ভারত-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
২৮ জানুয়ারি ২০১৪![Grenzkonflikt Indien China Ladakh](https://static.dw.com/image/16793207_800.webp)
জাপানি সম্রাট আকিহিতোর পর পরই দিল্লিতে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে৷ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে ধারাবাহিকভাবে ভারত ও জাপানের একে অপরের আরো কাছাকাছি আসাটা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে৷ ২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংসহ ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন৷ যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি হিসেবে চীনের কথিত ‘‘সম্প্রসারণবাদ’’, যাভারত ও জাপানের কৌশলগত নীতিকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করার পক্ষে অপরিহার্য৷
জাপনি প্রধানন্ত্রীর সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, চীনের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আর ভারতের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক অবস্থানগত দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে৷ তাই ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় জোর দেয়া হয় এশিয়ার নিরাপত্তার ওপর৷ দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠকে সমুদ্র জলপথের নিরাপত্তা এবং ভারত-মার্কিন নৌ-মহড়ার বিষয়ে উভয়দেশ একমত হয়৷ চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সম্ভাব্য পরিণাম, উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি, দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সমুদ্র, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরানএবং ইরাক নিয়ে মত বিনিময় হয়৷ বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা দু’দেশের মধ্যে এক স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত ইস্যু৷ পরমাণু শক্তির সামরিকীকরণ জাপানের জাতীয় নীতির পরিপন্থী৷ তবে জাপানি মুখপাত্রের মতে,এবিষয়ে দু’দেশের মতের ব্যবধান অনেক কম করা সম্ভব হয়েছে৷পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধে ভারতের রিপোর্ট কার্ড মোটামুটি সন্তোষজনক বলে মনে করে জাপান৷ হতে পারে কাকতালীয়, কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসে সামরিক কুচকাওয়াজে পরমাণু অস্ত্রবহনকারি অগ্নি-৫ ক্ষেপনাস্ত্র সামিল না করার পেছনে কী এটাই কারণ ছিল?
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পি. কে দে জাপানের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে মনে করেন,চীন আঞ্চলিক সংঘাতের এক কারণ হয়ে উঠবে যদি না ভবিষ্যতে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এশিয়ায় সামরিক সম্প্রসারণবাদ রুখতে ভারত-জাপান কৌশলগত সম্পর্ক সেক্ষেত্রে অপরিহার্য৷ উল্লেখ্য, পূর্ব চীন সমুদ্রের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে প্রতিবেশি চীনের সঙ্গে জাপানের বিরোধ একটা বিস্ফোরক স্তরে গিয়ে পৌঁচ্ছে৷ ঐ দ্বীপপুঞ্জ বসতিহীন হলেও তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ৷ জাহাজ চলাচলসহ ঐ এলাকার জলপথ নিজের বলে দাবি করে চীন তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের মুখে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ? দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণ যাই হোক ভারত-জাপান সম্পর্কে হেরফের হবেনা৷ জাপানি প্রতিনিধিদলের এক সদস্য বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে বলেছেন এক প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব৷ তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলি খুবই অভিজ্ঞ৷ পাশাপাশি ড. মনমোহন সিং সম্পর্কে শিনজো আবের মন্তব্য ‘‘উনি আমার মন্ত্রগুরু’’৷ অর্থনৈতিক সহযোগিতা মধ্যে আছে মূলত পরিকাঠামো৷ যেমন, দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর, মুম্বই-আমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্প ইত্যাদি৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবের এটা দ্বিতীয় সফর৷ প্রথমবার তিনি ভারতে এসেছিলেন ২০০৭ সালে৷