১৩৫ দিন ধরে পদযাত্রা করে কশ্মীরের লালচকে ভারত-জোড়ো যাত্রা শেষ করলেন রাহুল গান্ধী। রাহুল কি মানুষের আস্থা পেলেন?
বিজ্ঞাপন
জওহরলাল নেহরু তার মেয়ে ইন্দিরাকে জেলে থাকার সময় ভারত চিনিয়েছিলেন। তার সেই ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া আজও অন্যতম বেস্টসেলার। রাহুল গান্ধী তার প্রপিতামহের লেখা বই ভালো করে পড়েছেন। কিন্তু রাজনীতি তো পুঁথির পড়া নয়, রাজনীতিতে মানুষের কাছে যেতে হয়, তাদের পাশে পেতে হয়। তাদের কথা জানতে হয়। এতদিন রাহুল গান্ধী রাজনীতিটা করে এসেছেন পার্ট টাইম জব হিসাবে। জন্মদিনে অথবা মন চাইলেই ছুটি কাটাতে চলে গেছেন ইউরোপে। প্রতিবারই বিজেপি-র খোঁচা হজম করতে হয়েছে কংগ্রেসকে। পাপ্পু (এই নামেই বিজেপি ডাকে তাকে) কোথায়, এই প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে জেরবার হয়েছেন নেতারা।
কংগ্রেসের একাল-সেকাল
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ২০১৯-এর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে দলটি৷ ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসার গল্প নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিষ্ঠা
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগে ১৮৮৫ সালে বোম্বে, অর্থাৎ আজকের মুম্বই শহরে জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস৷ তৎকালীন বৃটিশ শাসকের সাথে সাধারণ ভারতীয় জনতার সংলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে কংগ্রেস৷ প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী উমেশচন্দ্র বনার্জী৷ তখন দলের প্রতীক ছিল চরকা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস৷ দলটি ছিল নানা মতের মিলনমেলা৷ একদিকে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ’র মধ্যপন্থা, বিপরীতে ঋষি অরবিন্দ, লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক ও সুভাষচন্দ্র বসু’র চরমপন্থি জাতীয়তাবাদ — দলটি যেন দেশের মানুষের মতোই বিচিত্র, বহুমুখী৷
ছবি: picture alliance/AP Images
মতবিরোধ এবং সুভাষ বসুর দলত্যাগ
গান্ধী ও সুভাষের মধ্যেও মতবিরোধ ছিল৷ গান্ধী মনোনীত প্রার্থী, পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষ৷নিরস্ত্র আন্দোলন না সশস্ত্র আন্দোলন — কোন পথে লড়বে কংগ্রেস? এই প্রশ্নে উত্তাল দলের অভ্যন্তর৷ মতাদর্শগত টানাপড়েনের মুখে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ৷ কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন৷
ছবি: Public Domain
দাঙ্গা
ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছিল, তার ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা৷ ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলীম লীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক অঞ্চলের দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক চাপ বাড়লে কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়৷ ৪০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান ও লক্ষাধিক হন গৃহহীন৷ আস্তে আস্তে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তৈরি হতে থাকে ভারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
কংগ্রেস ও দেশভাগ
দাঙ্গার দগদগে ঘা নিয়েই ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ তবে অখণ্ড ভারত থাকেনি৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় দেশ, জন্ম নেয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান৷ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন গান্ধীবাদী জওহরলাল নেহরু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন গান্ধী
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার সদস্য, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী৷ গান্ধী বেঁচে থাকাকালীন পাকিস্তান নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভার মতো কিছু গোষ্ঠী ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়৷ গান্ধীর মৃত্যুকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে নেহরু বিভিন্ন চরমপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/K. Gandhi
নেহরুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ
জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়৷ ১৯৬৪ পর্যন্ত দল ও দেশের নেতৃত্ব দেন নেহেরু৷ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে পরিচিত নেহরু ‘জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ও ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
ছবি: AP
ইন্দিরার হাত ধরে পরিবারতন্ত্রের শুরু
নেহরু-কন্যা ইন্দিরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ অবধি তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ইন্দিরা৷ তবে ১৯৫৯ সালেই কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী৷ ১৯৬৬ সালে তাঁরও মৃত্যু হলে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/united archives
জরুরি অবস্থায় কংগ্রেস
১৯৭৫ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগে সারা দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওঠে ইন্দিরা-বিরোধী আওয়াজ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা৷ জরুরি অবস্থার শেষে পুনর্নিবাচনে কংগ্রেস হেরে যায়৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
নতুন প্রতীক, নতুন আঙ্গিকের কংগ্রেস
১৯৫১ সাল পর্যন্ত দলের প্রতীক ছিল চরকা৷ ১৯৫২-৭১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতীক ছিল হাল ও বাছুর৷ ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ইন্দিরার নতুন দল কংগ্রেস (আই)-এর প্রতীক হয় হাত৷ পরে তা হয় একত্রিত কংগ্রেসের প্রতীক৷ বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতীক ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে ডান হাত৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস৷ পুত্র সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় পুত্র রাজীবকে৷
ছবি: AP
ইন্দিরার প্রয়াণ, রাজীবের আগমন
১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের ঠেকাতে ইন্দিরা শুরু করেন ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’৷ স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে৷ সে বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী ভারতের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/Sven Simon
রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে চরমপন্থি তামিল গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর রোষের মুখে পড়েন৷ ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রচার করার সময় এলটিটিই কর্মীদের আত্মঘাতী বোমায় মারা যান রাজীব৷ ফলে আবার নেতৃত্বের সংকটে পড়ে কংগ্রেস৷
ছবি: Getty Images/AFP
পরিবারতন্ত্রে সাময়িক ছেদ
রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিংহ রাও৷ পাশাপাশি চলতে থাকে রাজীব গান্ধীর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনার প্রস্তুতি৷ বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট সরকার৷ ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
ক্ষমতায় আসা যাওয়া
২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি সোনিয়া৷ সেই দায়িত্ব পান মনমোহন সিং৷ কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ইউপিএ জোট সরকারের সাথে জুড়তে থাকে ‘টু-জি মামলা’ বা কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ৷ ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসন জিতে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৭ সালের শেষে সোনিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নিলে দলের নেতৃত্ব নেন রাজীব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল৷
ছবি: Reuters/B. Mathur
দলের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী
২০১৩ সালে উপ-সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আগমনের পথ ধরেছিলেন রাহুল৷ ২০১৪’র নির্বাচনে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভরাডুবি হয়৷ এর জন্য তাঁর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করেন অনেকে৷ তবে ২০১৯ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস৷
ছবি: IANS
15 ছবি1 | 15
ভোট এলে কয়েকটা জনসভা করা, মাঝেমধ্যে লোকসভায় হঠাৎ কিছু জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল রাহুলের রাজনৈতিক বিচরণ। সেই রাহুলই গত ১৩৫ দিন ধরে কন্যাকুমারী থেকে ভারত-জোড়ো যাত্রা করে পায়ে হেঁটে পৌঁছালেন কাশ্মীর। ১২টা রাজ্য ও দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে তিন হাজার ৯৭০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পেরিয়েছেন রাহুল।
হাঁটতে হাঁটতে তার দাড়ি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। পদযাত্রায় তাকে দেখা গেছে প্যান্টের উপরে একটা হাফ হাতা টি শার্ট পরেছেন তিনি। প্রবল শীতের মধ্যেও গরম পোশাক দূরস্থান, ফুলশার্টও পরেননি। কেন? রাহুল বলেছেন, ''আমি যখন মধ্যপ্রদেশ পৌঁছালাম, তখন তিনটি বাচ্চা মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো। তাদের গায়ে ছেঁড়া পোশাক। তারা শীতে কাঁপছিল। সেদিনই ঠিক করলাম, শীতে শরীরে কাঁপন ধরার আগে পর্যন্ত গরম জামা পরব না। আমি ওদের জানাতে চাই, ওদের সঙ্গে আছি।'' রাহুলের বক্তব্য, ''আমি গরম পোশাক পরলাম কিনা, সেটা বড় ব্যাপার নয়, বড় বিষয় হলো, এই বাচ্চারা, এই গরিব মানুষেরা কেন গরম জামা পরতে পারবেন না?''
অবশেষে এক রাজনীতিক রাহুলের দেখা পাওয়া য়াচ্ছে, যিনি মানুষের পাশে থেকে, তাদের কথা শোনার জন্য পদযাত্রা করেন। দেখা করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তার এই দীর্ঘ পদাত্রায় সামিল হন হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী, সেই সঙ্গে বেশ কিছু মানুষ, কেউ সাধারণ, কেউ বা প্রতিষ্ঠিত। রাহুল ১১৩টা স্ট্রিট কর্নার মিটিং করেছেন, একশটা জায়গায় বসে মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। হাঁটতে হাঁটতে ২৭৫বার মতবিনিময় করেছেন নানাজনের সঙ্গে, ১৩টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তার যাত্রাপথে বিরোধী দলের নেতারা যোগ দিয়েছেন। কাশ্মীরের লালচকে পতাকা উত্তোলন করার সময় ২১টি দলকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১২টি দল য়োগ দেবে বলে জানিয়েছে। মোদ্দা কথা, ভারতজুড়ে এই পদযাত্রায় বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে চলতে চেয়েছেন রাহুল। ২০২৪-এর জোটের কথা ভেবে। কিছু দল আসেনি। কিছু এসেছে।
ভারত চলে বাপের নামে
বংশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় ভারতে৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন ভারতের বৈশিষ্ট্যই বংশপরম্পরা৷ রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
আম্বানির রাজত্ব
বিখ্যাত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানি যে সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্রাট বনেছেন মুকেশ এবং অনীল আম্বানি৷ বাবার রাজ্য বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তাঁরা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও নিচ্ছেন বহুদূর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বচ্চন, দ্য বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই৷ গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যে বচ্চন রাজত্ব শুরু হয় বলিউডে, এখনও তা টলাতে পারেনি কেউই৷ তাঁর নামের অংশীদার হয়েই বড় পর্দায় এসেছেন অভিষেক বচ্চন৷ অনেকেই মনে করেন, অমিতাভের ছেলে না হলে বর্তমান অবস্থানে আসা কঠিনই হতো জুনিয়র বচ্চনের৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
ছোট দেওল, বড় দেওল
বলিউডের আরেক শীর্ষ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ জনপ্রিয় এই অভিনেতার বংশধরেরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও নাম কামিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সানি দেওল ও ববি দেওলের কিছু ছবি হিট হলেও তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়েই পড়েন তাঁরা৷ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নাম কামিয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে ইশা দেওলও৷
ছবি: Ambalika Misra
কাপুর খানদান
কাপুরদের রাজত্বের ইতিহাস অন্য অনেকের চেয়ে বেশ লম্বা৷ ব্রিটিশ শাসনামলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, তখন হিন্দি সিনেমার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর৷ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পদ্মভূষণ দেয়া হয় তাঁকে৷ তাঁকে দিয়েই শুরু কাপুর বংশের চার প্রজন্মের রাজত্ব৷ রাজকাপুর, তাঁর ছেলে ঋষি কাপুর এবং সর্বশেষ এখন রণবীর কাপুর আনন্দ দিয়ে চলেছেন বলিউড ভক্তদের৷
ছবি: DW
প্রযোজনা, পরিচালনা, অভিনয়
বাবা মহেশ ভাট বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক৷ কিন্তু মেয়ে আলিয়া ভাট সেদিকে না গিয়ে সোজা অভিনয়ে৷ শুধু নাম নয়, মেধাতেও যে বাপের চেয়ে কোন অংশে কম না, তা এখনও প্রমাণ করে চলেছেন আলিয়া ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গান্ধী বংশ
ভারতের রাজনীতি, নেহেরুর গড়ে যাওয়া রাজত্ব এবং কংগ্রেস দায়িত্ব এখন রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ কংগ্রেস পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাহুলই হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: UNI
উত্তর প্রদেশের যাদব
মুলায়েম সিং যাদবের ‘বংশের সুনাম রক্ষা’ করছেন অখিলেশ যাদব৷ সভাপতি হিসেবে বাবার সমাজবাদী দলের হাল তো ধরেছেনই, বাবার মতো হয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিহারের যাদব
বিহার প্রদেশের আরেক যাদব, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব৷ জোট সরকারের সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav
কাশ্মিরের মুফতি
জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের মেয়ে মেহবুবা৷ রাজ্যটিতে তিনিই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷ সমর্থকরা তাঁকে সম্মান করে ‘বাজি’ বলে ডাকেন, উর্দুতে যার অর্থ ‘বড় বোন’৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/N. Kanotra
জম্মুর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক নেতা ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ৷ তিনিও বাবার কাছ থেকে শুধু রাজনীতিই নয়, পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদও৷
ছবি: picture-alliance/epa/F. Khan
আল্লা রাখার উত্তরাধিকার
শুধু উপমহাদেশ নয়, তবলায় জাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়েছিলেন আল্লা রাখা৷ তাঁর সন্তান ওস্তাদ জাকির হোসেন ধরে রেখেছেন সেই বংশপরম্পরা, ছড়িয়ে যাচ্ছেন তবলার ম্যাজিক৷
ছবি: AP
বাপ কা বেটি
উপমহাদেশের আরেক গর্ব পণ্ডিত রবিশংকর৷ এই সিতার মায়েস্ত্রোর যোগ্য কন্যা আনুশকা শংকর৷ বিশ্বের নামকরা সিতারবাদকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখলে নিয়েছেন আনুশকা৷
ছবি: AP
গীতা ফোগাট
আমির খানের চলচ্চিত্র দঙ্গল-এর সৌজন্যে মোটামোটি সবাই এখন জানেন গীতা ফোগাটের নাম৷ বিখ্যাত কুস্তিগীর মহাবীর ফোগাটের মেয়ে গীতা ভারতের হয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কুস্তিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নারী৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিচারক চন্দ্রচূড়
ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতে প্রখ্যাত প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ও আইনজ্ঞ হিসেবে ধরে রেখেছেন সুনাম৷ ধনঞ্জয়ও এখন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
14 ছবি1 | 14
ঘটনা হলো, এরকম প্রয়াস রাহুল আগে কখনো করেননি। ২০২৪-এর ভোটের পটভূমিতে তার এই প্রয়াস নিজের ও দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল এটাও বোঝাতে পেরেছেন, মল্লিকার্জুন খাড়গে দলের সভাপতি হলেও তিনিই কংগ্রেসের মুখ। নিষ্ক্রিয় মুখ নন। সক্রিয়। আলস্য, উদ্যমহীনতা ঝেড়ে ফেলে তৎপর রাহুলকে এই রূপে বোধহয় এই প্রথমবার দেখা গেল।
এ সবই খুব ভালো কথা। কিন্তু সেইসঙ্গে আরেকটা প্রশ্নও তো অনিবার্যভাবে উঠে আসে। এতদিন রাহুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, তার প্রতি মানুষের আস্থা ছিল না। রাজনীতিক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। তিনি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। সোনিয়া-তনয় রাজনীতিতে দাগ কাটতে পারছিলেন না। নেতৃত্ব দিতে পারছিলেন না। মুশকিল সেখানেই ছিল।
এই যাত্রা কি রাহুলকে রাজনীতিক হিসাবে নতুন জন্ম দেবে? বলা মুশকিল। কারণ, এরপর তিনি কি করবেন, আবার শীতঘুমে চলে যাবেন, নাকি মানুষের পাশে থাকবেন, লড়াই করবেন, আস্থা পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। রাহুলের দল ডাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি কাশ্মীরে যাচ্ছে না। শুধু শরদ পাওয়ারের এনসিপি, লালুপ্রসাদের আরজেডি, শিবসেনা, ফারুক আবদুল্লার এনসি, মেহবুবা মুফতির দল, ঝাড়খণ্ড মক্তি মোর্চা, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআইয়ের মতো দলগুলিই কাশ্মীরে গিয়ে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে কাশ্মীরে প্রচণ্ড বরফ পড়ছে। দৃশ্যমানতা কম। তাই একের পর এক বিমান বাতিল হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কতজন নেতা যোগ দিতে পারবেন, সেটা বলা মুশকিল।
কিন্তু রাহুল এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাননি যে, তিনি ডাকলেই সব বিরোধী দল একজোট হবে। জোট করে লোকসভা ভোটে লড়বে। তিনি চেষ্টা করছেন এখন এইটুকই বলা যায়।
তিনি কি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ২০২৪ সালে টক্কর দিতে পারবেন`? এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। এই মুহূর্তে ভোট হলে বলতে হতো, তিনি টক্কর দিতে চাইবেন ঠিকই, কিন্তু সেটা হবে নেহাতই দুর্বল টক্কর। তবে রাজনীতিতে একটা বছর অনেক সময়। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে তা এখন থেকে বলা মুর্খামি। এখন শুধু এটুকুই বলা যায়, রাহুল এই প্রথমবার রীতিমতো গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করেছেন, তিনি সাড়া ভালো পেয়েছেন। কংগ্রেসকর্মীরা কিঞ্চিত চাঙ্গা হয়েছেন। ব্যস এইটুকু। এর বেশি এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না। মনে রখতে হবে, বিপক্ষে আছেন মোদী-শাহ। তাদের সঙ্গে লড়াই করে দলকে নির্বাচনে সাফল্যের মুখ দেখানো কঠিন, খুবই কঠিন কাজ। সেই কাজে এগোতে পারলে পাপ্পু থেকে রাহুল কুশলী রাজনীতিকে রূপান্তরিত হবেন। সে কাজে তিনি সফল হবেন কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে।