1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত ও বাংলাদেশে পানীয় জলে আর্সেনিকের দূষণ মাত্রা বিপজ্জনক

৩ জানুয়ারি ২০১১

ভারত ও বাংলাদেশে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে বিজ্ঞানীরা শঙ্কিত৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি৷ ফলে বাড়ছে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ৷

পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরাছবি: AP

ভারত ও বাংলাদেশে পানীয় জলে আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়া এক মারাত্মক চেহারা নিয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী প্রতি লিটার পানীয় জলে যেখানে ১০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা সেখানে ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্য সব উন্নয়নশীল দেশে মাটির নীচের জলে আর্সেনিকের দূষণ মাত্রা তার থেকে অনেক গুণ বেশি৷ আর্সেনিক হলো এক ধরণের রাসায়নিক যৌগ৷ হিমালয়ের শিলাস্তরে সঞ্চিত আর্সেনিক হাজার হাজার বছর ধরে প্রবাহিত হয়ে মাটির নীচের জলকে দূষিত করেছে৷ ভারত সরকার এর প্রতিকারের যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে অনেকটা ভাল অবস্থায় আছে৷

স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের জলে প্রথম আর্সেনিকের সমস্যা ধরা পড়েছিল ১৯৮২ সালে মাত্র একটি জেলায়৷ ২০১০ সালে এসে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি জেলার মধ্যে ৯টি জেলা আর্সেনিক দূষণের শিকার৷ এর মধ্যে ৬টি জেলা মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার অবস্থা বেশ খারাপ৷ সেই সব জেলায় আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক৷ শুধু তাই নয়, অনেক নলকূপে আগে যেখানে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক ছিলনা, সময়ের ব্যবধানে সেখানেও আর্সেনিক ধরা পড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ আর্সেনিক বিপদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷

যাঁরা মাটির তলার অগভীর স্তরের জল পান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জল পরীক্ষা করা অপরিহার্যছবি: AP

আর্সেনিক দূষণে কী ধরণের রোগ হতে পারে বা সেইসব রোগের লক্ষণ কী ? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের অধিকর্তা দীপঙ্কর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বললেন, ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ মিলিয়ে ১৪টি দেশ আর্সেনিকে ভুগছে এবং এরা সবাই ক্রনিক আর্সেনিকের শিকার৷ আর্সেনিকের প্রথম লক্ষণ ফুটে ওঠে চামড়ায়৷ চামড়ায় ফুটে উঠলে বুঝতে হবে ভেতরটা তা ঝাঁঝরা করে দিয়েছে৷আর্সেনিক কোন রোগকে ছাড়েনা৷ এর শেষ পরিণাম ক্যান্সার৷ আগে মনে হতো শুধু স্কিন ক্যান্সারই বুঝি হয়৷ এখন জানা গেছে, এ থেকে লিভার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারও হতে পারে৷ তার থেকেও ভয়ের কারণ , মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মা যদি আর্সেনিক দূষিত জল পান করে থাকেন, তাহলে শিশু যখন বড় হবে তখন তার ফুসফুসে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা থেকে যায়৷ কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গঞ্জে ক্যান্সারের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে.৷

আর্সেনিক দূষণ পরিস্থিতিটা বেশ ভয়াবহ৷ স্কুল অব এনভায়রেনমেন্টাল স্টাডিজের সমীক্ষা বলছে, লক্ষ লক্ষ লোক আর্সেনিকজনিত ক্যান্সারে মারা যাবে৷পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে যাদের মধ্যে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল ১০ বছর বাদে তাঁদের ২০ শতাংশ মারা গেছে৷ আর যারা ভুগছে তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্যান্সার আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ এটাকে গরিবের রোগ বলা হয়ে থাকে৷ কারণ দেহে অপুষ্টি থাকলে রোগ আরো জেঁকে বসে৷

ভারত ও বাংলাদেশে পানীয় জলে আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়া এক মারাত্মক চেহারা নিয়েছেছবি: picture alliance/dpa

এর প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ জল পরীক্ষা করা৷ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা যায় কিংবা পরীক্ষার জন্য কিট পাওয়া যায়৷ যাঁরা মাটির তলার অগভীর স্তরের জল পান করেন তাঁদের ক্ষেত্রে জল পরীক্ষা করা অপরিহার্য৷ দ্বিতীয়ত আর্সেনিক সম্পর্কে জন সচেতনতা বাড়ানো৷ সরকার সমস্যাটা উপলব্ধি করার পর যুদ্ধকালীন অবস্থার ভিত্তিতে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিৎ ছিল তা তাঁরা করেননি৷ বাংলাদেশের অবস্থা বেশ খারাপ বলে মনে করেন দীপঙ্কর চক্রবর্তী৷ কারণ বাংলাদেশের অবস্থান ব-দ্বীপের শেষের দিকে৷ অনেক বেশি লোক আক্রান্ত৷ বাংলাদেশ সমীক্ষার রিপোর্টে সেকথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ তবে আশার কথা, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সমস্যাটাকে অনেকটা আয়ত্তে এনেছেন, যেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার পারেনি বলে তাঁর অভিমত৷ প্রথমদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমস্যাটা মানতেই চায়নি৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার প্রথম থেকেই সচেতন হয়ে মানুষজনকেও সচেতন করে তুলেছে৷ ফলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম সেভাবে আর আর্সেনিক জল পান করছেনা৷ আর্সেনিকের বিষক্রিয়া প্রসঙ্গে দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানালেন নেপোলিয়নের মৃত্যুর কারণ নাকি এই আর্সেনিক৷ তাঁকে আর্সেনিক বা চলতি কথায় সেঁকো বিষ দিয়ে শ্লো পয়জন করা হয়েছিল৷

প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ