বন্দি প্রত্যর্পণ আসন্ন
২৪ জুলাই ২০১৩বাংলাদেশে নির্বাচন দোরগড়ায়৷ ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি, স্থলসীমা চুক্তি এবং বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঘরোয়া ঐকমত্য না হওয়ায়, তা ঝুলে আছে৷ আর এর জন্য শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে ক্রমশই৷ হাসিনা বিরোধী প্রচারে বিরোধীদের হাত তাতে শক্ত হয়েছে৷ নির্বাচনের আগে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দিলে এবং প্রতিশ্রুত অন্য চুক্তিগুলি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতিতে শেখ হাসিনা সরকার পাবে বাড়তি সুবিধা৷
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকারের আপত্তিতে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন এখন অথই জলে৷ তিনি বলেছেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ যদি তিস্তার জল বণ্টনে রাজি থাকে তাহলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, আঞ্চলিক দল ভারতের বিদেশ নীতিকে জিম্মি করে রেখেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনৈক মন্ত্রীর মন্তব্য করেছেন, হাসিনা সরকারকে জেতাতে রাজ্যের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে হবে, ওবামাকে জেতাতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিকে সমর্থন করতে হবে, এটা হয় না৷ স্থলসীমা চুক্তিতেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তি৷ তাঁর মতে, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ হারাবে ১০ হাজার একর জমি৷ এই চুক্তি অনুসারে, দু'দেশের ১৬২টি ছিটমহল হস্তান্তরিত হবে, যার মধ্যে ৫১টি ভারতে এবং ১১১টি বাংলাদেশে৷
সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিবদের যে বৈঠক হয়ে গেল, তাতে দু'দেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ আসামের উলফা জঙ্গি অনুপ চেটিয়াকে তুলে দেবে ভারতের হাতে এবং ভারত তুলে দেবে এদেশে লুকিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্দেহভাজন দুই হত্যাকারী এবং অন্য অপরাধে আটক সুব্রত বাইন ও সাজ্জাদ হোসেনকে৷
আওয়ামী লীগ সরকারের অভিযোগ, বাইন ও সাজ্জাদ দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যার চক্রান্তে জড়িত৷ ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক জনসভায় গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত বাইন৷ গত বছর কলকাতায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় জাল নোট, বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র রাখার এবং অনুপ্রবেশের অভিযোগে৷ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয় দিল্লির তিহার জেলে৷
উলফা জঙ্গি অনুপ চেটিয়া সেই ১৯৭৭ সাল থেকে আছেন বাংলাদেশে৷ প্রথমে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন, পরে অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা শাখার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে তিনি ভারতে যেতে রাজি হন৷ কিন্তু বন্দি প্রত্যর্পণের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় উভয়পক্ষ থেকে বলা হয় যে প্রত্যর্পণের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মুস্তাক আহমেদের সঙ্গে দেয়া-নেয়ার কথা অস্বীকার করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ঢাকার তরফে চাপ সৃষ্টির প্রশ্ন আছে৷
দু'দেশের স্থলসীমা চুক্তি সই হয়েও তা আটকে আছে৷ বলা বাহুল্য, বিলটি সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাশ করাতে হবে, যেটা সরকারের পক্ষে সহজ নয়৷ এই সব স্পর্শকাতর বিষয়গুলি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা টানাপোড়েন যে চলছে, তা অস্বীকার করা যায় না৷