1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত ও পাকিস্তানের জল-সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী?

৩০ আগস্ট ২০২৫

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি এখন আদালতে বিচারাধীন৷

পাকিস্তান কেটি বান্দার ২০২৫| সিন্ধু ব-দ্বীপে পরিবারের সঙ্গে জেলে হাজী করম জাট
ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত সিন্ধু নদ পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলে কৃষিকাজ এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্যছবি: Asif Hassan/AFP

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরের কোর্ট অব আরবিট্রেশন রায় দিয়েছে, ভারতের উচিত সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদীর জল বইতে দেওয়া৷ এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছে নয়াদিল্লি৷

তিন নদী, দুই দেশ আর দীর্ঘদিনের সংঘাত— ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের দিকে এক ঝলক তাকালে ঠিক এই দৃশ্যই দেখা যায়৷ সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব এই তিন নদী গত কয়েক মাস ধরেই দীর্ঘসূত্রী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু৷ পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত

২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া৷ সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত এই চুক্তি স্থগিত থাকবে৷ মে মাসে ভারত-পাক সংঘাত বন্ধ হলেও চুক্তি কিন্তু স্থগিতই রয়েছে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায়, ‘‘রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না৷''

সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার বিষয়টি এখনও খাতায়-কলমে৷ পাকিস্তানে জল আটকানোর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ যে ভারত নেয়নি, সেটি একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও প্রকাশ পেয়েছে। ইসলামাবাদও অবশ্য জানিয়েছিল, জল বন্ধ হলে ধরেই নেওয়া হবে এটা যুদ্ধের উস্কানি৷

আদালতের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ভারতের

এদিকে, পাকিস্তানের জন্য ভারতের পশ্চিম দিকের নদীগুলোর জল প্রবাহিত রাখতে হবে বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন৷ ভারতের বিরুদ্ধে এই আদালতে অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান৷

ভারতের পাল্টা দাবি, এই রায় অপ্রাসঙ্গিক৷ সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কথায়, ‘‘ভারত কখনো পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশনের বৈধতা বা প্রাসঙ্গিকতা কে স্বীকার করেনি৷ ফলে এই রায় সম্পূর্ণ ভাবে এখতিয়ার বহির্ভূত৷ ভারতের জল ব্যবহারের অধিকারে এর কোনো প্রভাব নেই৷''

তিনি আরো জানান, আদালতের এই রায় নিয়ে পাকিস্তানের বিভ্রান্তিকর দাবি ভারত মেনে নেবে না৷

সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল কতটা প্রভাব ফেলবে পাকিস্তানে?

11:56

This browser does not support the video element.

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাধান বহু দূর

পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সব রকম কূটনীতিক যোগাযোগ এখন বন্ধ৷ ফলে দ্রুত সমাধান এখনও বহু দূর৷

মনোহর পরিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ উত্তম কুমার সিনহার কথায়, জল নিয়ে এই সংকট অতিদ্রুত পরিণত হতে পারে এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক সংঘাতে৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান আদালতের এই রায়টি দেখিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন পর্যন্ত নানা সংস্থার সামনে তাদের এই জল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরবে৷ ভারত পাল্টা দাবি করবে, তাদের সার্বভৌমত্বের উপর এই রায়ের প্রভাব নেই৷ পশ্চিমাংশের নদীগুলির উপর তাদের জলবিদ্যুৎ ও সেচ পরিকাঠামো চালু করার পরিকল্পনা করবে৷''

তার দাবি, বাঁধ ও জলাধার নিয়ে দুই দেশের প্রকৃত বোঝাপড়া আদালতের রায়ের থেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তা কার্যত অসম্ভব৷ সেই সঙ্গে, পাকিস্তানকেও দেখাতে হবে যে সন্ত্রাসবাদকে তারা একেবারেই মদত দেয় না

পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে পারে ভারত

পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া মনে করেন, আগামী বছরগুলিতে জল নিয়ে পাকিস্তানের উপর আরো চাপ বাড়াতে পারে ভারত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আগামী পাঁচ বছরে এই নদীগুলিতে খাল কেটে, জলাধার তৈরি করে পাকিস্তানকে আরো চাপে ফেলতে পারে ভারত৷'' তিনি এ-ও উল্লেখ করেন, বাঁধ নির্মাণ, বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চুক্তি সংশোধন, এমনকি সমাপ্তিকরণেরও অনুমোদন রয়েছে৷ তার মতে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে কতটা দমন করতে পারে, তার উপরেই নির্ভর করবে জলের প্রবাহ৷

সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাবের উপর নির্ভরশীল পাকিস্তান

পানীয় জল ও কৃষিকাজের জন্য এই তিন নদীর উপর নির্ভরশীল পাকিস্তানের এক বড় অংশ৷ সে দেশের কৃষির মূল কাঠামো এই নদীর জল৷ দক্ষিণ এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস ও ইকোনমিক বিশেষজ্ঞ মহেন্দ্র লামার কথায়, ‘‘জলসম্পদ বণ্টনের জন্য সামরিক সংঘাতের বদলে কূটনীতি প্রয়োজন৷ সেই সঙ্গে সহযোগিতা৷''

সম্মুখ কূটনীতি না নেপথ্য কূটনীতি, প্রয়োজন কোনটি

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ উত্তম কুমার সিনহা তিনটি কার্যকরী পন্থার দিকে ইঙ্গিত করেন৷ তার কথায়, ‘‘প্রথমেই একটি সীমিত তথ্য সংক্রান্ত সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করা৷ সেই সঙ্গে প্রকল্প নির্দিষ্ট অডিট এবং নেপথ্য কূটনীতির সাহায্যে মরসুম অনুযায়ী জলবণ্টন বা পলি অপসারণ নিয়ে একমত হতে পারে৷'' তার দাবি, এই ধরনের বাস্তব ও যুক্তিসম্মত পদক্ষেপ ছাড়া সামরিক সংঘাত তো ঘটবেই, নদীগুলির পরিস্থিতিও বিচার করা কঠিন হয়ে যাবে৷ যা সাধারণ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে ক্রমশ৷

মুরলী কৃষ্ণণ/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ