আনুষ্ঠানিক নাম গঙ্গা বিলাস। বিলাসবহুল জলযানে নদী-বিহারের ব্যবস্থা। ভারত ও বাংলাদেশের ২৭টি নদী দিয়ে যাবে ওই বিলাসবহুল জলযান। পথে পড়বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। পড়বে সুন্দরবনও কাজিরাঙার মতো বনভূমি। এ সবই দেখতে দেখতে চলবেন জলযানে সওয়ার হওয়া মানুষ। আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন এই বিলাসবহুল নদী-বিহার যাত্রার। এটাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী-বিহার।
গঙ্গা বিলাস হলোএকটি সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ। সফর পুরো শেষ করতে লাগবে ৫০ দিন। তবে একটানা সফর না করে কেউ তার নিজের পছন্দমতো ভাগেও সফর করতে পারবেন। তিন ভাগে সফর করা যাবে।
অত্যাধুনিক জলযান
এই জলযানে মোট ৮০ জন ভ্রমণ করতে পারবেন। ১৮টি বিলাসবহুল স্যুইট আছে। ডেক-এ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি পরিবার বা যাত্রীর জন্য আলাদা অ্যাটেনডেন্ট থাকবে। বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করার জন্য একাধিক শেফ থাকবেন। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কখনো আউল-বাউল, কখনো লোকগীতি, কখনো বা রাজস্থানি নাচ। কর্মকর্তাদের দাবি, এটা স্টেট অফ আর্ট প্রযুক্তির জলযান।
স্পা, জিম, ম্যাসাজ রুম থেকে শুরু করে অনেক সুযোগসুবিধা থাকবে এই প্রমোদতরীতে। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ফাঁকে ফাঁকে বই পড়ার সুযোগ থাকবে। থাকবে কনফারেন্স রুমও।
যাত্রাপথ
গঙ্গা বিলাসের যাত্রা শুরু হবে বারাণসী থেকে। সেখানে গঙ্গা আরতি দেখার পর চলতে শুরু করবে প্রমোদতরী। গাজিপুর, রামনগর, বক্সার হয়ে অষ্টম দিনে পৌঁছবে পাটনায়। ফারাক্কা ও মুর্শিদাবাদ হয়ে সুন্দরবন ঘুরে ২০ তম দিনে পৌঁছবে কলকাতা। তার পরের দিনই তা বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করবে।
বাংলাদেশে এক হাজার একশ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেবে এই প্রমোদতরী। সোনারগাঁও যাবে, ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখানো হবে। ঢাকা ও টাঙ্গাইল ছাড়াও প্রমোদতরী যাবে বাগেরহাট, হাড়বাড়িয়া, কটকা, মরেলগঞ্জ, বরিশাল, মেঘনাঘাট, সিরাজগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, চিলমারি ও রংপুরে।
প্রমোদতরী ভ্রমণ কারো কাছে সহজে দেশ-বিদেশ ঘুরার সুযোগ, কারো কাছে উপভোগের বিলাসী ব্যবস্থা৷ কেউ পছন্দ করেন, কেউবা অপছন্দ৷ অবকাশ কাটানোর জন্য ক্রুজ ভ্রমণ দিনকে দিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ এর ভাল দিক যেমন আছে, তেমনি আছে খারাপও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Warneckeআজকে স্পেনের পালমায় তো কাল বার্সেলোনায়, পরসু মার্সেইতে৷ এমন ভ্রমণের জন্য আপনার বারবার স্যুটকেস গোছানোর দরকার নেই৷ ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরীর ভাসমান হোটেলই আপনাকে নিয়ে যাবে দর্শনীয় সব স্থানে৷ পর্যটকরা দেখতে পাবেন বিশ্বখ্যাত নগরগুলো, চেখে দেখতে পারেন খাবার, আছে স্থানীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য উপভোগের সুযোগ৷ প্রতিদিনই ঘুমাতে পারছেন একই বিছানায়৷ প্রমোদ তরীর চেয়ে ঝামেলাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ আর কোথায় মিলবে?
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaeneএকটা সময়ে প্রমদতরীতে ভ্রমণে বের হতেন বয়স্করাই৷ চাকরীশেষে অবসর জীবনে সমুদ্রে ভেসে আয়েশ করে ঘুরে বেড়াতেন তারা দেশ বিদেশে৷ কিন্তু দিনকে দিন ক্রুজ ভ্রমণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণদের কাছেও৷ আধুনিক এসব জাহাজে থাকে সব বয়সীদের বিনোদনের ব্যবস্থা৷ খেলাধুলা, বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে উপভোগের নানা ব্যবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Warneckeঅতিরিক্ত ভিড় যাদের পছন্দ নয়, তারা ভিড়ে যেতে পারেন কোন অভিযাত্রী দলের জাহাজে৷ প্রচলিত ক্রুজগুলোর চেয়ে সেগুলো আলাদা, আকারে ছোট আর পরিবেশবান্ধবও৷ কিন্তু আপনাকে নিয়ে যাবে উত্তর মেরু কিংবা এন্টার্কটিকার দুর্গম উপকূলে৷ তবে এর জন্য টাকাও কিছুটা বেশি গুণতে হবে৷
ছবি: Imago/blickwinkelবড় ট্যুর অপারেটরদের আয়োজনে আপনার প্রয়োজনীয় কোন কিছুরই কমতি থাকে না৷ থাকে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয়র ব্যবস্থা৷ দাম প্যাকেজেই অন্তর্ভুক্ত থাকে৷ খরচও তুলনামূলক কম৷
ছবি: picture-alliance/dpaতবে চিন্তা একটাই, পরিবেশ দূষণ৷ যে কারণে পরিবেশবিদরা এই ধরনের ক্রজের ঘোর সমালোচক৷ বিশ্বের বেশির ভাগ প্রমোদতরী চলে অপেক্ষাকৃত বিষাক্ত জ্বালানি তেলে৷ তবে অনেক জাহাজ কোম্পানি তরলীকৃত গ্যাস, হাইব্রিড ইলেকট্রিক সিস্টেমের মতো তুলনামূলক কম ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহার শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/H. Baesemannজাহাজগুলো অনেক সময়ই নোঙ্গর করে বড় শহরগুলোর তীরে৷ যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তৈরি হয় বাড়তি চাপ৷ বন্দরে এসব জাহাজ চালু রাখতে হয় মেরিন ডিজেলের মাধ্যমে৷ যা গাড়িতে ব্যবহৃত ডিজেলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/H. Peterswaldএকটি জাহাজ কোন একটি শহরে ভিড়লে কয়েক হাজার নতুন পর্যটকের চাপ সামলাতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদেরকে৷ আর তা যদি ইতালির ভেনিস বা ক্রোয়েশিয়ার ডুবরোভনিকের মত ছোট আকারের হয় তাহলেতো কথাই নেই৷ রাস্তা, দর্শনীয় স্থানগুলো গিজগিজ করতে থাকে পর্যটকের ভিড়ে৷ কিছু শহরের কর্তৃপক্ষতো স্থানীয়দের প্রতিবাদের এমন জাহাজ আসার অনুমোদনই কমিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholzক্রুজ জাহাজের বেশিরভাগই ইতালি, মালটা আর বাহামাতে নিবন্ধিত৷ কেন জানেন? এইসব দেশে করের হার কম৷ এতে মুনাফা বেশি হয় ক্রজ জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের৷ কিন্তু তার যথাযথ ভাগ পান না কর্মচারীরা৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিষেবা কর্মীদের বেতন জার্মানির ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/J. Effner এরপর ধুবরি, গুয়াহাটি, তেজপুর হয়ে ডিব্রুগড়। সেখানেই যাত্রা শেষ।
কত লাগবে?
সূত্র জানাচ্ছে, ১২ হাজার ২৮০ ডলার থেকে প্যাকেজ শুরু হচ্ছে। ভারতীয় মুদ্রায় ১০ লাখ ১৫ হাজার ৩১০ টাকা। স্যুইট নিলে তার জন্য অনেক বেশি অর্থ লাগবে। দুজন মিলে থাকলে জনপ্রতি ৩২ হাজার ১৮০ ডলার। টাকার হিসাবে ২৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৪২ টাকার মতো। আর একা একটি স্যুইটে থাকসে ৫৪ হাজার ৬৫৫ ডলার বা ৪৫ লাখ ১৮ লাখ ৮৭৫ টাকা দিতে হবে। স্যুইটে যারা থাকবেন, তাদের জন্য বিশেষ খাবরের ব্যবস্থা থাকবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, গঙ্গা বিলাস ওয়েবসাইট)