সিমলা চুক্তির ৪০ বছর
২ জুলাই ২০১২ভারত-বাংলাদেশের যৌথবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তান৷ স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে৷ ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা ভারতের হাতে যুদ্ধবন্দি হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সর্বাধিক৷ ৫৬০০ বর্গ কিলোমিটার পাকিস্তানি ভূখণ্ড ভারতীয় সেনার দখলে চলে যায়৷ শোচনীয় অবস্থা তখন পাকিস্তানের৷ খণ্ডিত, যুদ্ধবিধ্বস্ত৷ তৎকালীন পাক-প্রধানমন্ত্রী জলফিকর আলি ভুট্টো অস্থির, অশান্ত৷
ঐ ঐতিহাসিক ঘটনার ফলশ্রুতি হিসেবে জয়-পরাজয়ের চূড়ান্ত নথিপত্র এবং দলিলে সই করতে ১৯৭২ সালে সিমলায় বসে ভারত-পাকিস্তান শান্তি বৈঠক৷ ছুটে যান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো৷ পাক-যু্দ্ধবন্দিদের মুক্তি দিতে দরবার করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে৷ তার বিনিময়ে ভুট্টো কথা দিয়েছিলেন, দু'দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে তিনি সর্বোতভাবে প্রয়াসী হবেন৷
তা সত্ত্বেও, দু'দেশের দীর্ঘ আলোচনা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মুখে৷ শান্তি চুক্তি অধরা৷ ২রা জুলাই রাতে ভুট্টো একা আসেন ইন্দিরা গান্ধীর কাছে শেষ অনুরোধ নিয়ে৷ মৌখিক আশ্বাস দেন কাশ্মীর ইস্যু শান্তিপূর্ণ মীমাংসার৷ ভারত যেন তাঁর ওপর ভরসা রাখেন৷ অবশেষে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সই হয় সিমলা চুক্তি৷ ক্যালেন্ডারের হিসেবে সেটা ছিল ৩রা জুলাই ১৯৭২৷
চুক্তির মধ্যে ছিল, ৭১-এর যুদ্ধের পর কাশ্মীরে দু'দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখা উভয়পক্ষ মেনে নেবে৷ বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকবে দু'দেশের সেনাবাহিনী৷ শেষে এই নিয়ন্ত্রণ রেখাকেই মেনে নেয়া হয় আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে৷
সে সময় উপস্থিত ইন্দিরা গান্ধীর উপদেষ্টা ও আধিকারিকরা পরে বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী ভুট্টোর কূটবুদ্ধি ধরতে পারেননি৷ লিখিতভাবে আশ্বাস না নিয়ে বিশ্বাস করেছিলেন ভুট্টোর মুখের কথায়৷ তারপরের ঘটনা আজ ইতিহাস৷ কেউ কথা রাখেনি৷ কেউ কথা রাখেনা এই জটিল রাজনৈতিক কৌশলগত দুনিয়ায়৷ সিমলা শান্তি চুক্তি হিমঘরে৷ তারপর হয়েছে কারগিল যুদ্ধ৷ চলেছে ব-কলমে ছায়া যুদ্ধ৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ