1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত ও চীন রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করলে কী হবে?

৭ আগস্ট ২০২৫

রাশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এমন সুযোগ বন্ধ করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ রাশিয়ার তেল বাণিজ্যে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ বিশ্ববাজারে এবং চীন ও ভারতের মতো অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর জন্য কী বার্তা দিচ্ছে?

চীনের একটি তেলবাহী জাহাজ
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত ও চীন৷ ফাইল ফটোছবি: AFP

বলা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের খরচ মেটাতে রাশিয়ার প্রধান উৎস এই তেল বিক্রি৷ তাই চীন ও ভারতের উপর ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন' (নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের কারণে জরিমানা) আরোপের হুমকি দিয়েছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ যদিও এর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে চীন ও ভারত৷

দুই দেশই তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চায়৷ অ্যামেরিকার এই হুমকিকে ‘‘জবরদস্তি ও চাপ প্রয়োগ'' বলে নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং৷

চীন ভারত এখন রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা

২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক হয়ে উঠেছে চীন৷ অপরদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছে ভারত৷ জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও এখনো রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

নয়াদিল্লি আরো উল্লেখ করেছে, বৈশ্বিক তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে ওয়াশিংটন নিজেই রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনাকে সমর্থন করেছিলো৷

চোখে পড়ার মতো পরিসংখ্যান

২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা প্রায় ১৯ গুণ বাড়িয়েছে ভারত৷ অর্থাৎ দিনে এক লাখ ব্যারেল থেকে উন্নীত হয়ে ১৯ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে৷ অন্যদিকে, চীনে এই পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ, দিনে ২৪ লাখ ব্যারেল৷

লিথুয়ানিয়ার সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)-এর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ পেত্রাস কাতিনাস জানান, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা ভারত ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জ্বালানি খাতে অন্তত তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছে৷

হ্যারিস বনাম ট্রাম্প : চীনের পণ্যে করারোপে কে কতটা আলাদা?

03:18

This browser does not support the video element.

ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাজারে আলোড়ন

ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু ট্রাম্প বুধবার এক নির্বাহী আদেশে রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের একই পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন৷

এই খবরে তেলের দাম প্রায় এক শতাংশ বেড়েছে৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই নতুন শুল্ক দেশটির তেল বিল এক হাজার একশ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়াতে পারে। নয়াদিল্লি এই অতিরিক্ত শুল্ককে ‘‘অন্যায়, অযৌক্তিক ও অনুচিত'' বলে অভিহিত করেছে৷

ট্রাম্প জানিয়েছেন যে এই শুল্ক ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে৷ তবে, ভারত ও রাশিয়াকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমদানি কর নিয়ে আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে৷

বৈশ্বিক প্রভাব: তেলের দাম বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া দৈনিক পঞ্চাশ লাখ ব্যারেল তেল হঠাৎ বাজার থেকে সরিয়ে নিলে তেলের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অন্য উৎসের খোঁজে তৎপর হবে৷

তেল কার্টেল ওপেক সম্প্রতি উৎপাদন বাড়ালেও, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে স্বল্পসময়ের মধ্যে বাজারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হবে৷

ব্রিটিশ দৈনির ইনডিপেনডেন্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেন্টার ফর ইউরোপীয় পলিসি অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো আলেকজান্ডার কোলিয়ান্দর বলেছেন, ‘‘দামের উলম্ফন ঠেকাতে পঞ্চাশ লক্ষ ব্যারেল তেল দ্রুত যোগান দেয়া কোনভাবে সম্ভব নয়৷''

ভারতের বিশেষ দুর্বলতা

কাতিনাসের মতে, অ্যামেরিকার সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্য ভারতের চেয়ে চার গুণ বেশি৷ তাই নতুন অ্যামেরিকান ব্যবস্থা থেকে ‘‘অব্যাহতি পেতে পারে'' চীন৷

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ৫৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্য রয়েছে৷ ফলে চীনের বিশাল অর্থনীতি তাকে দরকষাকষির সুযোগ করে দিচ্ছে, যা ভারতের নেই৷

চলতি সপ্তাহের শুরুতে নয়াদিল্লির ওপর চাপ আবারও বাড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ বলেছেন রাশিয়া ও ভারতের ওপর তার নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য প্রভাব ‘‘তাদের মৃত অর্থনীতিগুলোকে একসঙ্গে ধ্বংস করবে৷''

ভারতের সুবিধা কমে যাচ্ছে

রাশিয়ার তেল কিনে ২০২২ সালের মতো সুবিধাও আদায় করতে পারছে না ভারত৷  তখন ব্যারেল প্রতি ছাড় ছিল ১৫ থেকে ২০ ডলার৷ এখন তা পাঁচ ডলারে নেমে এসেছে৷

যুদ্ধ সামাল দিতে অর্থভান্ডার পূর্ণ করতে আগ্রহী রাশিয়া, তাই জ্বালানি খাতে আয় বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে৷ রাশিয়ার তেলের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা তুরস্ক, এশিয়াজুড়েও বাড়ছে চাহিদা৷ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল গোপনে পুনরায় ব্র্র্যান্ডিং করে আ্যামেরিকান নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে৷

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক: কী করবে ইউরোপ?

02:25

This browser does not support the video element.

রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আঘাতে রাশিয়ার অর্থনীতি ইতিমধ্যে নড়বড়ে৷ সামরিক ব্যয় এখন জিডিপির ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে সরকার ঘোষিত নয় শতাংশের বদলে ১৫-২০ শতাংশে পৌঁছেছে। রাশিয়া দ্রুত অর্থ খরচ করছে, যা তার বাজেট ও অস্ত্র কারখানাগুলোতে মারাত্মক চাপ তৈরি করেছে৷

সেকেন্ডারি স্যাংশন রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য আরেকটি বড় আঘাত হিসেবে দেখছেন কাতিনাস৷ তিনি বলেন, সেকেন্ডারি স্যাংশন ‘‘ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়", ‘‘মার্কিন অর্থনীতিতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রবেশের সুযোগকে হুমকির মুখে ফেলে এবং বিশ্ববাজারে তাদের অন্তর্ভুক্তির কারণে ব্যাংক, পরিশোধনাগার ও পণ্য পরিবহণ সংস্থাগুলোকে ক্ষতির শিকার হতে পারে৷''

চীনের বিশেষ সুবিধা কেন?

চীনা ব্যাংকগুলো ইউয়ানেও রাশিয়ান লেনদেন প্রত্যাখ্যান করছে, মস্কোকে অস্পষ্ট মধ্যস্থতাকারী ও তৃতীয় দেশে বিকল্প পথের নির্ভর করতে বাধ্য করছে।

তবে বেইজিং তেল আমদানিকে একটি অগ্রাধিকার হিসেবে দেখে যা মূলত রাজনৈতিক চাপ থেকে সুরক্ষিত। অন্যদিকে, ভারতের জন্য ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে৷ যেমন: চাপে পড়লে কেনা কমাতে হবে কিংবা রাশিয়া থেকে ছাড়ে পাওয়া অপরিশোধিত তেল কেনা পুরোপুরি বাদ না দেয়া৷

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) কাতিনাস জানান, ভারতের দীর্ঘদিনের নীতি হলো অ্যামেরিকা, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রেখে চলা, কোনো পক্ষকে অগ্রাধিকার না দেওয়া। এই নীতিই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ছাড়ে কেনার সিদ্ধান্তের ভিত্তি৷ কারণ নয়াদিল্লি ‘‘জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থ সাশ্রয়কে অগ্রাধিকার'' দিয়েছে৷

অ্যামেরিকান ফেডারেল রিজার্ভের হিসেব অনুযায়ী, অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ১০ ডলার বৃদ্ধিতে অ্যামেরিকার মুদ্রাস্ফীতি প্রায় শূন্য দশমিক দুই শতাংশ বাড়ে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একই ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

নয়াদিল্লি-ভিত্তিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সুমিত রিতোলিয়া জানান, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে, সেক্ষেত্রে অন্তত এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

নিক মার্টিন (এসএসজি/এসিবি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ