১২ মিলিয়ন, অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় এবং দাঙ্গায় মারা যায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ৷
নাসিমের কখনো ভারতে যাওয়া হয়নি ৷ তবে এখন দাস্তান প্রকল্পের তৈরি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ছবিটি দেখার পর রূপনগর সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেছে তার৷
ছবিটি দেখার পর তার পরিবার অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বলে জানান নাসিম বদর ৷ ‘‘এটা তাদের জীবন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের একটি বড় অংশ, তাই এই স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ’’ বলে মনে করেন নাসিম৷
একই কথা বলেন দাস্তান প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা স্পর্শ আহুজা৷ ১৯৪৭ সালে তার বাবার বয়স ছিল সাত বছর৷ সেই বয়সেই জন্মভূমি পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি৷
এনএস/এসিবি (রয়টার্স)
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷