ভারত ও পাকিস্তানের একদল তরুণ শিল্পী, যাঁরা নিজেদের ‘ভয়েস অফ রাম' বলে থাকেন, তাঁরা দুই দেশের ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একত্রে দু'টি দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছেন৷ ভিডিওটি ‘ভাইরাল' হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷
বিজ্ঞাপন
১৩ জন শিল্পীর সকলেই তরুণ – বা তরুণী; এঁদের মধ্যে চারজন পাকিস্তানের, বাকিরা ভারতের নাগরিক৷ এঁরা একটি ফেসবুক গোষ্ঠী৷ পর পর দু'টি জাতীয় সংগীত ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ' ও ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে' ছত্র অনুযায়ী গেয়েছেন একক – বা কখনো সখনো যুগ্ম শিল্পীরা বিভিন্ন লোকেশানে, যার মধ্যে রেকর্ডিং স্টুডিও থেকে শুরু করে পাহাড় কিংবা সমুদ্রসৈকত, সব কিছুই পড়ে৷ সকলেরই সুন্দর গলা, তারুণ্য ও আদর্শে ভরা মুখ-চোখ৷
উভয় দেশের মধ্যে যে তিক্ততা ও বৈরিতা বিরাজ করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই শান্তি সংগীত এক সাহসী, শুধু সাহসী কেন, হয়ত দুঃসাহসী প্রচেষ্টা৷ ভিডিওটির প্রধান চলচ্চিত্রকার রাম সুব্রামানিয়াম হয়ত সেই কারণেই বলেছেন, বহু মানুষ শান্তির পক্ষে গলা তুলতে ভয় পান; তাঁদের ভীতি দূর করাই এই ভিডিওর উদ্দেশ্য৷
দু'দেশেই এমন মানুষ আছেন, যাদের কাছে এ ধরনের শান্তির আহ্বান প্রায় দেশদ্রোহিতার তুল্য বলে গণ্য হবে৷ স্বভাবতই ভিডিওটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলকালাম শুরু হয়ে গেছে৷ এক্ষেত্রে যে ভয়েস অফ রাম-এর প্রযোজক বা শিল্পীরা আর্ট, অর্থাৎ শিল্পের দোহাই তুলে রেহাই পাবেন, এমন নয়৷ ভিডিওর গোড়াতেই একটি মেসেজে বলা হয়েছে: ‘আমরা যখন শিল্পকলার জন্য সীমান্ত খুলে দিই, তখনই শান্তি আসে৷' ভিডিওর শেষের বাণীটি কিন্তু হলো: ‘চলুন আমরা শান্তির জন্য একসঙ্গে দাঁড়াই৷' এক্ষেত্রে মুশকিল এই যে, এই ভিডিওর মর্ম ও তার অর্থ বা তাৎপর্য প্রধানত রাজনৈতিক, সংগীত তার শুধু বাহন মাত্র৷ সীমান্ত খুলে দেবার আহ্বান তো আর শুধু শিল্পকলার জন্য হতে পারে না৷
সব সত্ত্বেও এই ভিডিও দু'দেশের তরুণ প্রজন্মকে আবার বিশ্বের দৃষ্টিতে ফিরিয়ে এনেছে৷ কাশ্মীর সংঘাত বা পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে এর মানবিক দূরত্ব চোখে পড়ার মতো; হৃদয়গ্রাহী এদের সরলতা ও শান্তির সজল আশা৷
এসি/ডিজি
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷